বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে রাজশাহী নগরীর বোয়ালিয়া থানা সদর এলাকায় দুই হাতে পিস্তল নিয়ে গুলি চালানো সেই যুবলীগ নেতা জহিরুল ইসলাম রুবেলকে গ্র্রেপ্তার করেছে র্যাব। শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ১২টা ৪৫ মিনিটে কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গ্রেপ্তার রুবেল রাজশাহী নগরীর চন্ডীপুর এলাকার আবদুর রাজ্জাকের ছেলে। এর আগে গত ৫ আগস্ট সারা দেশের ন্যয় রাজশাহীতেও আওয়ামী সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে এই যুবলীগ নেতা রুবেলকে গুলি চালাতে দেখা গিয়েছিল। কিন্তু ওইদিনই আওয়ামী সরকার প্রধান শেখ হাসিনার পলায়ন ও ক্ষমতার পালাবদলের পর থেকে অস্ত্রধারী রুবেল পলাতক ছিল।
এ তথ্য নিশ্চিত করে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার সহকারী পরিচালক আ ন ম ইমরান খান বলেন, গত ৫ আগস্ট বোয়ালিয়া এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও গুলিবর্ষণের ঘটনায় রুবেলের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এরপর দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করলে র্যাবের নজরদারিতে থাকা অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী জহিরুল ইসলাম রুবেলকে গ্র্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে র্যাব। তবে গ্রেপ্তার এড়াতে অনেক কৌশল অবলম্বন করেছিল রুবেল।
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে রুবেলসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের আরও নেতাকর্মীদের অস্ত্র হাতে সক্রিয় থাকার বিষয়টিও নজরে আসার কথা জানিয়েছিল রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি)। তবে আরএমপির আগেই কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে রুবেলকে গ্র্রেপ্তারের কথা জানাল র্যাব। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে অস্ত্র হাতে থাকা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের আইনের আওতায় আনতে তৎপরতা শুরু করেছে বলে শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে প্রতিবেদককে জানিয়েছেন আরএমপির শীর্ষ এক কর্মকর্তা। একটি প্রশ্নের জবাবে আরএমপির বোয়ালিয়া জোনের ডেপুটি কমিশার (ডিসি) বলেন, গ্রেপ্তার রুবেলকে এখনও আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। তবে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই আমাদের কাছে হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। এ লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই রুবেলকে নিয়ে রাজশাহীর উদ্যেশ্যে র্যাব রওয়ানা হয়েছে বলে জেনেছি।
জানা গেছে, গ্রেপ্তার রুবেলের নিজ এলাকা ছাড়াও নগরীর বেশ কয়েকটি এলাকায় ছিল র্দুর্ধষ ক্যাডার বাহিনী ও শক্তিশালী মাদক সিন্ডিকেট। এই ক্যাডার বাহিনীর মাধ্যমেই জমি দখল, মাদক, জুয়া, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকান্ডসহ সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি। হাফ ডজন মামলার আসামি হয়েও ২০২৩ সালে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে হলফনামায় তথ্য গোপন করে প্রার্থী হয়েছিলেন তিনি। সর্বশেষ গত ৫ অক্টোবর হাসিনা সরকারের পতনের দিন শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমাতে তৎকালীন মেয়র লিটনের নির্দেশে একটি শক্তিশালী শুটার বাহিনী গুলিবর্ষণ করে। ওই শুটার বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন রুবেল। ওই দিন দুপুরে তালাইমারী এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা নগরীর সাহেববাজারের দিকে এগোতে থাকে। তারা শাহ মখদুম কলেজ এলাকায় পৌঁছালে রুবেলের নেতৃত্বে শুটার বাহিনী নিরীহ শিক্ষার্থীদের ওপর বৃষ্টির মতো গুলি ছুড়েছিল।
এফএনএস