জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে ‘কটূক্তি’ করায় সম্প্রতি দল থেকে স্থায়ী বহিষ্কার হয়েছেন গাজীপুর সিটি মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম। এই ঘটনার পরপরই রাজশাহীর কাটাখালি পৌর মেয়র আব্বাস আলী জাতির পিতার ম্যুরাল নির্মাণ নিয়ে কটূক্তির একটি অডিও ক্লিপ ভাইরাল হয়েছে। যা সমালোচনার সৃষ্টি করেছে।
নেতাকর্মীরা মেয়র আব্বাসের বিরুদ্ধে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। তবে ফাঁস হওয়া অডিও ক্লিপ নিজের নয় বলে দাবি করেছেন মেয়র আব্বাস।
গতকাল সোমবার রাত থেকে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নির্মাণ নিয়ে মেয়র আব্বাসের ১ মিনিট ৫১ সেকেন্ডের একটি অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। অডিওটিতে জাতির পিতার ম্যুরাল নির্মাণ ‘ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক নয়’ বলে মেয়র উল্লেখ করেন।
আব্বাস আলী কাটাখালি পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ও জেলার সদস্য এবং নৌকা প্রতীক নিয়ে দুই বারের পৌর মেয়র। অডিওতে তাকে বলতে শোনা যায় যে, ‘মুর্যাল স্থাপন ইসলামের দৃষ্টিতে “পাপ”’, তাই রাজশাহী সিটি গেটে বঙ্গবন্ধুর মুর্যাল না বসানোর নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। মুর্যাল স্থাপন না করার খবর ফাঁস হলে তার রাজনীতির ‘বারোটা বাজবে’ এমন কথাও বলতে শোনা যায় ওই অডিওতে। তবে তিনি কার সঙ্গে এমন কথপোকথন করেছেন তা জানা যায়নি। পুরো অডিওজুড়েই প্রায় তার কথাবার্তাই রয়েছে। তবে সামান্য অংশে অন্যজনের কথাবার্তা শোনা গেলেও তা অস্পষ্ট।
ফাঁস হওয়া অডিওতে আব্বাসকে বলতে শোনা যায়, ‘সিটি গেট আমার অংশে। যে ফার্মকে দিয়েছি তারা বিদেশি স্টাইলে সাজিয়ে দেবে; ফুটপাত, সাইকেল লেন টোটাল আমার অংশটা। কিন্তু একটু থেমে গেছি গেটটা নিয়ে। একটু চেঞ্জ করতে হচ্ছে; যে মুর্যালটা দিয়েছে বঙ্গবন্ধুর সেটা ইসলামী শরীয়ত মতে সঠিক নয়। এজন্য আমি ওটা থুব না, সব করব তবে শেষ মাথাতে যেটা ওটা (মুর্যাল)।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাকে যেভাবে বুঝাইছে আমি দেখতে পাচ্ছি যে মুর্যালটা ঠিক হবে না দিলে; আমার পাপ হবে; তো কেন দেব? দেব না। আমি তো কানা লোক না, যেভাবে বোঝাইছে তাতে আমার মনে হয়েছে মুর্যালটা হলে আমার ভুল করা হবে। এ খবরটা যদি যায় তাহলে আমার রাজনীতির বারোটা বাজবে; এই মুর্যাল দিতে চেয়ে দিচ্ছে না। তাহলে বঙ্গবন্ধুকে খুশি করতে গিয়ে আল্লাহকে নারাজ করব নাকি। এজন্য কিছু করার নেই। মানুষকে সন্তুষ্ট করতে গিয়ে আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করা যাবে না।’ এ ছাড়া আরও কিছু অশালীন কথাবার্তা আছে।
অডিও ক্লিপের বিষয়ে জানতে চাইলে কাটাখালী পৌর মেয়র আব্বাস আলী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘জাতির পিতাকে নিয়ে এমন মন্তব্য প্রশ্নই আসে না। এটি আমার অডিও নয়, ডামি করা হয়েছে।’
রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, ‘মেয়র আব্বাস যদি এই ধরনের কথা বলেই থাকেন, তবে তিনি দলে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতি করবে আর বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি করবে এটা মেনে নেওয়া যাবে না।’
রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অনিল কুমার সরকার বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কটূক্তি করলে তার আওয়ামী লীগ করার অধিকার থাকে না। কাটাখালির মেয়র বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যদি কোনো কটূক্তি করে থাকেন তার বিরুদ্ধে দলীয় ও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
রাজশাহী সিটি মেয়র ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘অডিও ক্লিপের সত্যতা আগে যাচাই করতে হবে। যেই মানুষটিকে কেন্দ্র করে দলের রাজনীতি, তাকে নিয়ে কটূক্তি! অডিওটি আমি শুনেছি। সেখানে আরও অশালীন ভাষা প্রয়োগ করা হয়েছে। তদন্তপূর্বক অতি দ্রুত তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ও আইনি ব্যবস্থা অবশ্যই গ্রহণ করা হবে।’