বিশ্বশান্তি রক্ষার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সুদানে ড্রোন হামলায় নিহত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ছয় সদস্যের মরদেহ দেশে পৌঁছেছে। দীর্ঘ আকাশপথ পাড়ি দিয়ে নিথর দেহে মাতৃভূমিতে ফিরলেন জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে কর্মরত এই বীর সেনারা। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাদের জানাজা ও দাফনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
শনিবার (২০ ডিসেম্বর ২০২৫) সকাল সোয়া ১১টার কিছু আগে শহীদ শান্তিরক্ষীদের মরদেহ বহনকারী বিমানটি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাংলাদেশ সময় শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর ২০২৫) সন্ধ্যা ৭টায় উগান্ডার এন্টেবে বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে উড়োজাহাজটি।
এই মর্মান্তিক ঘটনার পেছনের প্রেক্ষাপট আরও বেদনাবিধুর। শনিবার (১৩ ডিসেম্বর ২০২৫) সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের আওতাধীন কাদুগলি লজিস্টিকস বেইসে আকস্মিক ড্রোন হামলা চালায় একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠী। স্থানীয় সময় বিকেল ৩টা ৪০ মিনিট থেকে ৩টা ৫০ মিনিটের মধ্যে চালানো এই হামলায় ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান ছয়জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী।
নিহত ছয় বীর শান্তিরক্ষী হলেন করপোরাল মো. মাসুদ রানা (নাটোর), সৈনিক মো. মমিনুল ইসলাম (কুড়িগ্রাম), সৈনিক শান্ত মণ্ডল (কুড়িগ্রাম), সৈনিক শামীম রেজা (রাজবাড়ী), মেস ওয়েটার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম (কিশোরগঞ্জ) এবং লন্ড্রি কর্মচারী মো. সবুজ মিয়া (গাইবান্ধা)। তাদের মরদেহ দেশে ফেরার সময় বিমানবন্দরে শোকের আবহ নেমে আসে।
হামলায় আহত আরও আটজন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী বর্তমানে কেনিয়ায় চিকিৎসাধীন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আহতদের দ্রুত নাইরোবির আগা খান ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। তারা সবাই শঙ্কামুক্ত রয়েছেন। আহতদের মধ্যে সৈনিক মো. মেজবাউল কবিরের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তার অস্ত্রোপচার করা হয়েছে এবং তিনি নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। অন্যদের মধ্যে একজন চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল ছেড়েছেন।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সূত্র জানায়, আহতদের শারীরিক অবস্থার ওপর নিয়মিত নজর রাখা হচ্ছে এবং প্রয়োজনে আরও উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালনকালে এই ধরনের হামলা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে গভীর উদ্বেগ তৈরি করেছে।
১৯৮৮ সালে মাত্র ১৫ সদস্য নিয়ে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নেওয়া বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের ১১৯টি দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ। তবে এই দীর্ঘ পথচলায় ত্যাগের ইতিহাসও কম নয়। এ পর্যন্ত জাতিসংঘ মিশনে বাংলাদেশ সেনা, নৌ, বিমান ও পুলিশ বাহিনীর মোট ১৬৮ জন সদস্য বিশ্বশান্তির জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। সুদানের আবেই এলাকায় ঝরে যাওয়া এই ছয়টি প্রাণ সেই ত্যাগের তালিকায় নতুন করে যুক্ত হলো।