বরিশালের হিজলায় মেঘনা নদীর ভাঙন কবলিত এলাকা থেকে অবৈধভাবে ভেকু দিয়ে মাটি কাটার ছবি ও ভিডিও করায় হামলার শিকার হয়েছেন ‘দৈনিক আমার দেশ’ পত্রিকার হিজলা উপজেলা প্রতিনিধি ও হিজলা প্রেসক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়ামিন মোল্লা।সোমবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে উপজেলার মেমানিয়া ইউনিয়নে পশ্চিম ডাইয়া গ্রামের মেঘনা নদীর তীরে এ ঘটনা ঘটে।
ইদ্রিস মাঝি ওরফে মরু নামের এক বিএনপি নেতা তাকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। খবর পেয়ে হিজলা থানাপুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে সাংবাদিক ইয়ামিন মোল্লাকে উদ্ধার করে। ইদ্রিস মাঝি ওরফে মরু গুয়াবাড়িয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন বলে জানা গেছে।
বিএনপি নেতার হামলার শিকার সাংবাদিক ইয়ামিন মোল্লা জানান, উপজেলার মেমানিয়া ইউনিয়নে পশ্চিম ডাইয়া গ্রামটি মেঘনা নদীর ভাঙনের মুখে রয়েছে। প্রতিনিয়তই নদী ভাঙনের শিকার হয়ে ভিটা মাটি সবকিছু হারিয়ে অনেক মানুষ বাস্তুহারা হচ্ছে। নদী ভাঙনের জন্য এলাকাবাসী নদী থেকে অবৈধ ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন ও ইটভাটার জন্য মাটি কাটাকেই দায়ী করেন।
সোমবার সকাল থেকেই গুয়াবাড়িয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইদ্রিস মাঝি ওরফে মরু নিজে দাঁড়িয়ে থেকে তার মেসার্স এস বি সি ব্রিকসের জন্য ভেকু দিয়ে নদীর তীর থেকে মাটি কাটছিলেন। এ সময় এলাকাবাসী তাকে মাটি কাটতে নিষেধ করা সত্ত্বেও তিনি তা কর্ণপাত করেননি। খবর পেয়ে আমার দেশ হিজলা প্রতিনিধি ঘটনাস্থলে গিয়ে মাটি কাটার ছবি তুলেন এবং ভিডিও ধারণ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মেসার্স এস বি সি ব্রিকসের মালিক ও বিএনপি নেতা ইদ্রিস মাঝি ওরফে মরু তাকে মারধর করে ক্যামেরা ও মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখেন।
এসময় ঘটনাস্থলে থাকা এলাকাবাসী তাকে ইদ্রিস মাঝির কাছ থেকে উদ্ধারের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে থানায় ফোন করেন। খবর পেয়ে থানা থেকে সাব ইন্সপেক্টর নুরুসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য এসে সাংবাদিক ইয়ামিন মোল্লাকে উদ্ধার করে। এ সময় ইদ্রিস মাঝি পুলিশের সামনেই পত্রিকায় নিউজ হলে ইয়ামিন মোল্লাকে দেখে নেয়ার হুমকি দেন।
এ বিষয়ে ওই এলাকার অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. খলিলুর রহমান জানান, বিএনপি নেতা ইদ্রিস মাঝি ওরফে মরু যেখান থেকে মাটি কাটছে, ওই জমিটি আমার। অথচ আমার কাছে কোনো কিছু না বলেই জোরপূর্বক মাটি কাটছে মরু। আমি বাধা দিলেও কোনো কর্ণপাত করেননি। ওই এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম কাজী জানান, বিএনপি নেতা মরু জোরপূর্বক আমার মাটি কেটে নিয়ে গেছে। বাধা দেয়ায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে আমার হাতে আঘাত করে রক্তাক্ত জখম করেছেন।
এলাকাবাসী আরো জানায়, গায়ের জোরে ও বিএনপির নেতার পরিচয়ে মরু এলাকায় নানান অপকর্ম করছে। তার ভয়ে কেউ কোনো প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না। এমনকি পুলিশ প্রশাসনও ম্যানেজ করে রাখে মরু নামের ওই বিএনপি নেতা।
এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট দেওয়ান মনির হোসেন বলেন, ইদ্রিস মাঝি ওরফে মরু বিএনপির বর্তমান কোনো কমিটিতে নেই। এমন কোনো ঘটনা ঘটলে তা খতিয়ে দেখে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে হিজলা থানার ওসি (তদন্ত) জাহিদুল ইসলাম আমার দেশকে বলেন, সাংবাদিকের উপর হামলার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক পুলিশ পাঠানো হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই সাংবাদিককে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। এ ঘটনায় অভিযোগ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
সূত্র: আমার দেশ।