প্রতিটি হত্যাকান্ডের নির্দেশদাতা হিসেবে নাম উঠে আসে জঙ্গিসংগঠনগুলোর। তবে, আলোচিত হলেও এসব হত্যাকান্ডের তদন্তে ছিলো ধীরগতি। রায় হয়েছে মাত্র একটির। বাকি ছয়টি মামলার বিচারকাজ চলছে এখনো। বিচারে ধীরগতিতে ক্ষুব্ধ ব্লগাররা।
একের পর এক মুক্তমনা লেখক, ব্লগার ও প্রকাশক হত্যাকান্ডে কাঁপন তৈরি হয়েছিলো দেশজুড়ে। শুরুটা ২০১৩ সালে। শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন চলাকালে সেবছরই মিরপুরের নিজ বাসার কাছে জঙ্গিদের চাপাতির আঘাতে নিহত হন ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার। চার বছরের মাথায় দুই জঙ্গির মৃত্যুদণ্ড ও ছয়জনের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয় আদালত।
রাজীব হায়দার নিহত হওয়ার দুই বছরের মাথায় ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় জঙ্গিদের হাতে নিহত হন লেখক ড. অভিজিৎ রায়। ২০১৯ এর মার্চে ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। মামলায় এখন পর্যন্ত ১০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ নেয়া হয়েছে।
এ ঘটনার ৩৪ দিনের মাথায় তেজগাঁও এলাকায় প্রকাশ্যে হত্যা করা হয় ব্লগার ওয়াশিকুর রহমানকে। দেড় বছরেরও বেশী সময় পর ২০১৬ সালে পাঁচ জঙ্গিকে আসামী করে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। যদিও এই মামলাটির বিচার প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
ওয়াশিকুরকে হত্যার চার মাসের মাথায় ২০১৫ সালের ৭ আগস্ট খিলগাঁও এলাকায় নিহত হন আরেক ব্লগার নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়। একই বছরের ৩১ অক্টোবর শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটে জাগৃতি প্রকাশনীর কার্যালয়ে জঙ্গিদের হাতে নিহত হন প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন। এ ঘটনারও চার বছরের মাথায় আট জঙ্গির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।
একই অবস্থা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ব্লগার নাজিম উদ্দিন ও উন্নয়নকর্মী জুলহাজ মান্নান এবং তাঁর বন্ধু নাট্যকর্মী মাহবুব রাব্বী হত্যার ঘটনায়ও। এই দুটি হত্যা মামলা সাক্ষগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে।
ব্লগার রাজীব ও ওয়াশিকুর বাদে সবগুলো ঘটনায় নাম এসেছে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের। বাকি দুটি হত্যাকান্ডেও জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার প্রমান পায় পুলিশ। তবে, ঘটনার এতো বছরেও বিচারকাজ শেষ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন লেখক ও ব্লগাররা।
লেখক ও ব্লগার মারুফ রসুল বলেন, এটা গভীর উদ্বেগের বিষয় যে কেন এখনো একের পর এক ব্লগার হত্যাকান্ডের পরও এই বিচারগুলো দ্রুত সম্পন্ন করা হচ্ছে না। অনেক সময় দেখা যায় সাক্ষীকে ডাকা হচ্ছে না বা সাক্ষী অনেক সময় জানেনও না। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে যিনি মামলাটি লড়ছেন তার পক্ষ থেকে আমরা লক্ষ্য করছি হত্যাকান্ডের সঠিক তারিখটি পর্যন্ত তিনি বলতে পারেন না। এই হত্যাকান্ডের রায়গুলোকে সরকারকে আরও গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা উচিত।
বিচারে ধীরগতির বিষয়ে আইনজীবীরা বলছেন, করোনার আগে নিয়মিত সাক্ষগ্রহণ চললেও মাঝে তা একেবারেই বন্ধ ছিলো।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আবদুল্লাহ আবু বলেন, মামলা দীর্ঘসূত্রতা হওয়ার কারণ হচ্ছে সাক্ষী না আসা। এসব মামলায় আসামীদের ধরতে যাওয়া বা তাদের খোঁজ খবর নিতে যেতে অনেক অনুসন্ধান এবং তদন্ত করতে হয়। এসব কারণেও দেরী হয়ে যায়।
এসব মামলা বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত নিস্পত্তি করার কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা।