দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ৩২৫ দিনের মাথায় এলো মহামারি থেকে মুক্তির আশা-জাগানো মাহেন্দ্রক্ষণ। আজ বুধবার (২৭ জানুয়ারি) দেশে মানুষের শরীরে যাবে কভিড-১৯-এর টিকা। আপাতত বিশ্বব্যাপী এই টিকাই মানুষকে করোনা থেকে সুরক্ষার স্বপ্ন দেখাচ্ছে। বাংলাদেশও সেই সুরক্ষা কবচের আওতায় প্রবেশ করছে।
আজ বিকেল সাড়ে ৩টায় রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে একজন নার্সের দেহে প্রথম টিকা দেওয়া হবে। এ জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে হাসপাতালকে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি টিকা দেওয়ার কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন।
এরই মধ্যে দেশে এসেছে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত ও ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত ৭০ লাখ চার হাজার ডোজ ‘কোভিশিল্ড’ টিকা। প্রথমে ২০ জানুয়ারি এসেছে ভারত সরকারের পাঠানো ২০ লাখ চার হাজার ডোজ উপহারের টিকা এবং গত সোমবার এসেছে সরকারি টাকায় কেনা তিন কোটি টিকার প্রথম চালানের ৫০ লাখ ডোজ।
এদিকে ভারতের উৎপাদিত করোনার টিকা নেয়া না নেয়ার প্রশ্নে দেশের অনেক মানুষের মাঝেই এক ধরনের সংশয় বা আস্থার অভাব দেখা যাচ্ছে। টিকা নিলে কী ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে সেটা নিয়ে উৎকণ্ঠিত অনেকেই।
ভারতে গত ১৬ জানুয়ারি করোনাভাইরাসের টিকা দেবার কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর ১৯ তারিখ পর্যন্ত টিকার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় ছয়শ জনের মতো অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ইতোমধ্যেই একজন মারাও গেছেন। অন্য যেসব দেশে টিকা দেয়া শুরু হয়েছে সেসব দেশ থেকেও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কিছু খবর আসছে। টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে তাই বাংলাদেশেও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে জ্বর, মাথাব্যথা, এবং বমিভাব।
যাদের জ্বর বা অ্যালার্জি আছে, যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম কিম্বা যারা এমন কোন ঔষধ খাচ্ছেন যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রভাবিত করে তাদের টিকা না নিতে ভারতের তরফে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী যা বলছেন
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রী জাহিদ মালেক টিকার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে গত ১৯ জানুয়ারি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ‘যে কোনো ভ্যাকসিনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকতে পারে যেভাবে ঔষধের প্রতিক্রিয়া থাকে। তারপরও আমরা ভ্যাকসিন নিচ্ছি দীর্ঘকাল যাবত। কাজেই এখানেও রিঅ্যাকশন হতে পারে। ইতোমধ্যেই আমাদের সিদ্ধান্ত নেয়া আছে যে যেসব হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে টিকা দেবার ব্যবস্থা করা হয়েছে, কেউ যদি অসুস্থ বোধ করে তাদের চিকিৎসা দেয়ার ব্যবস্থা আমরা করেছি।’
এই চিকিৎসার ব্যবস্থা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর করবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হলে যে পদক্ষেপ নেয়া হবে
টিকা নেবার পর কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হলে কী করা হবে, টিকার মান নিয়ন্ত্রণ এবং কার্যকারিতা নিশ্চিত করা বিষয়ক ১৭ পৃষ্ঠার একটি প্রোটকল প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
তাতে বলা আছে টিকা যারা নিচ্ছেন তাদের উপর কী প্রতিক্রিয়া হয় তা পর্যবেক্ষণ করা হবে। কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে যেখান থেকে টিকা দেয়া হয়েছে সেখানে জানাতে হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে একটি ফর্ম পাওয়া যাবে। সেখানেও জানানো যাবে।
এছাড়া যেসব হাসপাতালে টিকা দেয়া হবে তার সবগুলোতে একজন করে কর্মকর্তা থাকবেন যার দায়িত্ব হবে কারো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে সে সম্পর্কে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে জানানো।
কেন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হচ্ছে সেটি তদন্ত করে দেখা হবে। কোন পদের কর্মকর্তারা সেটি করতে পারবেন সেটিও সুনির্দিষ্ট করে বলা আছে।
তবে সকল পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার ঘটনা তদন্ত করা হবে না। যেসব ক্ষেত্রে প্রতিক্রিয়া গুরুতর, মৃত্যু এবং হাসপাতালে ভর্তির বিষয় রয়েছে শুধু সেগুলো তদন্ত করা হবে।
কোন গ্রামে দুই বা তার বেশি ব্যক্তির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হলে সেখানেও তদন্ত করা হবে। তবে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার সকল ঘটনা নথিভুক্ত করা হবে।
যিনি টিকা নিয়েছেন তিনি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানানোর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত শুরু করতে হবে এবং ৭২ ঘণ্টার মধ্যে প্রাথমিক প্রতিবেদন দিতে হবে।
টিকায় পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হলে চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, প্রোটকলে সেটিও বলা আছে।