রাজধানীর অভিজাত বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত ‘গোপন বৈঠক’কে কেন্দ্র করে উত্তেজনা বাড়ছে। সেনাবাহিনীর মেজর সাদিকুল হক ও তার স্ত্রী সুমাইয়া জাফরিনসহ একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে তদন্ত চলছে। অভিযোগ উঠেছে—ক্ষমতাচ্যুত সরকারের নেতৃত্বে সরকারবিরোধী কর্মসূচি ও ঢাকায় অস্থিরতা তৈরির পরিকল্পনার পেছনে কাজ করছিল একটি গোষ্ঠী।
বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট), ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সেফাতুল্লাহ শুনানি শেষে মেজর সাদিকের স্ত্রী সুমাইয়া তাহমিদ জাফরিনের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ভাটারা থানায় দায়ের করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, ডিবি গুলশান বিভাগের পরিদর্শক মো. জেহাদ হোসেন এদিন সুমাইয়ার ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। অপরদিকে, আসামিপক্ষের আইনজীবী জামিনের আবেদন করলে আদালত তা খারিজ করে দেন।
এর আগে বুধবার (৬ আগস্ট) চট্টগ্রামের বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ।
সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় দায়ের করা মামলায় সুমাইয়া জাফরিন ছাড়াও আদনান বিন আব্দুল্লাহ চৌধুরী নামের একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি ‘অপারেশন ঢাকা ব্লকেড’ নামক একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্মের অন্যতম ম্যানেজমেন্ট সদস্য বলে জানিয়েছে পুলিশ। আদালত তার ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
গোপন বৈঠকের পেছনে ‘বড় পরিকল্পনা’
মামলার এজাহার অনুযায়ী, গত ৮ জুলাই (সোমবার) বসুন্ধরা এলাকার কে বি কনভেনশন হলে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একটি ‘গোপন বৈঠক’ হয়। এতে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ এবং অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উপস্থিতিতে তিন শতাধিক মানুষ অংশ নেন। এ সময় বৈঠকে সরকারবিরোধী স্লোগান দেওয়া হয় এবং ঢাকা শহরে অস্থিতিশীলতা তৈরি, শাহবাগ মোড় দখল ও জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির মাধ্যমে শেখ হাসিনার দেশে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করার পরিকল্পনা হয় বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, মেজর সাদিক ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এবং তিনি আওয়ামী লীগ কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন—এমন তথ্য উঠে আসে তদন্তে। ওই অভিযোগকে কেন্দ্র করেই সেনাবাহিনী তদন্ত শুরু করে।
সেনাবাহিনীর অবস্থান
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে ৩১ জুলাই (বুধবার), সেনা সদরের মিলিটারি অপারেশনস পরিদপ্তরের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজিম-উদ-দৌলা বলেন, “মেজর সাদিকের বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। তিনি এখন সেনাবাহিনীর হেফাজতে আছেন এবং তদন্ত চলছে। তদন্তে দোষ প্রমাণিত হলে প্রচলিত নিয়মে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
১ আগস্ট (শুক্রবার) আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ১৭ জুলাই মেজর সাদিককে রাজধানীর উত্তরা এলাকা থেকে আটক করে সেনা হেফাজতে নেওয়া হয়। অভিযোগের সত্যতা প্রাথমিকভাবে পাওয়ার পর বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত আদালত গঠন করা হয়েছে এবং পুলিশ ও অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে প্রয়োজনীয় সমন্বয় করা হচ্ছে।
সুমাইয়ার পরিচয় নিয়ে বিভ্রান্তি
সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া তথ্য অনুযায়ী, সুমাইয়া জাফরিনকে পুলিশের একজন সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসেবে পরিচয় দেওয়া হয়। তবে ২ আগস্ট (শনিবার) পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, এই নামে পুলিশের কোনো কর্মকর্তা নেই।
গ্রেপ্তার ও মামলা প্রসঙ্গ
ঘটনার তদন্তে গত কয়েকদিনে পুলিশ ‘অপারেশন ঢাকা ব্লকেড’ সংশ্লিষ্ট ২৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। মামলাটি দায়ের করেন ভাটারা থানার উপপরিদর্শক জ্যোতির্ময় মণ্ডল। মামলায় অভিযোগ রয়েছে যে, রাজনৈতিক পরিচয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের নেতাকর্মীরা ঐ গোপন বৈঠকের মাধ্যমে সংঘাত ও সহিংসতার ছক কষছিলেন।
এ ঘটনায় শামীমা নাসরিন শম্পা ও সোহেল রানার ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে। মামলার তদন্ত এখনও চলমান রয়েছে।
সূত্র: এফএনএস।