এস, এম, নাহিদ হাসান : আগস্ট বিপ্লবের পরে বাংলাদেশে ফ্যাসিস্ট শাসনের অবসান হয়েছিল বলে ধরে নিয়ে দেশের জনগণ যে আনন্দে উদ্বেলিত ছিল তার বোধহয় শুভ পরিণতিতে পৌছাতে অনেক পথ বাকি! টানা ১৬ বছর শাসনের প্রথম দিকে আওয়ামী সরকারের যে গনত্রন্ত্র ভাবনা ছিল তা খুব দ্রুত পরিবর্তন হয়ে ফ্যাসিসম এর দানবীয় আকার ধারন করে। আদিকাল থেকে ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায় অতি দানবীয়, বীরত্বপূর্ণ এমনকি জাতীয়তাবাদের প্রতি অতি আদর দেখানো শাসকেরাও চিরকাল স্থায়ী হতে পারে নাই। বাংলাদেশ একটি অতি ক্ষুদ্র রাষ্ট্র। এখানকার কেউ ফ্যাসিসম এর পথ অনুসরণ করলে দেশের প্রেক্ষাপটে যাই হোক বিশ্বের প্রেক্ষাপটে এটি অত্যান্ত ক্ষুদ্র প্রয়াস! যাই হোক, সেই ফ্যাসিসমের শৃঙ্খল ভেঙ্গে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করলে ফ্যাসিসম বিরোধী গনতন্ত্রকামী মানুষের আরেকটি প্রচেষ্টা সফল হয়। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে, সময়ের দাবীতে বিশ্ব নন্দিত ব্যাক্তিত্ব ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস প্রধান হয়ে একটি অন্তর্বর্তী কালীন সরকার গঠন করে দেশ পরিচালনায় মনোযোগ দেয় যা এখনো চলমান। এরই মধ্যে নানা চড়াই উতরাই পেরিয়ে দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে অনেক বিষয়ে বিচক্ষনতা, সততা এবং আন্তররিকতার পরিচয় এই সরকার দিয়েছে। তবে ভিন্ন চিত্র একেবারে নেই তা নয়। দিকে দিকে দ্রব্যমুল্যের ঊর্ধ্বগতি, আইন শৃঙ্খলার অবনতি সহ আরো কিছু বিষয়ে সরকার কে একেবারে অসহায় রুপে দেখা যাচ্ছে। এর কারন বের করতে পারা খুব কঠিন কিছু নয়। এর কারন বের করতে হলে কয়েকটি বিষয়ের দিকে দেখতে হবে।
গনতান্ত্রিক দেশ বাংলাদেশ। গনতান্ত্রিক দেশে একজন শাসক কে নির্বাচিত হতে হয় জনপ্রিয়তার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে। এই জনপ্রিয়তা কোন বিশেষ ক্ষেত্রে নয়, এই জনপ্রিয়তা হতে হয় সার্বিক। এই ক্ষেত্রে জনপ্রিয়তার মাপকাঠিতে ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস আসলে কোন অবস্থানে আছেন? উত্তর সবার জানা। তার অসাধারণ জনপ্রিয়তা রয়েছে অর্থনীতিবিদ ও নোবেল লরেট হিসেবে কিন্তু রাষ্ট্রপরিচালনার ক্ষেত্রে তিনি রাজনৈতিক ভাবে কতখানি জনপ্রিয় তা বলাই বাহুল্য! একই কথা সত্য অন্যান্য উপদেষ্টাদের ক্ষেত্রে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কে রাজনৈতিকভাবে জনপ্রিয় হতে হবে এমন নয়। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কে তার দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হতে হয়। সাধারণত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয় একটি সেতু হিসেবে কাজ করার জন্য। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সেই দায়িত্ব হল একটি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকারকে ক্ষমতা বুঝে দেয়া। ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস এর নেতৃত্তে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সেই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কিছু বিষয়ে কাজ করতে দেখা যাচ্ছে যা শুধু মাত্র জনগনের ভোটে নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকার ব্যাতিত অন্য কারো হস্তক্ষেপ করা সমিচীন নয়। একটি গণতান্ত্রিক দেশের রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কার নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকারের দায়িত্ব। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে অনির্বাচিত বা অন্যকথায় অগণতান্ত্রিক সরকার রাষ্ট্র পরিচালনা করলে তাকেই তো ফ্যাসিসম বলে!
গত ১৬ বছর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার প্রশাসনের সর্বত্র যথেচ্ছা দলীয়করণ করে যে হযবরল করে রেখেছে তা নিয়মতান্ত্রিক ভাবে সমাধান করতে গেলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কমপক্ষে ১৬ বছর লেগে যাবে! আর এই সমস্যার সমাধান করার পুর্নাঙ্গ সক্ষমতা যে এই সরকারের নেই তা বলা বাহুল্য। সাধারণ নির্বাচনের ক্ষেত্রে টালবাহানার সুযোগে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের অংশীজন বা তাদের মদদপুষ্ট অন্যান্য ব্যাক্তি বা গোষ্ঠী যে সুযোগের সন্ধান করবে তাও বলার অবকাশ রাখে না। এর অন্যতম প্রমান সম্প্রতি মহামান্য রাষ্ট্রপতির অলীক কথন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ সম্পর্কে পূর্বে এবং সাম্প্রতিক সময়ে ভিন্ন মতামত দিয়ে বিতর্কের উদ্রেক করেছেন তিনি। এই বিষয়টিকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। তাহলে প্রশ্ন আসতে পারে প্রশাসন ঢেলে না সাজিয়ে নির্বাচন কি সফল ও নিরাপেক্ষ করা সম্ভব। উত্তর হচ্ছে, অবশ্যই সম্ভব। এর জন্য শুধুমাত্র নির্বাচন কমিশন কে নতুন করে সাজাতে হবে এবং সক্ষম করতে হবে। মাঠ পর্যায়ে নির্বাচন সম্পর্কিত সকল কর্মকাণ্ডের দায়িত্ব সশস্ত্রবাহিনীর কাধে দেয়া যেতে পারে। সশস্ত্রবাহিনী যে এখনো জনগনের সেবায় এবং জনগনের পক্ষে তার প্রমাণ অতীতে তারা বহুবার দিয়েছে এবং সাম্প্রতিক বিপ্লবেও সফলতার সাথে দিয়েছে। সুতারাং এই মুহূর্তে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে এর চেয়ে বেশি কিছু করার নেই বলেই মনে হয়। অন্যথায়, আওয়ামী ফ্যাসিসম কে আরেকটি সুযোগ দেয়ার অভিযোগে এবং অপরাধে আরেকটি বিপ্লবের আশঙ্কা অমূলক নয়। (মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন)।
লেখক শিক্ষক ও সাংবাদিক