বাংলাদেশের গর্ব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষের মিলনমেলা আজ শনিবার। বহুল প্রতীক্ষিত এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন।
সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে শুরু হওয়া বর্ণাঢ্য মিলনমেলা শেষ হবে রাত সাড়ে ৯টায়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণতম শিক্ষার্থী মতিউল ইসলাম। সভাপতিত্ব করছেন ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ. কে. আজাদ।
মিলনমেলার প্রতিপাদ্য- ‘বাংলাদেশের পথযাত্রায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই’। ৯ হাজার ৩৩৭ জন অ্যালামনাই এতে অংশগ্রহণ করার জন্য নিবন্ধিত হয়েছেন। অনুষ্ঠান ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়ে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে।
মিলনমেলা উপলক্ষে কার্জন হলের মূল ভবনের আদলে তৈরি করা মূল ফটকটি সবার নজর কেড়েছে। মিলনমেলা প্রাঙ্গণে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার ছবি স্থাপন করা হয়েছে। মাঠের পশ্চিম পাশে বিশাল প্যান্ডেলের নিচে মূল অনুষ্ঠানের কার্যক্রম চলবে। পূর্ব পাশের প্যান্ডেলে রয়েছে মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন। মাঠের উত্তর-পশ্চিম কোনায় খ্যাতিমান চিত্রশিল্পীদের চিত্রকর্ম প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুরো অনুষ্ঠান একসঙ্গে উপভোগ করার সুবিধার্থে মাঠজুড়ে এলইডি স্ট্ক্রিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্থাপন করা হয়েছে ছোট ছোট তাঁবু, যেখানে অংশগ্রহণকারীরা স্মৃতিচারণ করতে পারবেন।
অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহসভাপতি মোল্লা মোহাম্মদ আবু কাওছার জানান, মিলনমেলাকে ঘিরে গোটা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি রক্ষায় প্রত্যেক অ্যালামনাইকে স্যানিটাইজার ও মাস্ক দেওয়া হচ্ছে। মিলনমেলা স্থলেও পর্যাপ্ত মাস্ক এবং স্যানিটাইজার থাকবে। সকাল-বিকেলে নাশতা ও মধ্যাহ্নভোজের ব্যবস্থা থাকবে। পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। থাকবে দিনভর চা-কফির ব্যবস্থা।
মাঠে পর্যাপ্ত ওষুধ, মেডিকেল সুযোগ-সুবিধাসহ একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। ২২ জন চিকিৎসক স্বাস্থ্যসেবা দেবেন। পুলিশ, বিএনসিসি, রোভার স্কাউট এবং অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে প্রায় ৮০০ জন স্বেচ্ছাসেবক এখানে দায়িত্ব পালন করবেন। যানজট এড়াতে ট্রাফিক পুলিশ থাকবে। শহীদ মিনার ও দোয়েল চত্বর এলাকায় অ্যালামনাইদের গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সকাল সাড়ে ৮টা থেকে মাঠে প্রবেশ করেন অ্যালামনাই ও অতিথিরা। মিলনমেলা উদ্বোধনের পর শত শিল্পীর লাইভ অর্কেস্ট্রা, সংগীত এবং নৃত্য পরিবেশিত হবে। পরে পবিত্র ধর্মগ্রন্থগুলো পাঠ শেষে অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের কার্যনির্বাহী সদস্য মুনিরা খান উপস্থাপন করবেন শোক প্রস্তাব। এর পর শতবর্ষ উপলক্ষে প্রকাশিত গ্রন্থগুলোর মোড়ক উন্মোচন ও ‘শিল্পীর রং তুলিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হবে।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেবেন অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের মুজিব শতবর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কমিটির সমন্বয়ক মোল্লা মোহাম্মদ আবু কাওছার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শতবর্ষ উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী পারভেজ এবং গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ ও অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব রঞ্জন কর্মকার।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেবেন অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি রকীবউদ্দীন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শতবর্ষ উদযাপন কমিটির চেয়ারম্যান সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক এএসএম মাকসুদ কামাল, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শতবর্ষ উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব আশরাফুল হক মুকুল। প্রধান অতিথির ভাষণ দেবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণতম শিক্ষার্থী মতিউল ইসলাম।
পরে ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ. কে. আজাদ সভাপতির বক্তব্য দেবেন।
এর পর ‘বাংলাদেশের পথযাত্রায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই’- এ প্রতিপাদ্য নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠান হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। আলোচনায় অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি এবং খনিজসম্পদ উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, ডাকসুর সাবেক জিএস মতিয়া চৌধুরী, লেখক-রাজনীতিবিদ ইনাম আহমদ চৌধুরী, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক হামিদা আখতার বেগম, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি মীর নাসির, সাবেক এমপি শামসুজ্জামান দুদু এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক রহমত উল্লাহ।
মধ্যাহ্নভোজ শেষে বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষের শত গুণীজন সম্মাননা (মরণোত্তর) দেওয়া হবে। পরে শুরু হবে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে রবীন্দ্র, নজরুল ও হারানো দিনের গান পরিবেশন করবেন শিল্পী অদিতি মহসীন, প্রিয়াঙ্কা গোপ ও হৈমন্তী রক্ষিত। পরে শিল্পী চাঁদনউ, সিনথিয়া, মিম চৌধুরী ও তাদের দল ৬০ ও ৭০ দশকের বাংলা চলচ্চিত্রের গানে নৃত্য পরিবেশন করবেন। এর পর শিল্পী সামিনা চৌধুরী এবং সন্দীপন পরিবেশন করবেন আধুনিক ও পুরোনো দিনের গান।
তাদের পরিবেশনা শেষে রায়বেঁশে নৃত্য নিয়ে আসবেন শিল্পী প্রেমা ও তার দল। এর পর থাকবে শিল্পী সাবিনা ইয়াসমিনের একক সংগীত। পরে গান শোনাবেন বর্তমান প্রজন্মের শিল্পী নিশীতা বড়ূয়া।