রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সাবেক উপ-উপাচার্য এবং বর্তমানে বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. আনন্দ কুমার সাহাসহ আওয়ামী লীগের ১৪৮ জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে বিস্ফোরক মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় আরও ৫০০ থেকে ৬০০ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকেও আসামি করা হয়েছে। গত ১২ মে রাজশাহীর বোয়ালিয়া মডেল থানায় মামলাটি করা হয়েছে। বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাক আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলায় গুলি বর্ষণ, ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে গুরুতর জখম, দলবদ্ধভাবে হত্যাচেষ্টা, পথরোধ এবং ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলার বাদী হলেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী সিজান (৩২)। তিনি রাজশাহীর শাহমাখদুম থানার পবাপাড়া এলাকার বাসিন্দা মো. সুলতান সরদার ও মোসা. রেহেনা পারভিন দম্পতির সন্তান।
মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট দুপুর সোয়া ১২টার দিকে সিজানের নেতৃত্বে সাত শতাধিক ছাত্র, শ্রমিক ও সাধারণ মানুষ রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের সামনে থেকে একটি মিছিল নিয়ে রাজশাহী শহরের দিকে রওনা দেন। লক্ষ্য ছিল ‘স্বৈরাচারী সরকার পতন’। মিছিলটি বোয়ালিয়া থানাধীন খরবোনা সাঁকোর কাছে ২৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আরমান আলীর কার্যালয়ের সামনে পাকা রাস্তায় পৌঁছালে আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা আসামিরা তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালান।
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, হামলাকারীরা হ্যান্ড মাইকে ঘোষণা দেন যেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার কেউ প্রাণে না বাঁচে। এরপর ৩ থেকে ৩৯ নম্বর আসামিরা আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে নির্বিচারে গুলি চালাতে থাকেন। ৫ ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এবং ৫ নম্বর আসামি আরমান আলীর কার্যালয়ের সামনে বাদী সিজানকে পেয়ে একাধিক ব্যক্তি ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালান। এতে সিজানের উভয় পায়ের হাঁটুর নিচে গুরুতর জখম হয় এবং তার বাম হাতের কুনইতেও আঘাত লাগে।
সিজান জানান, হামলার পর তিনি গুরুতর আহত অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন এবং তার শরীরে ২২টি সেলাই পড়ে। কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর পরিবারের সদস্য ও সহকর্মীদের সঙ্গে পরামর্শ করে মামলাটি করেন। মামলায় নাম উল্লেখযোগ্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন- রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা খায়রুজ্জামান লিটন, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার, রাজশাহী-২ আসনের সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান বাদশার ছেলে মাহমুদুর রহমান দ্বীপন ও রাবি শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি গোলাম কিবরিয়া।
মামলার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। আমি কখনোই ঘটনাস্থলে ছিলাম না। হয়তো কেউ ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে আমার নাম মামলায় জড়িয়েছে। বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাক আহমেদ বলেন, ১২ মে মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সূত্র: এফএনএস