মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার দত্তপাড়া মৃধাকান্দি এলাকায় কমলা চাষে নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত উন্মোচন করেছেন তরুণ উদ্যোক্তা রাসেল হোসেন।দীর্ঘ প্রবাস জীবন শেষে দেশে ফিরে বাবার গড়ে তোলা শখের বাগানকে কেন্দ্র করে তিনি এখন নিজ এলাকার কৃষিনির্ভর অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন।
বিদেশফেরত অনেক যুবক যেখানে কর্মসংস্থানের অভাবে দুশ্চিন্তায় ভোগেন, সেখানে রাসেল নিজের উদ্যোগে একটি সফল উদাহরণ তৈরি করেছেন।
ছয় বছর আগে রাসেলের বাবা শওকত হোসেন দেড় বিঘা জমিতে ৬০টি ছোট জাতের কমলার চারা রোপণ করেছিলেন। প্রথমদিকে গাছে উল্লেখযোগ্য ফলন না আসায় বাগানটি তেমন গুরুত্ব পায়নি।
তবে রাসেল দেশে ফিরে ২০২১ সালের শেষ দিকে বাগানের দায়িত্ব নেওয়ার পর পরিবর্তন আসে। তিনি ইন্টারনেটে কমলা চাষ বিষয়ে নিয়মিত পড়াশোনা করেন, কৃষি বিভাগের কাছ থেকেও পরামর্শ নেন এবং আধুনিক পদ্ধতিতে গাছের পরিচর্যা শুরু করেন। সার-সেচ ব্যবস্থাপনা, রোগবালাই দমন, ছাঁটাই ও মাটির উন্নয়ন সবকিছু নতুন পরিকল্পনায় করা হয়।
২০২৪ সালে কমলা বাগানে আসে ব্যাপক ফুল। মৌসুম শেষে গাছগুলোতে ভরে ওঠে রঙিন কমলায়। রাসেল জানান, এবছর আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে উৎপাদন কিছুটা কম হলেও কমলার স্বাদ ও গুণগত মান আগের বছরের তুলনায় আরও উন্নত। টকভাব কমে গিয়ে মিষ্টতা বেড়েছে, যা ক্রেতাদের মাঝে বাড়তি সাড়া ফেলেছে।
বর্তমানে তার কমলা পাইকারি এবং খুচরা উভয় পদ্ধতিতে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে তিনি প্রতি কেজি কমলা ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি করছেন। স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি অনেক ক্রেতা সরাসরি বাগানে এসে কমলা কিনে নিচ্ছেন।
বাগান পরিদর্শনে আসা স্থানীয় বাসিন্দা ইমন হোসেন বাসসকে বলেন, ‘রাসেল কমলা চাষ করে সফল হয়েছে। তিনি প্রবাস থেকে ফিরে বেকার না থেকে কর্মসংস্থান তৈরি করেছেন। তার দেখাদেখি এলাকার অনেক তরুণই কৃষিকে পেশা হিসেবে নেওয়ার প্রতি আগ্রহী হবে।’
আরেক দর্শনার্থী মহসিন তালুকদার বলেন, ‘প্রবাসী যুবক রাসেল খুব সুন্দর একটি কমলার বাগান তৈরি করেছে। আমরা সরাসরি বাগান দেখতে এসেছি। এবছর প্রচুর কমলা হয়েছে, স্বাদও বেশ ভালো।’
বাগানে ঘুরে আসা অন্য ক্রেতারা বলেন, ‘ফরমালিনমুক্ত ও স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কমলা পাওয়ার নিশ্চয়তা থাকায় আমরা এখানে আসি। বাগান ঘুরে দেখার অভিজ্ঞতাও অসাধারণ। অনলাইনেও এই কমলা বিক্রি হওয়ায় দূর-দূরান্তে মানুষও কিনছেন।’
কমলাচাষ সম্পর্কে নিজের অভিজ্ঞতা জানিয়ে রাসেল হোসেন বলেন, ‘১ বিঘা ৩৩ শতাংশ জমিতে ৬০টি কমলার গাছ ছিল। আবহাওয়ার কারণে কিছু গাছ নষ্ট হলেও বাকিগুলোতে ভালো ফলন এসেছে। গত বছর ফলন বেশি ছিল, এবার স্বাদ উন্নত হয়েছে। কমলার পাশাপাশি মাল্টা, পেয়ারা ও অন্যান্য ফলও উৎপাদন করছি। সরকারি সহায়তা পেলে আরও বড় পরিসরে কাজ করা সম্ভব হবে।’
শিবচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘স্থানীয় উদ্যোক্তাদের আমরা নিয়মিত পরামর্শ দিচ্ছি। ন্যায্যমূল্যে মানসম্মত চারা বিতরণ, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে সহযোগিতা এবং কৃষি ঋণের ব্যবস্থার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এই অঞ্চলে সাইট্রাস ফলচাষ দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।’
স্থানীয় কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শিবচরে মাল্টা, কমলা ও লেবুসহ বারোমাসি ফলচাষের পরিমাণ বাড়ছে। রাসেলের সফলতা তরুণ সমাজকে কৃষির দিকে ঝুঁকতে উৎসাহিত করছে। তার বাগান শুধু পারিবারিক আয় বৃদ্ধি করেনি, বরং এলাকায় কর্মসংস্থান ও কৃষিভিত্তিক উদ্যোগের নতুন অনুপ্রেরণাও জুগিয়েছে।