1. admin@ddnnewsbd.com : admin : ddn newsbd
  2. mamahbubulalom@gmail.com : mahbubul alom : mahbubul alom
শনিবার, ১০ মে ২০২৫, ০৫:৫৮ অপরাহ্ন

বদলগাছী উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্সের বেহাল দশা: স্বাস্থ্যসেবা বঞ্চিত ২ লাখ মানুষ

ডিডিএন ডেস্ক:
  • আপডেটের সময় : রবিবার, ৪ মে, ২০২৫
  • ৬ সময় দর্শন

নওগাঁ জেলার সবচেয়ে ছোট উপজেলা বদলগাছি। এ উপজেলায় ২ লাখ ৬ হাজার ৫৪৭জন মানুষের বসবাস। জেলা সদর থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে প্রত্যন্ত এ উপজেলার মানুষের স্বাস্থ্যসেবার কথা চিন্তা করে ২০০৯ সালে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট এ হাসপাতালটি নির্মাণ করা হয়। কিন্তু বর্তমান উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার অবহেলা ও উদাসীনতায় স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে উপজেলার প্রায় দুই লাখ মানুষ।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, বদলগাছী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কানিস ফারহানা ২০২২ সালের ১৪ মার্চ হাসপাতালে যোগদান করেন। এরপর বিভিন্ন অজুহাতে তিনি কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকেন। তার অনুপস্থিতি ও অবহেলার সুযোগে হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা ভেঙ্গে পড়েছে। চিকিৎসাসেবা নিতে এসে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে রোগীরা।

সূত্র জানায়, হাসপাতালের জনবল কাঠামো অনুযায়ী ১৮ টি মেডিকেল অফিসার (সহকারী সার্জন, প্যাথলজিস্ট, ইমারজেন্সি, ডেন্টালসহ) পদে কর্মরত আছেন ৬ জন। তারাও সময়মতো অফিসে আসেন না। কারণ তারা সবাই নওগাঁ শহরে বাস করেন। দ্বিতীয় শ্রেণির (নার্স) ৩৭ পদে ৩৭জনই কর্মরত আছেন।   তৃতীয় শ্রেণির ৯০ টি পদে আছে ৫৪ জন এবং চতুর্থ শ্রেণির ২৯ পদে আছে ২০ জন।

সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল ১১ টায়ও হাসপাতালে পৌঁছাননি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে রোগীদের ভিড়। জরুরি বিভাগে সেবা দেয়ার জন্য কমপক্ষে তিনজন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও উপস্থিত আছেন একজন চিকিৎসক। রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন  দায়িত্বরত চিকিৎসক।
হাসপাতালে সেবা নিতে আসা জামান হোসেন বাসসকে বলেন, ‘সকাল ৯টায় এসেছি। হাতে ও পায়ে প্রচণ্ড ব্যথা নিয়ে চিৎকার করছি। কিন্তু পাচ্ছি না সেবা। খুবই কষ্টে সময় কাটছে।’

উপজেলার আধাইপুর থেকে জমেলা বেগম এসেছিলেন হাসপাতালে। তার হাত ভেঙ্গে গেছে। কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘অনেকক্ষণ হলো হাসপাতালে এসেছি। কিন্তু কোন ডাক্তার নাই! কি সেবা পাব আমরা?’

উপজেলার স্থানীয় বাসিন্দা কফিল উদ্দীন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কানিস ফারহানা সম্পর্কে বলেন, ‘শুধু কর্মস্থলে অনুপস্থিতিই নয়, তিনি মাসের পর মাস, বছরের পর বছর সরকারি গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেন। উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্সের সরকারি কোয়ার্টারে থাকার নিয়ম থাকলেও তিনি যোগদানের পর থেকেই নওগাঁ শহর থেকে অফিস করেন। আর এভাবেই তিনি সেবা গ্রহীতাদের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দিনের পর দিন, এমন কি মাসের পর মাস ইচ্ছেমতো চাকুরি করে চলেছেন। এসব দেখার কেউ নেই। সরকারি হাসপাতাল থাকা সত্ত্বেও স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এলাকার মানুষ।’

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল ওয়াদুদ কবিরাজ জানান, গত এক বছর ধরে চালকের অভাবে অ্যাম্বুলেন্স সেবা থেকে বঞ্চিত এই উপজেলার অসহায় রোগীরা। ফলে চালকের অভাবে নষ্ট হচ্ছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অ্যাম্বুলেন্সটি। তিনি আরো জানান, গত বছরের ৪ ডিসেম্বর গভীর রাতে হাসপাতালে চুরির ঘটনা ঘটে। এই চুরিতে হাসপাতালের ২ লাখ ২৮ হাজার টাকা চুরি হয়। চোরকে সিসি ক্যামেরায় দেখা গেলেও এই চুরির রহস্য এখনো উদ্ঘাটন করা হয়নি।

বদলগাছীর স্থানীয় বাসিন্দা মিঠু হাসান বলেন, গত বছরের ৪ ডিসেম্বর গভীর রাতে হাসপাতালে চুরির ঘটনা ঘটে। রাতে হাসপাতালে দুইজন নাইট গার্ড থাকার কথা থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে হাসপাতালের বাইরে রাতে নিয়মিত জুয়া খেলার অভিযোগ রয়েছে। তাই ঐ ঘটনার সময় আদৌ কোনো পাহারাদার ছিল কিনা তা নিশ্চিত করে বলা যায় না।

তিনি আরো অভিযোগ করেন, আউটডোরের টিকিট কাউন্টারে রোগীর কাছ থেকে টিকিট বাবদ ৩ টাকা নেওয়ার কথা থাকলেও ৫ টাকা নেয়া হয়। আউটডোরের  চিকিৎসকরা সকাল ৮ টায় আসার কথা থাকলেও আসেন ১১টায়। এসব বিষয়  দেখার বা কথা বলার কেউ নেই।

এসব অভিযোগের ভিত্তিতে ডা. কানিস ফারহানার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাসসকে বলেন, ‘চুরির ঘটনায় থানায় জিডি করা হয়েছে। পুলিশ তদন্ত করছে। তদন্তে চোর ধরা পড়লে মামলা দায়ের করা হবে। কারণ সিসিটিভি’র ফুটেজে চোর চেনা যাচ্ছে না। কাউকে না চিনে মামলা করবো কীভাবে?

এ প্রসঙ্গে বদলগাছী থানার ওসি শাহজাহান আলী বাসসকে বলেন, ‘২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে হাসপাতালে চুরির ঘটনায় থানায় জিডি করা হয়েছে। মামলা করা হয়নি। জিডি পাওয়ার পর সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে পরিষ্কারভাবে চোরদের চেনা যাচ্ছে না। তারা সিসি ক্যামেরাগুলো বাঁকা করে রেখে চুরি করেছে। টিভি ফুটেজে রাত ৩টার দিকে অফিসে প্রবেশ করে দুজনকে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়। তাদের মুখে মাস্ক এবং চোখে চশমা ছিল। পুলিশ এ বিষয়ে তদন্ত অব্যাহত রেখেছে।’

বহির্বিভাগের রোগীদের কাছ থেকে বেশি টাকা নেওয়ার অভিযোগ সম্পর্কে ডা. কানিস বলেন, ‘রোগীদের কাছ থেকে ৩ টাকার টিকিট ৫ টাকা নেওয়ার বিষয়ে অভিযোগ পাওয়ার পর অফিস স্টাফদের নিষেধ করেছি।’

অফিসে অনুপস্থিতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দাপ্তরিক কাজের জন্য মাঝে মাঝে বাইরে থাকতে হয়। তাছাড়া আমি নিয়মিত অফিস করার চেষ্টা করি।’

ব্যক্তিগত কাজে অফিসের গাড়ি ব্যবহার সম্পর্কে কানিস বলেন, ‘এটা একটা প্রকল্পের গাড়ি।  প্রকল্পটি আপাতত বন্ধ থাকায় গত এক বছর ধরে জ্বালানি বাবদ কোন বিল পাইনি। তাই গাড়িটি সচল রাখার স্বার্থে নিজ খরচে ব্যবহার করছি।’

তবে সরকারি গাড়ি ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার করা যায় কিনা এমন প্রশ্ন এড়িয়ে যান তিনি। উপজেলার সরকারি স্টাফ কোয়ার্টারের ভাড়া বেশি হওয়ায় তারা নওগাঁ শহরে কম খরচে থাকেন বলেও জানান ডা. কানিস।

এ বিষয়ে নওগাঁর সিভিল সার্জন ডা. মো. আমিনুল ইসলাম এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাসসকে বলেন, ‘আমি নতুন এসেছি। বিষয়টি দেখছি। আর বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন যাচাই করে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সূত্র: বাসস।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর
২০২০© এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ*
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Smart iT Host