1. admin@ddnnewsbd.com : admin : ddn newsbd
  2. mamahbubulalom@gmail.com : mahbubul alom : mahbubul alom
রবিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ০৬:৫৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
জলবায়ু ন্যায্যতার দাবিতে চাটমোহরে পথসভা ও সাইকেল র‌্যালি কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণা না করলে বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ নতুন পোশাকে পুলিশের পথচলা শুরু চাটমোহরের বিনাহালে রসুন আবাদে ঝুঁকেছেন কৃষকরা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে সমর্থন ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাচনে ব্যাঘাত ঘটানোর মতো শক্তি আওয়ামী লীগের হাতে নেই: প্রেস সচিব ৫৪ বছরে বর্জ্য নিষ্কাশন হয়নি—এক বছরে কী করে সম্ভব: রিজওয়ানা ত্রিভুজ প্রেমের বলি আশরাফুল: বন্ধুর বাসায় বন্ধুকে ২৬ টুকরো করা হয়! পাবনা-৩ আসনে এনসিপি থেকে মনোনয়ন চান খন্দকার লেবু ৪৮ ঘণ্টার আল্টেমেটাম বিচারকদের, দাবি না মানলে কলম বিরতির হুঁশিয়ারি

বাবা নিল মুখ ফিরিয়ে, সফলতা দিল হাত বাড়িয়ে !

ডিডিএন ডেস্কঃ
  • আপডেটের সময় : বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫
  • ২৪৪ সময় দর্শন

 

দুই বোন আর বাবা-মা, চারজনের ছোট্ট সংসার। অভাব অনটনের সংসারের উন্নয়নের স্বপ্নে মা তার বাবার বাড়ির গরু বিক্রি করে বাবাকে পাঠান মালয়েশিয়ায়। কিছুদিন ভালোই চলছিল। টাকা পয়সাও পাঠাচ্ছিল বাবা। হঠাৎ অন্য এক মেয়েকে বিয়ে করে নতুন সংসার পেতে বাবা অর্থ পাঠানো বন্ধ করে দেয়। সহায় সম্বল যা ছিল তা দিয়ে বাবাকে মালয়েশিয়া পাঠানো হয়েছিল, যার ফলে মা আর দুই বোন পরে বিপাকে। এগিয়ে আসে চাচা মোঃ রকিব। সেই চাচাও মারা গেলে তাদের আশ্রয় হয়ে ওঠে মামা রুবেল হাসান।

এত প্রতিকূলতার মধ্যেও দুই বোনের বড় মোছাঃ আতিয়া খাতুন এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় অসাধারণ সাফল্য দেখায়। সাফল্যের ধারাবাহিকতায় আতিয়া এবার নাম লিখিয়েছে ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব বিভাগে। গল্পের এই মেয়েটির বাড়ি পাবনা জেলার ফরিদপুর থানার চিথুলিয়া গ্রামে। অদম্য ইচ্ছাশক্তি সম্পন্ন অধ্যবসায়ী আতিয়ার সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। বেরিয়ে আসে তার সংগ্রাম, ত্যাগ আর স্বপ্নের অনেক গল্প।

জানা যায়, ছোটবেলা থেকেই পড়ালেখার প্রতি মনোযোগী ছিল আতিয়া। ২০২২ সালে ফরিদপুর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে সকল বিষয়ে এ+ নিয়ে কৃতিত্বের সাথে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় সে। এরপরই বাবার সাথে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে কলেজে ভর্তি নিয়ে তৈরি হয় শঙ্কা। ঢাকা বা রাজশাহীতে ভালো কোন কলেজে পড়ার স্বপ্ন থাকলেও বাস্তবতায় তা হয়ে ওঠেনি। তার স্কুলের ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষিকা রুমা লায়লার পরামর্শে আতিয়া ভর্তি হয় ফরিদপুর উপজেলা সদরের পৌর মহিলা কলেজে। এরপরে শুরু হয় আরেক সংগ্রাম। স্কুল যাতায়াতে ভাড়া না লাগলেও কলেজ দূরে হওয়ায় প্রতিদিন ভাড়া লাগতো। আতিয়া বলে, “ভাড়া লাগার কারণে আমি কখনো সম্পূর্ণ পথ গাড়িতে যেতাম না। অর্ধেক পথ গাড়িতে গিয়ে বাকি অর্ধেক হেঁটে যেতাম। এতে একদিনের ভাড়ায় দুই দিন চলতে পারতাম। তবে এই কথা আমি বাড়ির কাউকে জানাইনি। একদিন আমি হেঁটে বাড়ি আসছিলাম। তখন আমার মামা (অটো ভ্যান গাড়ি চালক) দেখে বিষয়টি জানতে চায়। একপর্যায়ে সবকিছু জেনে আমার মামা অনেক কষ্ট পান। এরপর থেকে অধিকাংশ দিন তিনি আমাকে সময় মতো কলেজে পৌঁছে দিতেন এবং নিয়ে আসতেন কারণ তিনি জানতেন আমাকে টাকা দিলেও আমি সেটা বাঁচানোর চেষ্টা করব!”

বিজ্ঞান বিভাগে অধ্যায়ন করতে গিয়ে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে যখন সকল শিক্ষার্থী কলেজের নিয়মিত ক্লাসের পাশাপাশি বিষয় ভিত্তিক শিক্ষকের কাছে ‘প্রাইভেট’ পড়ে, তখন অর্থনৈতিক দৈন্যের কাছে নতি স্বীকার করে আতিয়া ‘প্রাইভেট’ পড়তে পারেনি। সে জানায়, তার কলেজের ক্লাস গুলো প্রায় যথেষ্ট ছিল। দু-একটি বিষয়ে অসুবিধা হলে, সেই বিষয় শিক্ষকের সাথে আলাপ করলে, তারা সেটা সমাধান করে দিত। কথা হয় আতিয়ার শিক্ষক পৌর মহিলা কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মোঃ শাহ আলমের সাথে। তিনি বলেন,” আতিয়া অত্যন্ত মেধাবী ও পরিশ্রমী। ওর পারিবারিক বিষয়টি আমরা সবাই জানতাম। ক্লাসের বাইরেও বিষয়ভিত্তিক সমস্যা আমি সমাধান করার চেষ্টা করতাম।” একই ধরনের মন্তব্য করেন কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক মোঃ সাজেদুল ইসলাম।

দেখতে দেখতে চলে আসে এইচএসসি পরীক্ষা। যেমন প্রত্যাশিত ছিল, তেমন ফলাফলই করে মেয়েটি। সকল বিষয়ে এ+ পেয়ে কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হয় সে। এবার উচ্চশিক্ষার পালা। একটি কোচিং সেন্টারের মেধা যাচাই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আতিয়া ফ্রি থাকা- খাওয়া সহ কোচিং করার সুযোগ পায় ঢাকায়। সুযোগটি কাজে লাগাতে একদম ভুল করেনি সে। মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ না পেলেও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি সুযোগ পেয়েছে সে। তার ভাষায়,” আমি যেহেতু গ্রামে থাকি, তাই মানুষের অনেক দুঃখ দুর্দশা দেখেছি। ভেবেছিলাম ডাক্তার হতে পারলে মানুষের সেবা করতে পারব। মেডিকেলে সুযোগ না পেয়ে আমি হতাশ হয়ে পড়ি। তারপরে আমার আরেকটি বিষয়ে চিন্তা আসে। প্রান্তিক মানুষ গুলোর খাবারেরও অনেক কষ্ট আছে। এই কারণে ভাবি, আমি কৃষিবিজ্ঞানে পড়ালেখা করে কৃষি ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারলেও মানুষের অনেক সেবা করা হবে। তাই কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার জোর প্রস্তুতি নেই। পরে সফল হই।”

আতিয়া ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ৭০ তম অবস্থান নিশ্চিত করে। পরবর্তীতে সে ভর্তি হয়েছে কৃষি অনুষদের কৃষিতত্ব বিভাগে। মেয়ের সাফল্যে কেমন লাগছে- প্রশ্ন ছিল আতিয়ার মা মোছাঃ আদুরি খাতুনের কাছে। অশ্রুসিক্ত নয়নে তিনি বলেন, ” আমার বাবা মারা যাওয়ার পরে আর্থিক কারণে আমি ও আমার ভাই পড়ালেখা করতে পারিনি। আমি চাইনি অর্থের অভাবে আমার মেয়ের লেখাপড়া বন্ধ হোক। কাপড় সেলাই করে, ছাগল ও মুরগি পালন করে সামান্য যে আয় করেছি, তা দিয়েই আমি মেয়েকে পড়িয়েছি। আমার মেয়ে যেন বড় হয়ে মানুষের ভালো করতে পারে।”

এই মুহূর্তে আতিয়া তার বোন শাকিলা ও তার মাকে নিয়ে মামা রুবেল হাসানের কাছেই রয়েছে। যেখানে মানুষ সন্তানের দায়িত্ব নিতেও দ্বিধায় ভোগে, সেখানে বোন ও ভাগ্নিদের দায়িত্ব নিয়ে কেমন বোধ করছেন- জানতে চাইলে রুবেল হাসান বলেন,”বাবা মারা যাওয়ার পর এই বোন আমাকে লালন পালন করেছে। আমিও আমার বোনের মেয়েগুলোকে লালন পালন করছি। আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করি ওদের ভালো রাখার জন্য।” হাস্যোজ্জল ও বিনয়ী আতিয়ার অর্জনে গর্বিত এলাকার সবাই। তার সম্পর্কে প্রতিবেশী আশিকুজ্জামান বলেন, “মেয়েটিকে ছোটবেলা থেকে দেখছি। ও অত্যান্ত ভদ্র ও মার্জিত। তার অর্জন আমাদের সবার অর্জন। এ সফলতা এই পরিশ্রমী মেয়েটির প্রাপ্য।” তার অর্জনে গর্বিত তার কলেজের শিক্ষকরাও। কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ মেহেদী হাসান বলেন, “পরিশ্রম করলে যে কেউ সফল হতে পারে। অর্থ বা অন্য কোন বিষয় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলেও তা জয় করা সম্ভব। আতিয়া কথাটি আবার প্রমাণ করেছে।”

দেশের তরুণ সমাজ যখন মোবাইলে বিভিন্ন ধরনের গেমস খেলায় বা সামাজিক মাধ্যমে বা বিভিন্ন ভিডিও দেখায় ব্যস্ত তখন আতিয়া ঘন্টার পর ঘন্টা সময় কাটিয়েছে কাগজ, কলম আর বই হাতে। জানা যায়, কোন মোবাইল ফোনও ছিল না তার। বই-পুস্তক থেকে শুরু করে সকল শিক্ষা সরঞ্জাম কিছু তার নিজের কেনা হলেও অনেকগুলোই সে পেয়েছিল তার শিক্ষক ও শুভানুধ্যায়ীদের কাছ থেকে। কিন্তু যেখান থেকেই আসুক, সেগুলোর সদ্ব্যবহার সে সবসময় করেছে। তার শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে আতিয়া।

কৃষিবিজ্ঞানী হয়ে দেশের মানুষকে সেবা দিতে চায় মোছাঃ আতিয়া খাতুন। সবার কাছে দোয়া চেয়েছে সে।

 

 

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর
২০২০© এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ*
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Smart iT Host