পাবনার সাঁথিয়ায় নকল ইঞ্জেকশন পুশ করায় রিপা খাতুনে(২৩)নামে এক কলেজ শিক্ষার্থীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। নিহত রিপা পাবনার সুজানগর উপজেলার দুলাই গ্রামের আব্দুর রহমানের মেয়ে ও পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের মাস্টার্সের ছাত্রী।এ ঘটনায় স্কয়ার ঔষধ কোম্পানীর নাম ব্যবহার করে তৈরি করা নকল ইঞ্জেকশন বিক্রয়ের অপরাধে পাবনার সাঁথিয়ার কাশিনারথপুর কাওসার ফার্মেসির মালিককে বৃহস্পতিবার(২২মে)সন্ধ্যায় ৭০হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সাঁথিয়া উজেলা নির্বাহী অফিসার।
স্থানীয় ও নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে,কলেজ ছাত্রী রিপা খাতুন হঠাৎ অসুস্থ হলে তার পরীক্ষা নিরিক্ষা শেষে শরীরে টাইফয়েড জ্বর ধরা পড়ে। এতে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক ইলিয়াস হোসেনের নিকট নিয়ে গেলে তিনি রিপাকে স্কয়ার কোম্পানীর সেফট্রোন ইঞ্জেকশন ২গ্রাম আইভি শরীরে পুশ করার পরামর্শ দেন। চিকিৎসকের পরামর্শ মতে তার পরোববার পাবনার সুজানগর উপজেলার দুলাই বাজারের মেডিসিন পয়েন্ট থেকে ওই ইঞ্জেকশন ক্রয় করে বুধবার(২১মে) সকালে ইঞ্জেকশনটি রিপার শরীরে পুশ করলে সে কিছুক্ষনের মধ্যে নিজ বাড়িতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।পরে পূর্বে ব্যবহার করা ইঞ্জেকশনের সাথে মিল করলে দেখা যায় আসল ইঞ্জেকশনটির ব্যাচ নং ছিল ৭ ডিজিটের এবং নকল ইঞ্জেকশনটির ব্যাচ নং ছিল ৮ডিজিটের। যেখানে স্কয়ারের আসল ওষুধ হয় ৭ডিজিটের সেখানে পুশ করা ইঞ্জেকশনের ব্যাচ নং রয়েছে ৮ডিজিটের। সেখানে এই গরমিল পাওয়া যায়।
মেডিসিন পয়েন্টের বিক্রয় প্রতিনিধি মৃদুল হোসেন জানান,ওই ইঞ্জেকশনটি তিনি স্কয়ার কোম্পানীর এসআর হাবিবুর রহমান সরকারের নিকট থেকে গ্রহণ করেছিলেন। এস আর হাবিবুর রহমান জানান তিনি সাঁথিয়ার কাশিনাথপুরের কাওসার ফার্মেসির নিকট থেকে ওই ইঞ্জেকশনটি এনে মেডিসিন পয়েন্টে দিয়েছিলেন ।
কলেজ ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনা স্কয়ার কোম্পানীকে অবগত করলে বৃহস্পতিবার (২২মে)কোম্পানীর পক্ষ থেকে পাবনা ড্রাগ সুপারকে বিষয়টি জানানো হয়। ড্রাগ সুপার রোকনুজ্জামান ওই দিনই বিয়টি সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানান। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার রিজু তামান্না ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে কাওসার ফার্মেসির মালিক গোলাম মোস্তফাকে ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই অভিযোগ করেন,কাশিনাথপুরের কাওসার ফার্মেসি কোম্পানীর বাইরে কম দামে বিভিন্ন লটে ওষুধ ক্রয় করেন। তারা কম দামে নকল ওষুধ ক্রয় করে বেশি দামে ক্রেতাদের নিকট বিক্রয় করে থাকেন।
কলেজ ছাত্রীর কাকা ইমরান খান জানান, ভ্রাম্যমান আদালতের জরিমানায় আমরা আশাহত হয়েছি। কাওসার ফার্মেসি নকল ওষুধ বিক্রয় করে মানুষের জীবন নিয়ে ব্যবসা করছে। আমরা তার ব্যবসা বন্ধের দাবী জানাই।
বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক ইলিয়াস হোসেন জানান, ইঞ্জেকশনটি সরাসরি স্কয়ার কোম্পানীর এসআর এর নিকট থেকে সংগ্রহ করা হয়। পরে আমরা কোম্পানীর সাথে যোগাযোগ করলে তারা জানান, ইঞ্জেকশনটি স্কয়ারের নয়। এটি নকল করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে স্কয়ারের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা রেজাউল করিমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, পুশ করা ইঞ্জেকশনটি স্কয়ারের নয়। আমাদের কোম্পানীর নাম ব্যবহার করে ওষুধটি নকল করা হয়েছে। তিনি বলেন, নকল বন্ধে স্কয়ার প্রতিনিয়ত মোরক ও ডিজাইন পরিবর্তন করে থাকেন।
পাবনা ড্রাগ সুপার রোকনুজ্জামান জানান, ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে ফার্মেসির মালিককে ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আমরা স্কয়ার কোম্পানীর এসআর হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানিয়েছি কোম্পানীর নিকট। এছাড়াও কলেজ ছাত্রীর পরিবার চাইলে তারা আইনের আশ্রয় নিতে পারেন।
সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার(ইউএনও) রিজু তামান্না জানান, ‘অভিযোগ পাওয়ার পর কাওসার ফার্মাসিতে অভিযান চালানো হয়। ঘটনাস্থলেই ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে ফার্মেসির মালিকে ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। যা ভ্রাম্যমান আদালতের আইনে সর্বোচ্চ জরিমানা। জনস্বার্থে এ ধরণের অভিযান অব্যাহত থাকবে।’