অধ্যাপক ডা. এমএস জহিরুল হক চৌধুরী
মহামারী করোনার ঢেউয়ের পর ঢেউ শেষ হতে না হতেই আবার অমিক্রন শুরু হয়েছে। ফলে ভাইরাসটি নিয়ে আমাদের মোটেও অবহেলা করা উচিত নয়। ভাইরাস ঠেকাতে করণীয়গুলো আমাদের যথাযথভাবে মেনে চলা উচিত। তারপর শীতকালও স্ট্রোকের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। শীতকালে গ্রাম-গঞ্জে সকালে হঠাৎ গোসল করা, বাথরুমে হঠাৎ ঝরনা ছেড়ে দেওয়া- এসবই বিপদের লক্ষণ। বাথরুমে গিয়েও স্ট্রোক হয়েছে, এমন খবরও আসে, বিশেষ করে উচ্চ রক্তচাপের রোগীর। তাই শীতকালে সাবধান থাকা ভালো।
সাধারণত রক্তনালি দুর্ঘটনার কারণে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে গেলে বা হারিয়ে গেলে তাকে স্ট্রোক বলে। তবে এটা যে কারও ক্ষেত্রে কোনো সময় হতে পারে। শরীরের কোনো একদিকে দুর্বল বোধ করা বা শরীরের কোনো একদিক নাড়াতে না পারা, হাত-পায়ে অবশ ভাব, মুখ একদিকে বেঁকে যাওয়া, প্রচণ্ড মাথাব্যথা হওয়া, কথা অস্পষ্ট হয়ে যাওয়া, বমি হওয়া, দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া, মুখের অসাড়তা, কথা জড়িয়ে যাওয়া, বেসামাল হাঁটাচলা, হঠাৎ খিঁচুনি বা ধপ করে পড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হলে বুঝতে হবে, স্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এমন হলে রোগীকে কাত করে শুইয়ে দিতে হবে। এ অবস্থায় কোনো খাবার বা ওষুধ মুখে দেওয়া যাবে না। এগুলো শ্বাসনালিতে ঢুকে ক্ষতি করতে পারে। তাই মুখে জমে থাকা লালা, বমি পরিষ্কার করে দিতে হবে। টাইট জামা-কাপড় ঢিলা করে দিতে হবে। দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। যাওয়ার সময় খেয়াল করে রোগীর আগের চিকিৎসার ফাইল সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে।
স্ট্রোক-পরবর্তী করণীয় : ১ থেকে ২ ঘণ্টার মধ্যেই নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। সাধারণত স্ট্রোকের ক্ষেত্রে দ্রুত ব্রেইনের রেডিওলোজিক টেস্ট, সিটিস্ক্যান, এমআরআই করা উচিত। ঘাড়ের রক্তনালির ডপলার, হার্টের সমস্যার জন্য ইকো পরীক্ষা করাতে হবে। রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা পরীক্ষা করে নিতে হবে। প্রয়োজনে এনজিওগ্রাম ও ইকোকার্ডিওগ্রাফি পরীক্ষা করতে হবে।
চিকিৎসা করাতে হবে দ্রুত : স্ট্রোক হলে আক্রান্ত এলাকার মস্তিষ্কের কোষ জীবিত রাখতে অক্সিজেনসহ প্রয়োজনীয় পুষ্টি-উপাদান সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। রক্ত সরবরাহ ২ থেকে ৫ মিনিটের বেশি বন্ধ থাকলে স্নায়ুকোষ স্থায়ীভাবে ধ্বংস হয়ে যায়।
স্ট্রোকের চিকিৎসা : যেহেতু স্ট্রোক ব্রেইনের রক্ত চলাচল কমে যাওয়ার জন্য হয় এবং ব্রেইন কম রক্তপ্রবাহ নিয়ে বেশিক্ষণ টিকতে পারে না, তাই স্ট্রোকের চিকিৎসা তাৎক্ষণিকভাবে শুরু করতে হয়। ওষুধ প্রয়োগ করে রক্তের চাপ, রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখতে হবে। রক্তের জমাট অবস্থা কাটিয়ে উঠতে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা শুরু করতে হবে। প্রাথমিক ধাপ কাটিয়ে ওঠার পর বহুদিন পর্যন্ত ফিজিওথেরাপির প্রয়োজন হতে পারে। স্ট্রোক হয়েছে, বুঝতে পারার সঙ্গে সঙ্গে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
প্রতিরোধ : নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা, ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ করা, ডাক্তারের পরামর্শে নিয়মিত ওষুধ সেবন, নিয়ম করে হাঁটা, খাদ্যাভ্যাসে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন, মানসিক চাপ পরিহার করা, ওজন নিয়ন্ত্রণ করা, ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যাবে। তবে সচেতন ও সাবধনতা জরুরি।
লেখক : অধ্যাপক; ক্লিনিক্যাল নিউরোলজি বিভাগ, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল, ঢাকা
চেম্বার : পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার লি.
শ্যামলী শাখা, ঢাকা
০১৮৬৫৪৪৪৩৮৬; ০১৮৪৩৬১৬৬৭০