নিজস্ব প্রতিবেদকঃ অগ্নিনিরাপত্তা ও সুরক্ষাব্যবস্থার আরও আধুনিকায়ন ও বিশ্বমানের প্রশিক্ষণের লক্ষ্যে প্রথমবারের মতো প্রতিষ্ঠা হতে যাচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধু ফায়ার একাডেমি’। ঢাকার সন্নিকটে জেলা মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের এই বঙ্গবন্ধু ফায়ার একাডেমি। যেখানে অফিসার ও ফায়ারম্যানের বেসিক ও অ্যাডভান্স কোর্স সম্পন্ন হবে। এ ছাড়াও এই একাডেমিতে গড়ে তোলা হবে বিশ্বমানের ফায়ার ফরেনসিক ল্যাব। সবকিছু ঠিক থাকলে শিগগিরই শুরু হবে অবকাঠামোগত উন্নয়নের কার্যক্রম। এ প্রসঙ্গে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইন সময়ের আলোকে বলেন, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স একটি সুশৃঙ্খল সেবামূলক সংস্থা। অগ্নিনির্বাপণ ও অগ্নিপ্রতিরোধসহ যেকোনো ধরনের দুর্যোগ-দুর্ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকে। এ সংস্থার আধুনিকায়ন ও দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সেবা কার্যক্রমগুলো বিশ্বমানের করার লক্ষ্যেই প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধু ফায়ার একাডেমি’। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসাইন আরও বলেন, মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় ১০০ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠা করা হবে বঙ্গবন্ধু ফায়ার একাডেমি। সরকার এই একাডেমি প্রতিষ্ঠা বাবদ ইতোমধ্যেই ২৫০ কোটি টাকা অনুমোদন দিয়েছে। এরপরই গজারিয়ার সম্ভাব্য ওই এলাকায় ৪ ধারায় জমি অধিগ্রহণের নোটিসও জারি করা হয়েছে। দ্রুত সার্বিক কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে আগামী বছরেই এই বঙ্গবন্ধু ফায়ার একাডেমিতে চালু করা হবে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন ডিপ্লোমা (পিজিডি)।
এ ছাড়াও এখানে ‘মাস্টার্স ইন ফায়ার সায়েন্স’ কোর্সও চালুর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ফলে এই কার্যক্রমগুলো বাস্তবায়ন করা গেলে বঙ্গবন্ধু ফায়ার একাডেমি হবে আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠান। সংশ্লিষ্টরা জানান, বঙ্গবন্ধু ফায়ার একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড অনুসারে। এখানে প্রতিষ্ঠা করা হবে ‘ফায়ার ফরেনসিক ল্যাব’। যা থেকে অগ্নিকাণ্ডের পর সেখানকার ছাই বা আলামত পরীক্ষার মাধ্যমে আগুন লাগার সঠিক কারণ জানা যাবে। এখন পর্যন্ত দেশে এই অত্যাধুনিক ব্যবস্থাটি নেই। স্মরণকালের ভয়াবহ সাভারের রানা প্লাজা ধস, নিমতলী, চুড়িহাট্টা ও তাজরীন ফ্যাশনে অগ্নিকাণ্ডসহ দেশের অনেক স্থানে বড় বড় বিপর্যয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মীদের নিরলসভাবে মানুষের জানমাল রক্ষায় কাজ করতে দেখা যায়। কিন্তু বড় অগ্নিকাণ্ড ও দুর্যোগ-দুর্ঘটনাগুলোয় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ফায়ার সার্ভিসের অত্যাধুনিক ব্যবস্থার অনেক ঘাটতি উপলব্ধি করেন সাধারণ মানুষও। ওইসব ঘটনার সময় ফায়ার সার্ভিসের আধুনিকায়ন ও দক্ষতা বৃদ্ধির বিষয়গুলো অনেক বেশি আলোচিত হয়। তবে বঙ্গবন্ধু ফায়ার একাডেমি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সেই সক্ষমতা অর্জন করবে বলেই মনে করছেন অগ্নি ও দুর্যোগ বিশেষজ্ঞরা।
এ প্রসঙ্গে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আলী আহমেদ খান সময়ের আলোকে বলেন, মানুষের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার জন্য ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সকে অবশ্যই বিশ্বমানের করে গড়ে তুলতে হবে। ফায়ার একাডেমি প্রতিষ্ঠার বিষয়টি সময়েরই দাবি। কেননা সব ধরনের প্রস্তুতি থাকলে যেকোনো ধরনের বড় দুর্যোগও মোকাবিলা করা যাবে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ফায়ার একাডেমিতে অফিসার, ফায়ারম্যান, স্বেচ্ছাসেবী ফায়ারম্যানসহ বিভিন্ন বাহিনী ও প্রতিষ্ঠানও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা অর্জন করতে সক্ষম হবে। এটা করা গেলে অবশ্যই আমাদের বড় দুর্যোগেও ছোট ক্ষয়ক্ষতি হবে। মানুষের জানমাল রক্ষা করা যাবে। ফায়ার সার্ভিসের সাবেক এই মহাপরিচালক আরও বলেন, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স আগে থেকেই অনেক অবহেলিত। বর্তমান সরকারের নানা উদ্যোগের পর কার্যক্রমে কিছুটা গতি বেড়েছে। আধুনিক কিছু সরঞ্জামও বেড়েছে। কিন্তু এটা যথেষ্ট নয়। এখানে মন্ত্রণালয়ে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও গুরুত্ব কম দেওয়ার একটি প্রবণতা রয়েছে। মন্ত্রণালয়কে ফায়ার সার্ভিসের উন্নয়নে আরও বেশি আন্তরিক হতে হবে। তাহলেই দ্রুততম সময়ের মানুষ এর সুফল ভোগ করতে পারবে।