পাবনা-৩ (ভাঙ্গুড়া,চাটমোহর,ফরিদপুর)আসনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি বহিরাগত প্রার্থীকে প্রাথমিক মনোনয়ন দেওয়ায় স্থানীয় নেতা-কর্মীরা বেঁকে বসেছেন। এদিকে জামাত সমর্থকরা আলহামদুলিল্লাহ বলে জোরেশোরে মাঠে নেমেছেন- এমন দাবি খোদ বিএনপি নেতারাই করেছেন।
এছাড়া বহিরাগত প্রার্থীর প্রচারণায় স্থানীয়দের চেয়ে বাইরের এলাকা, বিশেষ করে সুজানগর উপজেলা থেকে আগত লোকেরা প্রভাব খাটাচ্ছেন – এমন অভিযোগও উঠে এসেছে। ফলে পাবনা-৩ এর বিএনপি এখন মূলত খন্ড খন্ড। এ অবস্থা যতদিন চলবে জামাতের বাক্স তত তারাতারি ভরবে বলে অনেকের ধারণা। সেইসঙ্গে পাবনা-৩ এর শক্তিশালী বিএনপি সবচেয়ে দুর্বল রাজনীতিতে পরিণত হবে – এমন আলোচনা এখন ফেসবুকে ভাইরাল।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী শাসনামলে একের পর এক মিথ্যা মামলা-হামলা ও গণগ্রেফতারের কারণে বিএনপি’র নেতা কর্মীরা এক প্রকার আত্মগোপনে চলে যায়। স্থানীয়ভাবে মিছিল-মিটিং করার স্বক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেছিল। ২০২২ সালে পাবনা জেলা বিএনপির সদস্য সচিবের দায়িত্ব নেওয়ার পর এড,মাকসুদুর রহমান মাসুদ খন্দকার ভাঙ্গুড়া,চাটমোহর,ফরিদপুর উপজেলায় ব্যাপক সাংগঠনিক তৎপরতা শুরু করেন। নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যে তিনি বিএনপিকে তৃণমুল পর্যায়ে সুসংগঠিত করেন।
ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর পাবনা জেলা প্রশাসন কর্তৃক আয়োজিত মুক্তযোদ্ধাদের এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মাসুদ খন্দকার শহীদ জিয়াকে স্বাধীনতার ঘোষক বলায় আওয়ামীপন্থী মুক্তিযোদ্ধারা হৈচৈ শুরু করেন এবং শহীদ জিয়া সম্পর্কে কটুক্তি করেন। তখন এডভোকেট মাসুদ খন্দকার অত্যন্ত সাহসের সাথে তীব্র ভাষায় প্রতিবাদ করেন এবং শহীদ জিয়ার সম্মান অক্ষূন্ন রাখতে দৃঢ় অবস্থানে থাকেন। ফলে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা জিয়ার আদর্শে উজ্জীবিত এবং ছাত্রদল থেকে উঠে আসা একজন পরিপক্ক রাজনীতিক হিসাবে মাসুদ খন্দকার দেশে এবং বিদেশে ব্যাপক আলোচিত হন। তার নিজ এলাকা পাবনা-৩ ,সেখানেও রয়েছে তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা। এলাকাবাসী একরকম ধরেই নিয়েছিলেন তিনিই দলের মনোনয়ন পাবেন।
সাধারণ আলোচনায় বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএনপির ছাত্র রাজনীতি ও দলের ক্রান্তিকালীন সংগঠক হিসাবে পাবনা-৩ এর কৃতি সন্তান এডভোকেট মাসুদ খন্দকার বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের অধিকারী। একইভাবে বিএনপির সাবেক এমপি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জননেতা কে এম আনোয়ারুল ইসলাম এবং সাবেক পৌর মেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা হাসানুল হক হীরা এলাকায় সমধিক পরিচিত । এ সত্তেও পাবনার সুজানগর উপজেলার স্থানীয় রাজনীতিক এবং বাংলাদেশ কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিনকে যখন পাবনা-৩ এ ধানের শীষে প্রার্থী করার কথা বলা হয় তখনই বাধে বিপত্তি। এখানকার মুষ্টিমেয় অধিবাসীরা ছাড়া কোনোভাবেই এটা কেউ মেনে নিতে পারছেন না।
ফেসবুকে মানিক মানিক নামের এক ভদ্রলোক বলেছেন,তুহিন সাহেব সম্প্রতি চাটমোহরের ভোটার হয়েছেন। সুতরাং তিনি এখন স্থানীয় কিন্তু অন্যরা বলছেন এলাকায় তার বা তার বাপদাদার কোনো দিন ঘরবাড়ি ছিলনা,এখনো নাই। ভোটার হওয়া বা টাকার জোরে বাড়ি কিনে স্থানীয় হলেও হতে পারবেন কিন্তু তাকে সবাই রিফুজিই বলবে। তাই দেশনেত্রী খালেদা জিয়া বা দেশনায়ক তারেক রহমান ছাড়া কোনো বাইরের প্রার্থীকে পাবনা-৩ এর মানুষ মেনে নিবে না। এসব কারণে বিএনপির মত একটি শক্তিশালী দল আজ ভঙ্গুর এবং মনোবল হারিয়ে ফেলতে বসেছে।
দলের অনেক নেতা বহিরাগত প্রার্থী প্রত্যাহার করে স্থানীয়দের মধ্যে মনোনয়ন দানের জন্য আহবান জানিয়েছেন। এজন্য চাটমোহর বালুচর মাঠে গণজমায়েতের জন্য ডাক দিয়েছেন তারা। এখানে পাবনা-৩ এর সকল জনপ্রিয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে।
নেতাকর্মীরা বলেন,বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সমন্বয়কারী মো. আব্দুস সালাম সম্প্রতি ভাঙ্গুড়া উপজেলায় জনসভা করেন এবং সেখানে তিনি নিজে উপস্থিত থেকে তুহিনকে তারেক রহমানের প্রার্থী হিসাবে ঘোষনা করেন এবং জেলা বিএনপির সদস্য সচিবকে দিয়ে তারেক রহমানের পক্ষে তুহিনের সাথে কাজ করার জন্য আহবান জানানো হয়। এই আহবান জানানোর পর মাসুদ খন্দকারের লোকজন তুহিনের সাথে কাজ করলেও অন্য নেতাদের সমর্থকরা বাইরে থাকেন। মজার ব্যাপার হলো তুহিন সাহেব নাকি পরে মাসুদ খন্দকারকেই এলাকায় আসতে নিষেধ করেন। কারণ মাসুদ খন্দকারের নামে ব্যাপক ম্লোগান উচ্চারিত হলে তার খারাপ লাগে। এ কথা এখন স্থানীয়দের মুখে মুখে। ফলে সেখানেও রয়ে গেছে ব্যাপক বিভক্তি! সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বহিরাগত প্রার্থী নিয়ে ব্যাপক আপত্তিও উঠে আসছে।
অপরদিকে কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিন প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়ে তারেক রহমানের সাথে ছবি সংযুক্ত করে এলাকায় ব্যাপক পোস্টার লাগিয়েছেন। তিনিও এলাকায় তার লোকজনের সাথে প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন।
এসব কারণে পাবনা -৩ এলাকার মাঠে বিএনপি নানা ভাবে যে বিভক্ত তা এখন স্পষ্ট। স্থানীয়রা বহিরাগত নয়,স্থানীয়দের মধ্যে দলীয় মনোনয়ন চান। এলাকায় বিএনপির নেতা-কর্মীরাও রীতিমত হতাশ। তারাও বিভক্তির বেড়াজালে আটকে বিভক্ত হয়েই মাঠে রয়েছেন। এক পক্ষ অন্য পক্ষকে সহ্য করতে পারছেন না। নেতাকর্মীদের বক্তব্যেই এসব সুষ্পষ্ট হয়ে উঠেছে। স্থানীয় প্রার্থী ছাড়া বিএনপির মধ্যে এই বিভক্তি দূর করা সম্ভব নয় বলে সর্বত্র প্রতীয়মান।
এদিকে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর থেকে জামাতে ইসলামী বাংলাদেশের একক মনোনীত প্রার্থী হিসাবে মাওলানা অধ্যাপক আলী আজগর সক্রীয়ভাবে মাঠে রয়েছেন। সবখানে ঐক্যবদ্ধভাবেই তারা কাজ করছেন। অনেক স্থান থেকেই এখন খবর আসছে স্থানীয় বিএনপি বিভক্তির কারণে প্রতিদিন সাধারণ ভোটাররা জামাতে ভীড়ছেন। জামাতের নেতাকর্মীরাও তাদের প্রার্থীকে জিতিয়ে নেওয়ার জন্য একাট্টা হয়ে মাঠে গণসংযোগ ও প্রচার প্রচারণায় ব্যস্ত রয়েছেন ।
বিএনপির স্থানীয় নেতার পরিবর্তে বহিরাগত প্রার্থীর মনোনয়নের কারণে প্রতিদিন জামাতের ভোট বাড়ছে। আর এ কারণেই পাবনা- ৩ আসনে বিএনপির ভরাডুবি হতে যাচ্ছে বলে ব্যাপক জনশ্রুতি উঠেছে।