ফেসবুকে মেয়েরা দেখলাম তাদের প্রোফাইল ছবি কালো করে দিয়েছে। ব্ল্যাক আউট! আমি কালো করিনি কিছু। ওরা তো হিজাবে, বোরখায়, নিকাবে, অন্দরমহলে, অন্ধকারে আমাদের বন্দি করেইছে। বেরোতে গেলে ওরা চুনকালি মাখিয়ে দেয় চেহারায়। ওরা চায় আমাদের অবয়ব যেন লুকিয়ে রাখি, ওরা চায় আমাদের অস্তিত্বটাই যেন কবরে ঢুকিয়ে রাখি। শুধু ওদের যখন সেবা নেওয়ার এবং ধর্ষণ করার প্রয়োজন হবে, চুল ধরে টেনে উঠিয়ে সেবা নিয়ে এবং ধর্ষণ করে আবার লাথি দিয়ে ওই কবরে ফেলে রাখবে।
নিজেদের অবয়ব লুকিয়ে ফেলে আমি প্রতিবাদ করতে চাই না। ইউরোপের কিছু মেয়ে ভিড়ের রাস্তায় উলঙ্গ হয়ে বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে। মেয়েদের শরীরে বিশেষ করে বুকে কাপড় না দেখলে সভ্য দেশের মানুষও ভয় পেয়ে যায়। মেয়েরা তাদের অস্তিত্বের জানান ওইভাবেই দেয়। সমাজের গালে চপেটাঘাত ওইভাবেই করে। মেয়েদের চেহারা বেশি বেশি দেখানো উচিত। মেয়েদের শরীর বেশি বেশি প্রকাশিত হওয়া উচিত। মেয়েদের অস্তিত্বের বেশি বেশি উপস্থিতি প্রয়োজন।
রাস্তা ঘাটে বাসে ট্রেনে জাহাজে দোকানে মাঠে ময়দানে অফিসে আদালতে ক্লাবে পাবে সর্বত্র মেয়েদের সরব উপস্থিতি জরুরি। সবচেয়ে জরুরি রাতের রাস্তায় মেয়েদের অবাধ চলাচল। মনে আছে ‘টেইক ব্যাক দ্য নাইট’ আন্দোলন? সাতের দশকে আমেরিকার মেয়েরা যৌন নির্যাতনের বিরুদ্ধে লড়েছিল! তারা নিরাপদ রাত ফেরত চেয়েছিল। মেয়েদের বাড়ি ফিরতে বলো না, বরং ধর্ষক আর যৌন নির্যাতকদের সন্ধে সন্ধে বাড়ি ফিরে যাওয়ার উপদেশ দাও। তাদের বলো অন্ধকারে মুখ লুকিয়ে রাখতে।
-তসলিমা নাসরিনের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজ থেকে