পাবনায় আবারও রেকর্ড ভেঙেছে করোনা শনাক্তের সংখ্যা। গত দুবছরের মধ্যে বুধবার সর্বোচ্চ ১৭৭ জন শনাক্তের পরদিনই ভেঙেছে সংক্রমণের রেকর্ড। আজ বৃহস্পতিবার জেলায় করোনা শনাক্ত হয়েছে ১৯২ জনের।
করোনা উপসর্গ নিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় শিক্ষক, মুক্তিযোদ্ধা, চিকিৎসকসহ কমপক্ষে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এদের মধ্যে একজন গত রাতে জেনারেল হাসপাতালে মারা যান। ঈশ্বরদীতে ২ জন, সদর উপজেলায় ৪ জন, সাঁথিয়ায় ২ জন এবং বেড়া উপজেলায় ২ জনের উপসর্গে মৃত্যুর কথা স্থানীয়রা জানালেও মৃত্যুর সঠিক পরিসংখ্যান জানাতে পারেনি স্বাস্থ্য বিভাগ।
পাবনার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. কেএম আবু জাফর জানান, জেলায় ১২১০ জনের নমুনা পরীক্ষায় নতুন ১৯২ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত এটিই পাবনায় সর্বোচ্চ সংক্রমণের রেকর্ড।
তিনি জানান, করোনা সংক্রমণ প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়ায় এবং জনসাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মানায় পাবনাতেও করোনা সংক্রমণ বেড়ে গিয়েছে। সচেতন না হলে সংক্রমণ ও মৃত্যু দুই বাড়বে।আক্রান্তের একটি বড় অংশ করোনা পরীক্ষা না করা এবং হাসপাতালের বাইরে মারা যাওয়ায় সঠিক পরিসংখ্যান জানা সম্ভব হচ্ছে না।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার মধ্য দিয়ে পাবনায় শুরু হয়েছে প্রথম দিনের কঠোর লকডাউন।
প্রধান সড়কগুলোতে জনসমাগম কম হলেও, খুলেছে অলিগলির দোকানপাট, চায়ের স্টল। পৌর শহরের বাইরে চলাচল করছে ইজিবাইক ও সিএনজি অটোরিকশার মতো যন্ত্রচালিত বাহনও।
সরেজমিনে পাবনার পৌর এলাকার দক্ষিণ আটুয়া, কাচারীপাড়া, মন্ডলপাড়া, বাবলাতলা, আরিফপুর ও বাস টার্মিনাল এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সকালের গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মাঝেই খুলেছে পাড়া মহল্লার দোকানপাট। চায়ের দোকানগুলোতে ভিড় করে আড্ডা দিচ্ছেন নানা বয়সের মানুষ। অনেকেই বের হয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কতটা কঠোর হয় তা দেখতে।
শহরের লাইব্রেরি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, কাঁচা সবজির বাজার বসানো হয়েছে পার্শ্ববর্তী কৃষ্ণপুর বালিকা বিদ্যালয়ের খোলা মাঠে। ক্রেতা সমাগম কম, তবে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথ মানা হচ্ছে না। ক্রেতা-বিক্রেতার অনেকের মুখেই নেই মাস্ক।
একই চিত্র শহরের বড় বাজার, মাসুম বাজারেও। খাদ্য ও নিত্যপণ্যের দোকান ছাড়াও নিউ মার্কেট, প্রেস ক্লাব গলি, দইবাজার, বড় বাজার এলাকার দোকানপাট খুলেছেন ব্যবসায়ীরা।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেখলে সাটার বন্ধ করে ভেতরে অবস্থান নিচ্ছেন তারা, চলে গেলে পাল্লা অর্ধেক খুলে বেচাকেনা করছেন দোকানীরা।
এদিকে, সকাল থেকেই বৃষ্টি উপেক্ষা করে শহরের বিভিন্ন মোড়ে চেকপোস্ট বসিয়ে চলাচল নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
বাইরে আসা লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন তারা। তবে, বাস টার্মিনাল ও হাজিরহাট এলাকায় সিএনজি অটোরিকশা, ইজিবাইক চলাচল করতে দেখা গেছে।
মনসুরাবাদ এলাকার বাসিন্দা রাকিবুল হাসান জানান, জরুরি কিছু ওষুধ কিনতে বাইরে এসেছিলাম। আতঙ্কে ছিলাম হয়তো বাধার মুখে পড়ব। কিন্তু কোথাও বাধাতো দূরের কথা দেখে মনে হচ্ছে সব যেন স্বাভাবিক।
তিনি বলেন, গ্রাম পর্যায়ে যেভাবে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে তাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর না হলে লকডাউন বাস্তবায়ন হবে না, ভয়াবহ পরিণতি হবে।
সকাল থেকে লকডাউনে সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে জেলার বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছেন পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খান।
এ সময় পুলিশ সুপার বলেন, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বের হলে পুলিশ কঠোর ব্যবস্থা নেবে। আমরা সতর্ক করেছি, এরপরও আইন অমান্য করলে গ্রেপ্তার করা হবে।