মাহবুব-উল-আলম : বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ও প্রাচীন ক্যান্টনমেন্ট কুমিল্লা সেনানিবাস। নানা দিক থেকে এই ক্যান্টনমেন্টটি প্রসিদ্ধ ও ইতিহাস সমৃদ্ধ। বৌদ্ধ বিহারের কোটিলা মূড়া,আনন্দ বিহার,ভোজ বিহার ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বার্মা যুদ্ধের সময় মিত্রশক্তির সোবাহিনীর দক্ষিণ এশিয়ার চীফ জেনারেল স্লিম কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট থেকেই নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। যুদ্ধাহতদের চিকিৎসার জন্য তখন এখানেই স্থাপিত হয়েছিল বিশালাকারের হাসপাতাল (সিএমএইচ)। এছাড়া ক্যান্টমন্টের পাশে রয়েছে ওয়ার সিমেট্রি (দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধে নিহত সেনাদের গণকবর)।
কুমিল্লা সেনানিবাসে মেজ জামাতা ক্যাপ্টেন রাতিন ও মেয়ে ডা; মেহজাবিন এর অফিসার্স কোয়াটারে ১৯ ডিসেম্বর ২০২১ হতে ২৪ ডিসম্বর ২০২১ পর্যন্ত অবস্থান কালে ওই দর্শনীয় স্থানগুলো পরিদর্শনের সুযোগ হয়।
ফিল্ড মার্শাল জেনারেল স্লিম :
বর্তমানে কুমিল্লা সেনানিবাসের অভ্যন্তরে অবস্থিত রেলিক ওয়ার্ল্ড ওয়ার-২ ছিল মিত্রশক্তি তথা ব্রিটিশ বাহিনীর ১৪ আর্মির সেনানায়ক ফিল্ড মার্শাল উইলিয়াম জোসেফ স্লিমের সদর দফতর বা কমান্ড পোস্ট। এটি ছিল ১৯৪৩ সালে ভারত ও বার্মায় জাপানি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনার কেন্দ্রবিন্দু।
ফিল্ড মার্শাল স্লিম এর কমান্ড পোস্টের ওয়াচ টাওয়ার ও গুহার ভেতরের ছবি
কমান্ড পোস্টটি টিলার ৫০ফুট নিচে সুকৌশলে গুহা প্রতিষ্ঠা করা হয়। আকাশ পথ থেকে কোনো বৈমানিকের বোঝার উপায় ছিল টিলার নিচেই তৈরি হচ্ছে রণকৌশল।
গুহার সিড়ি ও ওয়াচ টাওয়ার
ফিল্ড মার্শাল স্লিমের সেই কমান্ড পোস্টকে সংরক্ষণ ও আধুনিকায়ন করে ইতিহাসকে বাচিয়ে রাখতে রেলিক ওয়ার্ল্ড ওয়ার-২ স্থাপন করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। সেখানে মাটির নিচে ঢুকলেই দেখা যাবে কিভাবে গুহার মধ্যে গোপনে কাজ করতেন ফিল্ড মার্শাল স্লিম এবং তার অধীনস্থরা। সেইসাথে তাদের ব্যবহৃত অস্ত্র, হেলমেট সহ নানান সরঞ্জাম সংরক্ষিত আছে টিলার নিচে। কুমিল্লা ক্যান্টমেন্টের অফিসারস ক্লাবের ঠিক উল্টো পাশে ওয়াচ টাওয়ারের অবস্থান।
গুহায় প্রবেশের আগে ওয়াচ টাওয়ারে ওঠার পথ
ওয়াচ টাওয়ারে প্রবেশের একটি পথ খোলা থাকলেও বের হবার জন্য রয়েছে আরো তিনটি পথ। সেনাবহিনী অতি যত্নে সংরক্ষণ করেছে এটি। প্রবেশ পথের সিড়ি দিয়ে ধীরে ধীরে গুহায় প্রবেশ করা যায়। ভিতরটা পরিস্কার ও আলোকিত রাখা হয়েছে। এখানে কয়েকটি কক্ষ রয়েছে। প্রত্যেকটি কক্ষ সেরকম ভাবেই সজ্জিত রাখা হয়েছে যেভাবে জেনারেল স্লিম যুদ্ধকালিন সময়ে সহকারীদের সাধে পরামর্শ করতেন। এছাড়া গুহা খননের সময় প্রাপ্ত যুদ্ধে ব্যবহৃত বৃটিশ সেনাদের অনেক নিদর্শনও সংরক্ষিত রাখা হয়েছে।
এখানে প্রবেশ করলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বৃটিশ ভারতের এই বাংলায় জাপানিদের সাঁড়াশি হামলার ভয়াবহতা প্রতিরোধের রণকৌশল অনুধাবন করা যায়।। চলবে….