ভাঙ্গুড়া সংবাদদাতা :
পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলায় ১৫ ভরি সোনার গহনা চুরি মামলার আসামীকে গ্রেফতারের দাবিতে শনিবার দুপুরে ভাঙ্গুড়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। মামলার বাদি তানিয়া হক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, “গত ৪ জুলাই শুক্রবার রাতে বিবাদি ইফফাত মোকাররমা সানিমুন(বাদির বান্ধবী)খুলনাগামী আন্ত:নগর চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেন থেকে মোবাইল ফোনে আমাকে জানান তিনি ঢাকা থেকে একা রওনা দিয়েছেন এবং রাত সাড়ে ১১টার দিকে তিনি ভাঙ্গুড়া সদরের বড়ালব্রিজ রেল স্টেশনে নামবেন। এজন্য রাতে তিনি আমার বাসায় উঠবেন এবং দু’দিন অবস্থান করার কথা বলেন ”। সে অনুযায়ী তিনি তানিয়া হকের বাসায় ওঠেন। তখন তানিয়া হকের বাসায় তার বাবা-মা ছিলেন না। ভাই মামুন ও ভাবী বাসায় থাকলেও তারা অন্য কক্ষে ঘুমান।
সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয় সানিমুন ২য় দিন রাত যাপনের পর নগদ ১২ হাজার টাকা ও ১৫ ভরি সোনার গহনা চুরি করে নিয়ে পালিয়ে গেছেন। ঘটনাটি ঘটে ভাঙ্গুড়া পৌরসভার শরৎনগর বাজারের বাসিন্দা ব্যাংকার তানিয়া হকের বাসায়। অভিযুক্ত সানিমুন ব্যাংকার তানিয়া হকের বান্ধবী। এ ব্যাপারে ভাঙ্গুড়া থানায় একটি মামলা রুজু হয়েছে। এরপর এক মাস অতিবাহিত হলেও পুলিশ আসামিকে গ্রেফতার করতে পারেনি। উপরন্ত বিবাদি নিজে ও তার লোকজন দিয়ে হুমকি দিচ্ছে।
তানিয়া হক অবিলম্বে চুরি মামলার আসামী গ্রেফতারের দাবি করে বলেন দীর্ঘদিন বিবাদি ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকায় তারা এখন হতাশ হয়ে পড়েছেন। তিনি এজন্য পুলিশের পাশে সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
তানিয়া হক বলেন, শনিবার ডিনারের পর বান্ধবীর সাথে গল্পগুজব করে মধ্যরাত পার করেন তানিয়া। অতপর বিবাদি সানিমুন তার ব্যাগ থেকে কফি বের করে নিজ হাতে তৈরি করে তানিয়াকে এক কাপ দেন এবং নিজে এক কাপ পান করেন। এরপর তানিয়া ঘুমিয়ে যান। সকালে একটু বিলম্বে ঘুম থেকে উঠে তানিয়া তার বান্ধবী সানিমুনকে ঘরে পাননি। বাইরের গেটের চাবি ডায়নিং টেবিলের ওপর রাখা ছিল,তাই ধারনা করা হয় তিনি গেট খুলে বের হয়ে গেছেন। রবিবার অফিসে যাবার সময় তানিয়া তার ব্যাগে পুর্বে রাখা নগদ ১২ হাজার টাকা খুঁজে না পেয়ে হতাশ হয়ে সানিমুনকে ফোন দেন। সানিমুন তার ফোন রিসিভ করে বলেন,“ যদি টাকা খুঁজে না পাস তাহলে আমি তোকে দিয়ে দেব”। এতে তানিয়ার সন্দেহ হয় এবং তিনি আলমারি খুলে দেখেন তার সোনার গহনাগুলো একটাও নেই। আগের দিন তানিয়া হক ঐ গহনাগুলো পড়ে বান্ধবী সানিমুনের সাথে বিভিন্ন স্থানে বেড়াতে বের হয়েছিলেন। রাতে গহনাগুলো খুলে যখন তিনি আলমারিতে রাখেন সানিমুন তখন সব লক্ষ্য করেছিলেন। এরপর তানিয়া হক আবার সানিমুনকে ফোন দেন কিন্তু তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। শনিবার এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সানিমুনের সাথে তানিয়া আর যোগাযোগ করতে পারেননি বলে জানাগেছে।
মামলার তথ্য অনুযাীয় এ চুরির ঘটনায় তানিয়া হকের বাসা থেকে ২ ভরি সোনার এক জোড়া চুড়, ৪ ভরি সোনার দুইটা হার, ১ ভরি সোনার এক জোড়া কানের দুল, ২ ভরি সোনার ছোট কানের দুল তিন জোড়া, ১০ আনা ওজনের সোনার কানের রিং, ১ ভরি ২ আনা ওজনের সোনার চেইন, ২ ভরি সোনার দুইটি ব্রেসলেট ও ২ ভরি সোনার ছয়টি আংটি খোয়া গেছে। যার আনুমানিক মূল্য ২৫ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়,সানিমুন বেশ কিছুদিন ধরে ঢাকায় অবস্থান করেন এবং সেখান থেকে মাঝে মধ্যে এলাকায় আসেন। তার ব্যক্তি জীবনও সুশৃংখল নয় বলে জানা গেছে। তার প্রথম স্বামীকে তালাক দিয়ে বর্তমানে অন্য এক বিবাহিত পুরূষের সাথে ঘর করছেন বলেও নিশ্চিত হওয়া গেছে। সানিমুনের বর্তমান স্বামী একজন সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন কিন্তু অনৈতিক ঘটনার কারণে তারও এখন চাকরি নেই বলে জানাগেছে। ফলে সানিমুন দীর্ঘদিন অর্থসংকটে রয়েছেন। এসব কারণে সানিমুনের দ্বারা চুরির ঘটনাটি সংঘটিত হতে পারে বলে প্রাথমিক ভাবে পুলিশ সন্দেহ করছে।
ভাঙ্গুড়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো.শফিকুল ইসলাম বলেন, তানিয়া হক বাদি হয়ে ইফ্ফাত মোকাররমা সানিমুনের বিরুদ্ধে নগদ ১২ হাজার টাকা ও ২৫ লক্ষ ৮০হাজার টাকা মূল্যের সোনার গহনা চুরির মামলা করেছেন( মামলা নম্বর ০২, তারিখ ৯ জুলাই ২০২৫,আইনের ধারা ৩৮০/৪৫৭, পেনাল কোড ১৮৬০)। এরপর থেকে পুলিশ আসামী গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
জানাগেছে,সানিমুন একজন স্কুল শিক্ষিকা,তিনি দীর্ঘদিন স্কুলে অনুপস্থিত রয়েছেন। উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো.সেকেন্দার আলী জানান প্রায় এক বছর ধরে তিনি ঢাকায় অবস্থান করছেন। তবে মাঝে মধ্যে আসেন আবার ছুটির দরখাস্ত দেন। ফলে বিদ্যালয়ে পড়ালেখার অনেক ক্ষতি হচ্ছে কিন্তু তিনি তাকে কিছু বলতে পারছেন না। কারণ তিনি বড় অফিসার দিয়ে ফোন করিয়ে তদবির করেন। এসব ব্যাপারে সানিমুনের বক্তব্য জানার চেষ্টা করলেও তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।