আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচই এখন দর্শক টানে না, সেখানে নাজমুল-মাহমুদ উল্লাহ একাদশের মধ্যকার ম্যাচ ফ্রি লাঞ্চ দিয়েও আকর্ষক করা মুশকিল। তবে সময়টা ভিন্ন। করোনার কারণে দীর্ঘদিন মাঠে ক্রিকেট নেই। বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপ দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ক্রিকেট একভাবে তো ফিরেছে। তাই যে নামেই হোক না, দর্শকের আগ্রহ আছে। বিসিবির ফেসবুক পেজের পাশাপাশি আজকের ফাইনাল তাই সম্প্রচারিত হবে বিটিভিতেও। এ উপলক্ষে দারুণ একটি ‘টিজার’ও নিজেদের পেজে দিয়েছে বিসিবি।
আকাশের ভাবভঙ্গি অবশ্য ভালো নয়। ফাইনালটা হওয়ার কথা গত শুক্রবারে। কিন্তু আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেখে সেটি আগেই সরিয়ে আজ নির্ধারণ করেছে বিসিবি। কিন্তু গতকালও যে হারে বৃষ্টি হয়েছে, সে ধারা অব্যাহত থাকলে ফাইনাল রিজার্ভ ডে-তে গড়ানো অনিবার্য। তবে আশার কথা, আবহাওয়ার পূর্বাভাসে মেঘের আড়ালে মাঝেমধ্যে সূর্য হারালেও বৃষ্টির সম্ভাবনা কম।
মুশফিকুর রহিমেরও চোট নিয়ে ড্রেসিংরুমে বসে থাকার সম্ভাবনা নেই। গতকাল বৃষ্টির কারণে নাজমুল একাদশ প্র্যাকটিসে না এলেও যথারীতি ইনডোরে দীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন ফর্মে থাকা এ ব্যাটসম্যান। মুশফিক এবং তরুণ আফিফ হোসেনের ব্যাটেই মূলত ঘুরেছে নাজমুল একাদশের রানের চাকা। তবে প্রয়োজনের সময়ে দলের ব্যাটিং ভার বহন করেছেন ইরফান শুক্কুরও।
অবশ্য ব্যাটিং নিয়ে প্রেসিডেন্টস কাপের দুই ফাইনালিস্টেরই অস্বস্তি রয়েছে। তিন দলের মধ্যকার গ্রুপ পর্বের ছয় ম্যাচেই কর্তৃত্ব করেছে বোলিং ইউনিট, বিশেষ করে পেস বোলাররা। টানা বর্ষণের কারণে কাভারে ঢাকা থাকা উইকেটে ফাইনালেও তাই পেসারদের চোখ-রাঙানির সামনে পড়তে হবে ব্যাটসম্যানদের।
প্রথম ম্যাচে উইকেটহীন থাকলে পরের তিনটিতে ১০ উইকেট নিয়ে সফল বোলারদের শীর্ষে আছেন মাহমুদ উল্লাহ একাদশের রুবেল হোসেন। আবার তাসকিন আহমেদ ও আল-আমিন হোসেনের পেস জুটি নাজমুল হোসেনের অব্যর্থ ট্রাম্প কার্ড। শেষ গ্রুপ ম্যাচে এই দুজনকে সদ্ব্যবহার করেই তামিম ইকবাল একাদশের বিপক্ষে জয় ছিনিয়ে নিয়েছেন নাজমুল। গতির লড়াইয়ে সুমন খান, এবাদত হোসেন কিংবা আবু জায়েদ রাহি—কাউকেই অগ্রাহ্য করার সুযোগ নেই।
ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট হওয়ার রেসে থাকা রুবেল হোসেন মনে করেন ফাইনালেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন পেসাররা, ‘নিজের বোলিং নিয়ে আমি সন্তুষ্ট। দলের এবং নিজের প্ল্যান অনুযায়ী বল করতে পারছি। সব পেস বোলারই ভালো করছে। খেয়াল করেছেন হয়তো, মহামারির সময় পেস বোলাররা খুব কষ্ট করেছে। সেটার ফলই পাচ্ছে। আমাদের মধ্যে দারুণ প্রতিযোগিতা হচ্ছে। খুব উপভোগ করছি।’ তাসকিন আহমেদের কণ্ঠেও আছে সন্তুষ্টি, ‘উইকেট থেকে আমরা কিছু সুবিধা অবশ্যই পেয়েছি। তবে আমি বেশি কৃতিত্ব দেব বোলারদের। তারা সবাই ঠিক জায়গায় বল করেছে। ব্যাটসম্যানদের কঠিন সময় দিয়েছে। বিশেষ করে প্রথম ব্যাটিং পাওয়ার প্লেতে।’
এই শুরুর ব্যাটিং পাওয়ার প্লে নিয়ে নিশ্চয় ফাইনালের দুই অধিনায়কই দুশ্চিন্তায় আছেন। দুই দলের কোনো ওপেনারই যে রানে নেই! ফাইনালের আগে তিন দলে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ৯ জন ওপেন করেছেন ইনিংস, কিন্তু ফিফটি মোটে একটি! এমন নড়বড়ে শুরু যে ফাইনালের মতো ম্যাচে প্রবল ঝুঁকিপূর্ণ, সেটি না বললেও চলছে।
এমন পরিস্থিতিতে মিডল অর্ডারের ভূমিকা অনেক। এই একটা জায়গায় টুর্নামেন্টে সবার চেয়ে এগিয়ে নাজমুল একাদশ। সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক মুশফিক আছে তাঁর মিডল অর্ডারে। আফিফও রান করছেন। দুটি ফিফটির আত্মবিশ্বাস নিয়ে ফাইনালে মুশফিকের পাল্টা দিতে নিশ্চয় তৈরি মাহমুদ উল্লাহও। তাই নাজমুল একাদশ এগিয়ে থাকলেও ১৫ লাখ টাকা প্রাইজমানির শিরোপা জয়ে সমানে পাল্লা দেওয়ার ক্ষমতা রাখে মাহমুদ উল্লাহ একাদশও। কে জানে, আজই হয়তো জ্বলে উঠবেন কোনো ওপেনার!