রাজধানীর মিরপুরের রূপনগরের শিয়ালবাড়ি এলাকায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১৬ জনের প্রাণহানির পরও এলাকায় এখনো ধোঁয়া বের হচ্ছে। কেমিক্যাল মজুত করা ভবনটিতে আগুন নেভানো গেলেও বিষাক্ত গ্যাসের প্রভাবে আশপাশের অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। ফায়ার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, মৃতদের বেশিরভাগই ধোঁয়ায় শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা গেছেন।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত কেমিক্যাল গোডাউন থেকে এখনো ধোঁয়া বের হচ্ছে। পাশের রাইজিং ফ্যাশন নামের একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা জানান, সকালে কাজে এসে তারা কেমিক্যালের গ্যাসে অসুস্থ হয়ে পড়েন। অনেকে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে যাচ্ছেন।
রাইজিং ফ্যাশনের শ্রমিক মো. আল আমিন বলেন, “গোডাউন থেকে নির্গত কেমিক্যালের বিষাক্ত গ্যাসে পুরো গার্মেন্টস ভরে ছিল। সকালে ঢোকার পরই অনেকেই মাথা ঘোরা, বমি আর শ্বাসকষ্টে ভুগতে শুরু করেন।”
ফায়ার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে রূপনগরে ওই কেমিক্যাল গোডাউন ও পোশাক কারখানায় আগুন লাগে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের প্রথম ইউনিট ১১টা ৫৬ মিনিটে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং একে একে ১২টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। ভবনটিতে বিপুল পরিমাণ দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুন নেভাতে বেগ পেতে হয় ফায়ারকর্মীদের।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ জাহেদ কামাল মঙ্গলবার রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে বলেন, “আগুন নির্বাপণ হয়েছে, তবে পুরো শঙ্কা কাটেনি। ভবনের গঠন দেখে মনে হচ্ছে, কোনো বিল্ডিং কোড অনুসরণ করা হয়নি। কেমিক্যাল থেকে আবারও আগুন লাগার আশঙ্কা রয়ে গেছে।”
তিনি আরও বলেন, “বারবার সতর্ক করা সত্ত্বেও আবাসিক এলাকায় কেমিক্যাল গুদাম স্থাপন করা হচ্ছে। আমরা চাই না এই ধরনের মর্মান্তিক ঘটনার পুনরাবৃত্তি হোক।”
এদিকে, নিহতদের প্রতি শোক জানিয়ে মঙ্গলবার রাতে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি প্রত্যেক নিহত শ্রমিকের পরিবারকে এক লাখ টাকা করে আর্থিক সহায়তার ঘোষণা দেন। তার ভাষায়, “যারা এখানে প্রাণ হারিয়েছেন, তারা সবাই পরিশ্রমী শ্রমিক। এই শোক শুধু তাদের পরিবারের নয়, পুরো জাতির।”
অগ্নিকাণ্ডে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও। এক শোকবার্তায় তিনি বলেন, “এই ধরনের হৃদয়বিদারক ঘটনা বারবার ঘটে, যা শোকের পাশাপাশি বহু প্রশ্নের জন্ম দেয়। কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।” তিনি সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনার আহ্বান জানান।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও আলাদা এক বিবৃতিতে বলেন, “অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের এমন ঘটনা বারবার ঘটছে, কিন্তু এর কোনো স্থায়ী সমাধান দেখা যায় না। নিরাপত্তা নিশ্চিতে স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।”
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া তিনজন দগ্ধ শ্রমিককে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
সূত্র: এফএনএস।