চিকিৎসকের অভাবে ধুঁকছে দেশের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো। সাধারণ মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা থেকে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সেবা দেয়ার স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ৫৯ শতাংশ চিকিৎসক পদই ফাঁকা। পদায়ন করা হলেও উপজেলা পর্যায়ের স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোয় চিকিৎসকরা বেশি দিন থাকতে চান না। বরং তারা ঢাকায় থাকতে আগ্রহী। সেজন্য ঢাকা ও আশপাশের জেলাগুলোর অনেক স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত পদের তুলনায় বেশি চিকিৎসক। তারপরও ঢাকা বিভাগের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোয় পদ শূন্য পড়ে আছে ৪২ দশমিক ৮ শতাংশ। সব মিলিয়ে দেশের উপজেলাভিত্তিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ৫৮ দশমিক ৫ শতাংশ পদে কর্মরত নেই কোনো চিকিৎসক। ফলে অর্ধেকেরও কম চিকিৎসক নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম চালাচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর মধ্যে বরিশাল ও রংপুর বিভাগে সবচেয়ে বেশি পদ শূন্য রয়েছে। বরিশালে ৭৩ দশমিক ৬ শতাংশ পদই শূন্য আর রংপুরে ৭০ শতাংশ পদের বিপরীতে চিকিৎসক নেই। তাছাড়া খুলনা বিভাগে ৬৭ দশমিক ৫ শতাংশ, রাজশাহী বিভাগে ৬৩ দশমিক ৭ শতাংশ, সিলেট বিভাগে ৬১ দশমিক ৬ শতাংশ চিকিৎসক পদ ফাঁকা পড়ে আছে। আর ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রাম বিভাগের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর চিত্র চিকিৎসকের শূন্য পদের হার যথাক্রমে ৫৮ দশমিক ৩ ও ৫১ দশমিক ৬ শতাংশ।
সূত্র জানায়, বেশিরভাগ চিকিৎসক না থাকায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে গ্রামাঞ্চলের মানুষ যথাযথ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরেই এমন চলছে। অনেক স্থানেই কোনো বিশেষজ্ঞ নেই। আর জুনিয়র চিকিৎসকরা প্রাথমিক চিকিৎসার জন্যও রোগীদের জেলা সদর হাসপাতাল কিংবা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। ফলে সদর হাসপাতালগুলোয় সবসময়ই রোগী ভর্তি থাকে সক্ষমতার বেশি। তাছাড়া কিছু ক্ষেত্রে রোগীর তাৎক্ষণিক চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। কিন্তু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে প্রায়ই চিকিৎসক না থাকায় সেবা পেয়ে অনেক রোগীই মৃত্যুবরণ করে। বর্তমানে দিনাজপুর জেলার ১৩টি উপজেলায় ১১টি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ১০২টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র ও ৩০টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। কিন্তু প্রতিটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও সেবা কেন্দ্রেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, কনসালট্যান্ট, সিনিয়র চিকিৎসক, অভিজ্ঞ চিকিৎসকের তীব্র সংকট। আর চিকিৎসকের পাশাপাশি কর্মকর্তা, নার্স ও কর্মচারীও দিন দিন কমে যাচ্ছে। রংপুর বিভাগে উপজেলাভিত্তিক চিকিৎসক পদের সংখ্যা ১ হাজার ১৬১। এর মধ্যে চিকিৎসক রয়েছেন কেবল ৩৪৮ জন। বাকি ৮১৩টি পদই এখন ফাঁকা। সর্বত্রই একই অবস্থা।
এদিকে বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর গত ফেব্রুয়ারিতে পাঁচ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। ইতিমধ্যে বিসিএসের মাধ্যমে দুই হাজার চিকিৎসক নিয়োগের জন্য পাবলিক সার্ভিস কমিশনে চিঠি দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন বিসিএস থেকে আরো সাড়ে তিন হাজার চিকিৎসক নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। সেই সঙ্গে একাডেমিক পদায়নের জন্যও সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করা হচ্ছে।
অন্যদিকে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা জরুরি। গ্রামের মানুষরা সেখান থেকে সেবা পায়। ওই স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোর অধীনে পরিবার-পরিকল্পনাকেন্দ্রিক আরো অনেক কাজ থাকে। জনবল সংকট থাকলে ওই কাজগুলোও বিঘ্নিত হয়। স্বাস্থ্য খাতে জনবল বাড়ানোর ক্ষেত্রে সরকারের সঠিক পরিকল্পনা দরকার।
সূত্র: এফএনএস