1. admin@ddnnewsbd.com : admin : ddn newsbd
  2. mamahbubulalom@gmail.com : mahbubul alom : mahbubul alom
রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৪:৫৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল ৩০ নভেম্বর সীমানা পুনর্বহালের দাবিতে বেড়ায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল চলছে মানুষের জন্ম চাকরির জন্য নয়, উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য: প্রধান উপদেষ্টা সীমানা নির্ধারণ ইস্যুকে কেন্দ্র করে রাস্তা অবরোধের অধিকার কারও নেই : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আমার কৈশোরের শিক্ষায়তন আল্লাহ আবাদ দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় মোমনিপুর হাটে মাসে আড়াই কোটি টাকার কাঁচা মরিচ বিক্রি পুলিশের সাবেক ডিআইজি নাহিদুল গ্রেপ্তার জাকসু নির্বাচনের ফল সন্ধায় ঘোষণা: নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক জান্নাতুল ফেরদৌস মৌমিতার বাড়িতে শোকের মাতম সাংবাদিক শিবলীর পরিবারকে ২ লাখ টাকা দিল ছাত্রশিবির

আমার কৈশোরের শিক্ষায়তন আল্লাহ আবাদ দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়

লায়ন মো. শামসুল আলম
  • আপডেটের সময় : রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
  • ১৩ সময় দর্শন

প্রাথমিক শিক্ষার শেষ বছর, ক্লাস ফাইভে ওঠার পর যাযাবর জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে আমাদের নিজেদের গ্রাম ভবানীপুরে থিতু হই। নতুন করে কোন স্কুলে ভর্তি হবো সে চিন্তারও সমাধান দ্রুতই হয়ে যায়। তাহসিন স্যার নামক একজন অসাধারণ শিক্ষক আব্বার সরাসরি শিক্ষক ছিলেন। তিনি এক সময় ভবানীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও সে সময় পার্শ্ববর্তী গ্রাম হাংরাগাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্তব্যরত ছিলেন। আব্বা খোঁজ নিয়ে জানালেন তাহসীন স্যার যেহেতু ওই স্কুলের দায়িত্বে রয়েছেন তাই সেখানে ভর্তি হওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

শুধুমাত্র একজন শিক্ষকের জন্য বাড়ি থেকে উল্টো পথে এতটা পথ একাকী হেঁটে যেতে হবে ভাবতে বেশ অশ্বস্তি লাগছিল। বিষয়টি বুঝতে পেরে আব্বা বললেন, চিন্তা করো না, দু’চার দিন গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে।

পরদিন হাঁটতে হাঁটতে চলে গেলাম ওই স্কুলে।নদীর ধারে বিরাট খোলা মাঠের পশ্চিম প্রান্ত ঘেঁষে লম্বা স্কুল ঘর। তারই একপাশে হেড মাস্টারসহ অন্যান্য শিক্ষকেরা বসে আছেন। আমি দুরু দুরু বক্ষে রুমের সামনে গিয়ে থমকে দাঁড়ালাম। হেডস্যার দূর থেকে লক্ষ্য করে আমাকে ভেতরে যাওয়ার আহবান জানালেন। আমি ভেতরে ঢুকে সালাম দিয়ে আব্বার পরিচয় দিলাম। জানালাম, তিনিই আপনার কাছে পাঠিয়েছেন স্কুলে ভর্তি হওয়ার জন্যে। আমার কথা শুনে স্যারের মুখটা ততক্ষণে আনন্দ ও গর্বে ভরে উঠেছে। আমাকে কাছে ডেকে বুকের মাঝে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন। তারপর আব্বাসহ আমাদের পারিবারিক কুশলাদি জানতে চাইলেন এবং নিজে থেকেই অন্যান্য শিক্ষকদের কাছে গর্ব করে বলতে লাগলেন, এইতো সেদিনের কথা ওর আব্বা আমার কাছে পড়ালেখা করলো আজ ছেলেকে পাঠিয়েছে ভর্তির জন্য। কী আনন্দের কথা! তিনি গর্ব করে বলতে লাগলেন, ওর আব্বা আমার সবচেয়ে প্রিয় ও মেধাবী ছাত্র ছিল। কোনো বিষয় একবার পড়ালেই চোখ বন্ধ করে মনে রাখতে পারতো। তার ছেলে নিশ্চয়ই খুব ভালো ছাত্র হবে? তিনি একজন শিক্ষককে ডেকে তাৎক্ষণিকভাবে আমাকে ভর্তির নির্দেশ দিলেন। আমি স্কুলটিতে ভর্তি হয়ে গেলাম এবং সেখান থেকেই ক্লাস ফাইভ পাস করলাম।

আমার স্কুল জীবন ছিল নিতান্তই সাদামাঠা ও উদ্দেশ্যহীন। জৌলুশের বিন্দুমাত্র বালাই ছিল না।বাবার চাকরির সুবাদে প্রাথমিকের গণ্ডিটা ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় কাটলেও হাই স্কুলের পাঁচ বছর টানা একই স্কুলে কেটে গেছে। স্কুলের নামটাও ছিল দারুণ চিত্তাকর্ষক, ‘আল্লাহ আবাদ দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়।

পাবনা জেলার ফরিদপুর উপজেলাধীন বড়াল নদীর পাড় ঘেঁষে প্রত্যন্ত জনপদে গড়ে ওঠা এই স্কুলটি বাস্তবিক অর্থেই নান্দনিক ও সবুজের মাঝে গড়ে ওঠা একটি অনন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে সুখ্যাত। এই স্কুল থেকে বের হওয়া অনেক শিক্ষার্থীই এখন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সুপ্রতিষ্ঠিত। স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা হেড মাস্টার ছিলেন প্রয়াত আরশেদ আলী স্যার। তিনি আমাদের পাড়ার মুরুব্বী ছিলেন এবং সম্পর্কে আমার চাচা হতেন। সে সময় উচ্চশিক্ষা অর্জন করে ভালো চাকরির অবারিত সুযোগ থাকলেও আরশেদ স্যার নিভৃত পল্লীতে স্কুল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এলাকায় জ্ঞানের আলো ছড়াতেই শিক্ষকতাকে ব্রত হিসেবে নেন। তাঁর এই মহতি উদ্যোগ ছিল সত্যিকার অর্থেই প্রশংসিত ও অনুপ্রেরণাদায়ক।

ক্লাস ফাইভের রেজাল্ট বেরোনোর পর একদিন সকাল বেলা বাড়ির সামনে বসে আছি। আরশেদ স্যার সেখান দিয়ে জমিতে যাচ্ছিলেন কৃষি কাজের উদ্দেশ্যে। আমাকে দেখেই জিজ্ঞেস করলেন, হাই স্কুলে কোথায় ভর্তি হবো? কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি এ কথা শোনার পর আব্বাকে ডাকতে বললেন। বাড়ির ভেতর থেকে আব্বা বাইরে আসতেই অনেকটা আদেশের সুরে বললেন, ছেলেকে আগামীকাল আমার কাছে পাঠিয়ে দিও, আমাদের স্কুলে ভর্তি করে নেব। আব্বা স্মিত হাসিতে সম্মতি জানিয়ে বললেন, ঠিক আছে পাঠিয়ে দেবো। বড়দের প্রতি এইযে সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ সেটি বর্তমানে অনেকটাই বিরল বলা চলে। আরশেদ চাচা বা স্যার আজ আর বেঁচে নেই, এই লেখার মধ্য দিয়ে তাঁর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি। উনার ঐকান্তিক ইচ্ছা ও পরামর্শেই আমার আল্লাহ আবাদ হাই স্কুলে ভর্তি ও পড়ালেখার সুযোগ তৈরি হয়।

ক্লাসে ভালো ছাত্র বলতে যা বোঝায় কখনোই তা ছিলাম না। বাইরের বই পড়ায় যতোটা আগ্রহ বা প্রবল ইচ্ছা কাজ করত পাঠ্যবইয়ের প্রতি তার সিকিভাগও আগ্রহ ছিল না। অধিকাংশ সময় বন্ধুদের সাথে গল্পগুজব ও নানারকম গল্পের বই পড়েই সময় কাটিয়ে দিতাম। ক্লাসের বন্ধুদের সাথে ছিল প্রাণের সম্পর্ক। পরীক্ষার মাসখানেক আগে বইপত্র খুঁজে পড়া মুখস্থ করে কোনোমতে ক্লাস উৎরে যাওয়াই ছিল আমার পড়ালেখার সর্বোচ্চ দৌড়। ফলে অসম্ভবের নেশা বা উচ্চ ফলাফলের আকাঙ্ক্ষা ছিল না বললেই চলে।

আমাদের ক্লাসে ভালো ছাত্রের তালিকায় অনেকের নামই ছিল যারা পরবর্তীকালে ব্যক্তি ও পেশাগত জীবনে সফলতার স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হয়েছে। এদের মধ্যে আশরাফ, ফজলু, হাফিজ, কালাম, ইউনুস, মোস্তফা, এলাহী, আরজ, মোস্তাক, রেজাউল ও বাচ্চুর নাম বিশেষভাবে মনে পড়ছে। পাস করার পর দীর্ঘ সময় কেটে গেছে, তাদের সাথে এখন আর দেখা সাক্ষাৎ তেমন একটা হয়ে ওঠে না তবে সামাজিক গণমাধ্যমের বদৌলতে ইদানিং ভার্চুয়ালি যোগাযোগটা নতুন করে তৈরি হয়েছে। স্কুলের শিক্ষকদের কথাও ভীষণ মনে পড়ে। জানিনা শ্রদ্ধেয় শিক্ষকরা এখন কেউ বেঁচে আছেন কি না, অথবা সুস্থ আছেন কি না।

এসএসসির ফরম ফিলাপের সময় তৎকালীন অ্যাসিসটেন্ট হেড মাস্টার আব্দুল মজিদ স্যার আমার ফরমটি নিজে হাতে ফিলাপ করে দেন যত্নের সাথে। আজও আমার স্মৃতিতে সেটি সমুজ্জল হয়ে রয়েছে। আইএসসি স্যার নামে সুপরিচিত বদিউজ্জামান স্যার খুবই ছোটখাট হালকা গড়নের মানুষ ছিলেন কিন্তু অংকে ছিলেন তুখোর। আব্দুল মোমিন স্যার ছিলেন আমাদের বাড়ির পাশের, নদীর এপার ওপার চার-পাঁচ মিনিটের পায়ে হাঁটা পথ। তিনি ইংরেজি পড়াতেন। সমস্যা হলো স্যার এত বেশি ঘন ঘন কথা বলতেন যে আমি তাঁর বেশিরভাগ কথারই মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারতাম না।

হাসেম স্যার বাংলা পড়াতেন, অত্যন্ত ঠাণ্ডা ধাচের মানুষ ছিলেন। আফসার স্যার ও রহমান স্যার নামে দুজন শিক্ষক ছিলেন, আমাদের শিক্ষা জীবনে তাদের প্রভাবটাও অমলিন রয়ে গেছে। লম্বা-চওড়া রোস্তম আলী স্যার ছিলেন হেড মাওলানা। কথাবার্তা ও চালচলনে অদ্ভুত প্রকৃতির মানুষ ছিলেন তিনি। যতদূর মনে পরে আমি ক্লাসের প্রথম বেঞ্চের এক কোণায় বসতাম। স্যার ক্লাসে ঢুকেই নির্দেশ দিতেন অফিস রুম থেকে তিন-চারটা বেত আনার জন্য। পড়া না পারা ছাত্রদের প্রতি তিনি ছিলেন বেশ নিষ্ঠুর ও নির্দয়। মজার মজার কথা বলে হাসি-তামাসার ক্ষেত্রেও তিনি ছিলেন অনবদ্য। স্যারদের আন্তরিক ও হৃদ্যতাপূর্ণ ব্যবহারের কথা মনে পড়লে আজও স্মৃতিকাতর হই, চোখের কোণে অশ্রু খেলা করে।

আমি সারাজীবনই অসাধারণত্বের পূজারী। মহৎ গুণ তো বটেই, কারও মধ্যে অতি সাধারণ বা ক্ষুদ্র গুণাবলী দেখলেও আবেগে আপ্লুত হই। গর্বে, আনন্দে দুচোখ ভরে ওঠে।

আজকের এই লেখার মাঝেও বন্ধু-বান্ধব ও শিক্ষকমন্ডলীর কথা লিখতে গিয়ে পথ হারানো পথিকের মতো খুঁজে ফিরছি আমার ফেলে আসা সোনালী অতীতকে। সে দিনগুলো আর কখনোই ফিরে পাবো না জানি, তবে যেখানেই থাকি, যেভাবেই থাকি স্মৃতির মনিকোঠায় সবসময় জ্বলজ্বল করে জ্বলবে আমার প্রিয় বিদ্যাপীঠ আল্লাহ আবাদ দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়।

 

লেখক: প্রকাশক ও সম্পাদক,মুক্ত আকাশ ও এডভাইজার, লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল।

 

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর
২০২০© এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ*
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Smart iT Host