আজ মহান বিজয় দিবস। বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় গৌরবময় দিন। নয় মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। বহু ত্যাগ-তিতিক্ষা আর লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে এদিনে একটি স্বাধীন জাতিসত্তা আর লাল-সবুজের পতাকার মালিকানা পায় দেশের জনগণ।
তবে বিজয়ের ৫৪ বছর পেরিয়ে গেলেও বাংলাদেশের পথচলা কখনোই পুরোপুরি নিষ্কণ্টক ছিল না। মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতার নামে যে ভারতীয় আধিপত্যবাদী প্রভাব এ দেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার বিস্তার ঘটেছে। এই আধিপত্য থেকে মুক্ত হতে দেশপ্রেমিক জনগণ বারবার প্রতিরোধের চেষ্টা চালালেও কাঙ্ক্ষিত সাফল্য আসেনি। তবে গত বছর ছাত্র-জনতার জুলাই বিপ্লব নতুন আশার আলো জ্বালিয়েছে।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। এই পতনের মধ্য দিয়ে দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা অপশাসন থেকে মুক্তি পায় দেশের জনগণ। ফলে জাতি গতবারের মতো এবারো মহান বিজয় দিবস উদযাপন করছে ভিন্ন এক রাজনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতায়।
এর আগে কারচুপিপূর্ণ, একতরফা ও ভোটারবিহীন নির্বাচন, রাতের ভোট এবং তথাকথিত ‘আমি-ডামি’নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় থেকে শেখ হাসিনা টানা সাড়ে ১৫ বছর দেশ শাসন করেন। এই সময়ে রাষ্ট্রের প্রায় সব প্রতিষ্ঠানকে দুর্বল ও ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়। পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধ ও এর ইতিহাসকে দলীয় স্বার্থে নিজেদের মতো করে উপস্থাপন করা হয়েছে। শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার বন্দনাই ছিল রাষ্ট্রীয় প্রচারের মূল বিষয়, যার আড়ালে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনা ও ইতিহাস বিকৃত হয়েছে। এ সময় রাষ্ট্রের সর্বস্তরে দলীয়করণ বা আওয়ামীকরণ করা হয়।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ বাণী দিয়েছেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা, আলোচনা সভা, মিলাদ মাহফিল ইত্যাদি। দিনটিতে দেশের সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবন এবং বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিশনসমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনাগুলো আলোকসজ্জিত করা হবে। বিজয় দিবস উপলক্ষে পত্রপত্রিকাগুলোতে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হবে। রাষ্ট্রায়ত্ত প্রচার মাধ্যম বিটিভিসহ বেসরকারি টেলিভিশনগুলোতে বিশেষ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হবে। দিনটিতে সরকারি ছুটি থাকছে।
ঢাকাসহ দেশের সব জেলা ও উপজেলায় একত্রিশবার তোপধ্বনির মাধ্যমে বিজয় দিবসের কর্মসূচির সূত্রপাত ঘটবে। দিনটিতে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টার নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবারের সদস্যবৃন্দ, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা, বীর মুক্তিযোদ্ধারা ও বিদেশি কূটনীতিকগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দসহ সর্বস্তরের জনগণ শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন সাভার স্মৃতিসৌধে। এছাড়া জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে অনুরূপ কর্মসূচি পালিত হবে।
সকাল ১১টা থেকে ঢাকার তেজগাঁওয়ে পুরাতন বিমানবন্দরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী পৃথকভাবে ফ্লাই পাস্ট মহড়া পরিচালনা করবে। চলবে বিজয় দিবসের বিশেষ ব্যান্ড-শো। সকাল ১১টা ৪০ মিনিট থেকে ‘টিম বাংলাদেশ’-এর ৫৪ জন প্যারাট্রুপার পতাকা হাতে স্কাইডাইভিং করবেন। তাদের একজন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী জাম্প করবেন সন্ত্রাসীদের গুলিতে গুরুতর আহত জুলাই-যোদ্ধা ওসমান হাদির ছবি আঁকা হেলমেট পরে।
সূত্র: আমার দেশ।