উত্তরাঞ্চলের সমতল ভূমিতে রেকর্ড পরিমাণ চা উৎপাদন হয়েছে। করোনাকালীন সময়ে দেশের চা উৎপাদনে সর্বোচ্চ রেকর্ড অর্জন করেছে এ অঞ্চলের চা চাষিরা। ২০২০ সালে উত্তরবঙ্গের পাঁচ জেলার বড় বাগান এবং ক্ষুদ্র চাষিদের বাগান থেকে এসব চা উৎপাদন হয়েছে। জানা গেছে, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, দিনাজপুর এবং নীলফামারী জেলার সমতল অঞ্চলে গত দুই দশক থেকে চা চাষ শুরু হয়েছে। এসব এলাকার সমতলে ১০টি বড় চা বাগান ও সাত সহস্রাধিক ক্ষুদ্র চা বাগান থেকে ১০ দশমিক ৩০ মিলিয়ন কেজি অর্থাৎ এক কোটি তিন লাখ কেজি চা উৎপাদন হয়েছে। একই সময়ে জাতীয়ভাবে চা উৎপাদন হয়েছে ৮৬ দশমিক ৩৯ মিলিয়ন বা আট কোটি ৬০ লাখ ৩৯ হাজার কেজি। জাতীয় উৎপাদনে ১১ দশমিক ৯২ শতাংশ চা যুক্ত করেছে উত্তরাঞ্চলের চাষিরা। ২০২০ সালে করোনা মহামারীর কারণে অন্যান্য এলাকায় চায়ের উৎপাদন কিছুটা কমলেও উৎপাদন বেড়েছে উত্তরাঞ্চলে। ২০১৯ সালে জাতীয়ভাবে ৯৬ মিলিয়ন কেজি বা ৯ কোটি ৬০ লাখ কেজি চা উৎপাদন হয়েছিল। জাতীয়ভাবে ২০২০ সালে এক কোটি কেজি চা উৎপাদন কমে গেছে। অথচ উত্তরাঞ্চলের সমতল ভূমিতে সাত লাখ কেজি চা বেশি উৎপাদন হয়েছে। জাতীয়ভাবে ১১ দশমিক ৯২ শতাংশ চা উৎপাদন যুক্ত করেছে উত্তরাঞ্চল। এই পাঁচ জেলায় ২০১৯ সালে ৯৫ লাখ ৯৯ হাজার কেজি চা উৎপাদন হয়েছিল। পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁওয়ের ১৮টি চা কারখানা থেকে এই চা উৎপন্ন হয়। উত্তরবঙ্গের পাঁচ জেলায় ১০টি নিবন্ধিত, ১৭টি অনিবন্ধিত বড় চা বাগান এবং সাত হাজার ৩১০টি ক্ষুদ্র চা বাগান রয়েছে। মোট ১০ হাজার ১৭০ দশমিক ৫৭ একর জমিতে চা চাষ হয়েছে। এসব চা বাগান থেকে ২০২০ সালে পাঁচ কোটি ১২ লাখ ৮৩ হাজার ৩৮৬ কেজি সবুজ চা পাতা উত্তোলন করা হয়েছে।
২০১৯ সালে উত্তোলন হয়েছিল চার কোটি ৪১ লাখ ৫৫ হাজার ৪০০ কেজি। করোনাকালীন সময়ে ২০২০ সালে প্রায় এক হাজার ৪৯০ একর জমিতে নতুন করে চায়ের আবাদ শুরু হয়েছে। প্রতিবছর চায়ের আবাদ বাড়ছে। ফলে বছর বছর উৎপাদনও বাড়ছে। গতকাল সকালে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পঞ্চগড়ে বাংলাদেশ চা বোর্ড আঞ্চলিক কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও নর্দার্ন বাংলাদেশ প্রকল্পের পরিচালক ড. মোহাম্মদ শামীম আল মামুন। তিনি জানান, সমতল ভূমিতে চা চাষের জন্য পঞ্চগড় ও এর পার্শ্ববর্তী জেলাগুলো অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। দিন দিন উত্তরাঞ্চলে চা চাষ ও উৎপাদন বাড়ছে। চা বোর্ড আঞ্চলিক কার্যালয়ের হলরুমে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। এ সময় আরও বক্তৃতা করেন উন্নয়ন কর্মকর্তা আমির হোসেন, সহকারী খামার তত্ত্বাবধায়ক ছায়েদুল হক, ক্ষুদ্র চা চাষি মতিয়ার রহমান, সাজেদা রফিক, চা কারখানার প্রোপ্রাইটর জাহেদুল হক প্রমুখ। চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. জহিরুল ইসলাম মুঠোফোনে জানান, উত্তরাঞ্চলে চা চাষ সম্প্রসারণের জন্য চাষিদের বিভিন্ন সহায়তার মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। তাদের স্বল্পমূল্যে উন্নত জাতের চারা সরবরাহ করা হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকায় ‘ক্যামেলিয়া খোলা আকাশ স্কুলে’ হাতে কলমে কর্মশালা হচ্ছে। চাষিদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দিতে ‘দুটি পাতা একটি কুঁড়ি’ নামে মোবাইল অ্যাপস চালু করা হয়েছে। এ আঞ্চলিক কার্যালয়ে পেস্ট ম্যানেজমেন্ট ল্যাবরেটরি স্থাপন করা হয়েছে। যেখানে চা চাষিদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান, চাষের নানা রোগবালাই ও পোকা দমনে বৈজ্ঞানিক সহায়তা দেওয়া হয়। ক্ষুদ্র চাষিরা কাঁচা পাতার ন্যায্যমূল্য পাওয়ায় চা চাষে উৎসাহিত হয়েছে। আবাদি বেড়েছে। চা বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী চাষিরা বাগানের যত্ন নিয়েছে। এতে উত্তরাঞ্চলের মানুষের দারিদ্র্যবিমোচন ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি ব্যাপক কর্মসংস্থান হয়েছে।