ইউটিউবে ভিডিও দেখে মাল্টা চাষে উদ্বুদ্ধ হোন আনোয়ার হোসেন। ছোট ভাই সানোয়ারের সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেন বানিজ্যিক ভাবে মাল্টা বাগান করার। দুই ভাই তাদের পরিকল্পনার কথা জানান উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে। এরপর পরিকল্পনা অনুযায়ী কৃষি বিভাগের সহযোগীতা ও পরামর্শে দেড় বিঘা জমিতে গড়ে তোলেন শখের মাল্টা বাগান।
দুই ভাইয়ের সেই শখের মাল্টা বাগান সফলতা পেয়েছে। অপ্রচলিত ফল মাল্টা চাষ করে তারা রীতিমত সাড়া ফেলে দিয়েছেন। ফলে ভরা মাল্টা বাগান দেখে অনুপ্রানিত হচ্ছেন আশেপাশের অনেকেই। চাটমোহরের মাটিতে মাল্টার আশাজাগানিয়া উৎপাদন সম্ভাবনা জাগাচ্ছে মাল্টার চাষ সম্প্রসারণে।
সরেজমিনে পাবনার চাটমোহর উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের উথুলি গ্রামের সানোয়ার হোসেনের মাল্টা বাগান পরিদর্শন করে দেখা যায়, ‘সবুজ মাল্টার’ বাহারী সমাহার।
কোনরুপ ক্ষতিকর কেমিক্যাল ব্যবহার না করেই ‘নিরাপদ’ ভাবে উৎপাদিত সবুজ মাল্টার স্থানীয় বাজারেও বেশ চাহিদা রয়েছে বলে জানান, সংশ্লিষ্ট ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাইদুর রহমান সাঈদ। বিদেশ থেকে আমদানী করা মাল্টার মত হলুদাভাব বর্ণ না হলেও স্বাদ ও মিষ্টতায় খুব একটা তফাৎ নেই বলেও জানান তিনি। সানোয়ারের মাল্টা বাগান সফলতা পাওয়ায় অনেকেই বানিজ্যিক বাগান করতে আগ্রহ প্রকাশ করছে বলে জানান এ কৃষি কর্মকর্তা।
সানোয়ার হোসেন জানান, কৃষি বিভাগের সহযোগীতায় এনএটিপি-২ প্রকল্পের আওতায় গড়ে তোলা তার মাল্টা বাগান কৃষি বিভাগের উর্দ্ধতন কর্মকর্তা, মূলগ্রাম ইউনিয়নের চেয়ারম্যানসহ আশেপাশের এলাকার কৃষকরা পরিদর্শন করেছেন। তার বাগানের সফলতা দেখে অনেকেই বাগান করতে আগ্রহী।
আনোয়ার হোসেন বলেন, গাছ ছোট হওয়ায় এবছর গড়ে গাছ প্রতি ৫ থেকে ৬ কেজি মাল্টা হয়েছে। ইতোমধ্যেই পাবনার পাইকারের নিকট ৭ মণ মাল্টা বিক্রি করা হয়েছে। দেড় বিঘা জমির বাগানে এ মৌসুমে প্রায় ৭০ হাজার টাকার মাল্টা বিক্রির আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
চাটমোহর উপজেলার কৃষি স¤প্রসারণ অফিসার কৃষিবিদ আল ইমরান জানান, মাল্টা মূলত পাহাড়ি এলাকার ফসল। সমতল ভূমিতেও মাল্টা চাষ সফলতা পাওয়া কৃষির জন্য ইতিবাচক মাইল ফলক। সানোয়ারের বাগানে চাষকৃত বারি মাল্টা-১ আমাদের আবহাওয়ায় বেশ উপযোগী। আমরা আশা করছি কৃষকরা উচ্চমূল্যের ফসল মাল্টা চাষে আরো আগ্রহী হবে। এক্ষেত্রে কৃষি বিভাগ জাত সম্প্রসারণে নজর দিচ্ছে। বারি মাল্টা-২ আমদানীকৃত মাল্টার মত হলুদ বর্ণ হওয়ায় এ জাতটির ব্যাপক সম্ভাবনার কথা জানান তিনি।
মাল্টা চাষের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা ও কৃষি বিভাগের উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চাইলে চাটমোহর উপজেলা কৃষি অফিসার এ. এ. মাসুম বিল্লাহ বলেন, মাল্টাসহ অধিক মূল্যের ফল ও ফসল চাষে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি কৃষকদের আধুনিক চাষাবাদে প্রশিক্ষিত করা হচ্ছে। বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে মাল্টা ও মিশ্র ফল বাগান স্থাপনের উদ্যোগের কথা জানান তিনি।
স্বাস্থ্য ও পুষ্টির স্বার্থে বিদেশ থেকে আমদানী করা ফল পরিহার করে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ও দেশীয় ফল খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান কৃষি কর্মকর্তা।