তারেক আনন্দ/
বাংলা সাহিত্যের জাদুকর হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন আজ। সব সৃষ্টিকর্মের মতো তার রচিত গানগুলো শ্রোতাদের হৃদয়ে গেঁথে থাকবে। তিনি মূলত নিজের ছবির জন্যই গান লিখেছেন। সেগুলোর বেশিরভাগই জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বিশেষ দিনটিতে হুমায়ূন আহমেদের জনপ্রিয় কিছু গান নিয়েই আজকের আয়োজন। লিখেছেন- তারেক আনন্দ
একটা ছিল সোনার কন্যা
‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ ছবির গান ‘একটা ছিল সোনার কন্যা’। এই গান এখনো মানুষের মুখে মুখে। ছবি মুক্তির পর পরই সারাদেশে জনপ্রিয়তা পায়। আজও এর শ্রোতাপ্রিয়তা এতটুকু কমেনি। এই গানে কণ্ঠ দিয়ে সুবীর নন্দী জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সেরা গায়ক হন। গানটির সুর ও সংগীতায়োজন করেছেন মকসুদ জামিল মিন্টু।
ও কারিগর দয়ার সাগর
জোছনাপ্রেমী ছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। জোছনার প্রতি তার ভালো লাগা বিভিন্ন লেখাতেই উঠে এসেছে। জোছনা রাতে তার যেন মরণ হয়, এই ইচ্ছাটাই তিনি এ গানে বলে গেছেন। এসআই টুটুলের সুর ও কণ্ঠে এটি শ্রোতাদের কাছে পছন্দের একটি গান।
বরষার প্রথম দিনে
‘দুই দুয়ারী’ ছবির ‘বরষার প্রথম দিনে’ গানটি গেয়েছেন সাবিনা ইয়াসমিন। এই গানে কণ্ঠ দিয়ে ২৫তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সেরা গায়িকার পুরস্কার জেতেন জনপ্রিয় এ কণ্ঠশিল্পী। গানটির সুর ও সংগীতায়োজন করেছেন মকসুদ জামিল মিন্টু। বৃষ্টির প্রতি হুমায়ূন আহমেদের দুর্বলতা ছিল ভীষণ। তাই তো নাটক, চলচ্চিত্র, গানে কিংবা ব্যক্তিজীবনে বৃষ্টির প্রতি ভালোবাসা ছিল প্রচ- রকমের। বৃষ্টির এই গানটি সংগীতপ্রেমী মানুষের কাছে ভীষণ প্রিয়। গানটি সুর করা হয়েছিল ‘নীতু তোমাকে ভালোবাসি’ টেলিছবির জন্য। পরবর্তী সময় ‘দুই দুয়ারী’ চলচ্চিত্রে গানটি ব্যবহার করা হয়।
যদি মন কাঁদে
‘কৃষ্ণপক্ষ’ ছবির ‘যদি মন কাঁদে’ গানটি গেয়েছেন মেহের আফরোজ শাওন। হুমায়ূন আহমেদের গান মানেই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতে নেওয়া। এই গানের মাধ্যমেও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সেরা গায়িকার পুরস্কার জেতেন শাওন। গানটির সুর ও সংগীতায়োজন করেছেন এসআই টুটুল। হুমায়ূন আহমেদের অনেক গানের মধ্যে এটিও শ্রোতাদের হৃদয়ে নাড়া দিয়ে যায়। যেন প্রিয় লেখককে স্মরণ করতেই এই গান শুনে থাকেন হুমায়ূনভক্তরা।
ও আমার উড়াল পঙ্খিরে
‘ও আমার উড়াল পঙ্খি রে, যা যা তুই উড়াল দিয়া যা, আমি থাকব মাটির ঘরে, আমার চক্ষে বৃষ্টি পড়ে, তোর হইব মেঘের উপরে বাসা’- ‘চন্দ্রকথা’ ছবির এ গানটি গেয়েছেন সুবীর নন্দী। সুর ও সংগীতায়োজন করেছেন মকসুদ জামিল মিন্টু। জাদুকর গানেও জাদু মেখে গেছেন। এ গানের ভেতরে অদ্ভুত এক জাদু আছে। গানটি হৃদয়ে হাহাকার তৈরি করে। গানে তিনি পাওয়া না পাওয়ার বেদনা অসাধারণভাবে তুলে ধরেছেন। কোনো উপমার ধার ধারেননি। সরাসরি লিখেছেন ‘আমার মনে বেজায় কষ্ট, সেই কষ্ট হইল পষ্ট, দুই চোখে ভর করিল আন্ধার নিরাশা’- এই দুটি চরণে অনেক কষ্টের বদলে লিখেছিলেন বেজায় কষ্ট, যা গানটিকে নিয়ে গেছে সাধারণ মানুষের কাছে।
আমার ভাঙা ঘরে ভাঙা চালা
প্রতিটি গানই মানুষের হৃদয়ে গেঁথে আছে। ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ ছবির আরেকটি গান ‘আমার ভাঙা ঘরে ভাঙা চালা’। গানটিতে কণ্ঠ দেন সাবিনা ইয়াসমিন। পর্দায় এর সঙ্গে ঠোঁট মিলিয়েছেন মেহের আফরোজ শাওন। গানটির সুর ও সংগীতায়োজন করেছেন মকসুদ জামিল মিন্টু।
মাথায় পরেছি সাদা ক্যাপ
‘দুই দুয়ারী’ চলচ্চিত্রে আরেকটি গান ছিল ‘মাথায় পরেছি সাদা ক্যাপ’। গানটি সম্পর্কে সুরকার মকসুদ জামিল মিন্টু বলেন, ‘গানটি একটানা লেখা ছিল, কোনো বিরতি ছিল না। এখন আমাদের তরুণ সমাজ যে ধরনের গানের চর্চা করতে চায় বা যাকে জীবনমুখী গান বলে- হুমায়ূন আহমেদ তা লিখে গিয়েছেন ১৫ বছর আগে।’ গানটিতে কণ্ঠ দেন আগুন। ছবিতে ঠোঁট মেলান রিয়াজ।
চাঁদনি পসরে কে
‘চন্দ্রকথা’ ছবির ‘চাঁদনি পসরে কে আমারে স্মরণ করে’ গানটি গেয়েছেন সেলিম চৌধুরী। গানটির সুর ও সংগীতায়োজন করেছেন মকসুদ জামিল মিন্টু। এটি হুমায়ূন আহমেদের আরেকটি অসাধারণ গান। জীবন, মৃত্যু, আশা, নিরাশা- সব কিছু মিলিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘বাহিরে চান্দের আলো ঘর অন্ধকার, খুলিয়া দিয়াছি ঘরের সকল দুয়ার, তবু কেন সে আমার ঘরে আসে না।’
আমার আছে জল
২০০৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘আমার আছে জল’ ছবির টাইটেল ট্র্যাকটি গেয়েছেন মেহের আফরোজ শাওন। পর্দায় ঠোঁট মেলান বিদ্যা সিনহা মিম। গানটির সুর ও সংগীতায়োজন করেছেন হাবিব ওয়াহিদ।
হুমায়ূন আহমেদ চলে গেছেন। আমরা হারিয়েছি উপন্যাস, গল্প, নাটক, চলচ্চিত্রের একজন মহান কারিগরকে। সেই সঙ্গে হারিয়েছি একজন অসাধারণ গীতিকারকে। হুমায়ূন আহমেদের গান বেঁচে থাকবে, যুগে যুগে শ্রোতাদের আপ্লুত করবে।
সূত্রঃ আমাদের সময়