অনলাইন ডেস্ক : ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কারাবন্দি অবস্থায় লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যু এবং কারাগারের ভেতরে কার্টুনিস্ট কিশোরকে নির্যাতনের অভিযোগে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাসেলেট। সোমবার (১ মার্চ) এক বিবৃতিতে তিনি এ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বলে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে তিনি লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর ঘটনার দ্রুত, স্বচ্ছ ও স্বতন্ত্র তদন্তের পাশাপাশি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রয়োগ জরুরিভবে স্থগিত করে পুনর্বিবেচনার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক দপ্তরের প্রধান। তিনিই মানবাধিকার ইস্যুতে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ কর্মকর্তা।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্নেষণ হওয়া দরকার। লেখক মুশতাকের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিচারবহির্ভূতভাবে তিনি ৯ মাস কারাবন্দি থাকেন এবং কারাগারেই তিনি মারা যান। একই মামলায় একই ধরনের অভিযোগে আটক কার্টুনিস্ট আহমেদ কিশোরের ওপরও নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। কারাগারে মৃত্যু ও নির্যাতন- দুটি ঘটনাই গুরুতরভাবে উদ্বেগজনক। নির্যাতনের অভিযোগের তাৎক্ষণিক ও কার্যকর তদন্তের পাশাপাশি কিশোরের নিরাপত্তা এবং সুস্থতা নিশ্চিত করার বিষয়ে সরকারের বাধ্যবাধকতার বিষয়টিও বিবৃতিতে স্মরণ করিয়ে দেন তিনি।
ব্যাসেলেট বলেন, বাংলাদেশ সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে যে মুশতাকের মৃত্যুর বিষয়টির স্বতন্ত্র, দ্রুত ও স্বচ্ছ তদন্ত হচ্ছে। একই সঙ্গে অপর আটকদের প্রতি অসদাচরণের যে অভিযোগ এসেছে, তারও দ্রুত তদন্ত করা দরকার।
বিবৃতিতে বলা হয়, লেখক মুশতাকের কারাগারে মৃত্যুর প্রতিবাদ জানানোর কারণে শিক্ষার্থীসহ কয়েকজনকে আটক, খুলনায় একজন প্রতিবাদকারীকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার এবং প্রতিবাদ মিছিলে পুলিশের হামলায় অন্তত ৩৫ জন আহতের ঘটনাও অত্যন্ত উদ্বেগজনক। তিনি গ্রেপ্তারকৃতদের দ্রুত মুক্তি দেওয়ার জন্যও আহ্বান জানান।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রয়োগ জরুরিভাবে স্থগিত করা উচিত এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে এর বিধানগুলো পর্যালোচনা করাও দরকার। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করতে জাতিসংঘ মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের অফিস প্রস্তুত রয়েছে।
এর আগে মুশতাকের মৃত্যু ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে ঢাকায় পাশ্চাত্যের ১৩টি দেশের মিশনপ্রধানরাও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
এদিকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল, কার্টুনিস্ট কিশোরের মুক্তি, সাত ছাত্রনেতাসহ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার হওয়া শ্রমিক নেতা রুহুল আমিনের মুক্তির দাবিতে শ্রমিক-কৃষক-ছাত্র-জনতা ঐক্য পরিষদের নেতা-কর্মীরা গতকাল খুলনা প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান ও বিক্ষোভ মিছিল করে। মিছিলটি আদালত অভিমুখে অগ্রসর হলে ডিসি অফিস চত্বরের প্রবেশমুখে পুলিশ বাধা দেয়। বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে তারা অফিস চত্বরে প্রবেশ করে। সমাবেশ ও মিছিলে ব্যাপকসংখ্যক পাটকল শ্রমিক অংশ নেন।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে মানুষের বাকস্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে। কিছু বলতে গেলেই সরকার ও পুলিশের নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে। সরকারের সমালোচনা করায় ওই আইনে লেখক মুশতাক আহমেদ ও কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত কারাগারেই মারা গেছেন মুশতাক আহমেদ। কিশোরের অবস্থাও ভালো নয়। আবার এটা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে নতুন করে একই আইনে মামলার শিকার হয়েছেন রুহুল আমিন। আমরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল ও রুহুল আমিনের মুক্তি দাবি করছি।
কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন নিয়াজ মোর্শেদ দোলন, হুমায়ুন কবির, চলচ্চিত্র কর্মী মিহির কান্তি মণ্ডল, মাতঙ্গী নাট্যদলের সদস্য জয়ন্তী, ছাত্র-যুব আন্দোলনের খুলনা মহানগরের সহ-আহ্বায়ক মেহেরুন নাহার, বিপ্লবী ছাত্র আন্দোলনের সুমাইয়া রহমান, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক উজ্জ্বল বিশ্বাস, ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সদস্য আলামিন প্রমুখ