1. admin@ddnnewsbd.com : admin : ddn newsbd
  2. mamahbubulalom@gmail.com : mahbubul alom : mahbubul alom
মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:৫০ পূর্বাহ্ন

বন্যা আতঙ্কে তিস্তাপাড়ের লাখো মানুষের নির্ঘুম রাত

ডিডিএন নিউজ ডেস্ক:
  • আপডেটের সময় : মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবর, ২০২৫
  • ৩৩ সময় দর্শন

ভারত বিনা নোটিশে গত রোববার সন্ধ্যায় গজলডোবা বাঁধের সবগুলো গেট খুলে দিয়েছে। সম্প্রতি সিকিম, দার্জিলিং ও জলপাইগুড়িসহ ভারতের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে টানা বৃষ্টির পর তিস্তা ব্যারেজের ৮৫ কিলোমিটার উজানে অবস্থিত এ বাঁধ খুলে দেয় ভারত। এতে তিস্তা পাড়ের ৩০ গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। বন্যা আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে এসব অঞ্চলের মানুষ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গজলডোবা বাঁধের গেটগুলো খুলে দেওয়ায় তিস্তা তীরবর্তী এলাকার নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চল গত রোববার রাতেই প্লাবিত হয়। স্থানীয় মানুষজন গরু-ছাগল নিয়ে স্পার বাঁধসহ উঁচু এলাকায় রাত কাটায়। পানি বাড়তে থাকায় নতুন নতুন লোকালয়ও প্লাবিত হচ্ছে। এসব এলাকার সড়কের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় যেকোনো সময় রাস্তাঘাট ধসে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হতে পারে। এছাড়া হুমকির মুখে পড়েছে এলাকার নানা ধরনের স্থাপনা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কোনো ধরনের আগাম তথ্য না দিয়ে একতরফাভাবে গজলডোবা ব্যারেজের সবগুলো গেট খুলে দিয়েছে ভারত। তিস্তা ব্যারেজ কন্ট্রোল রূম ও বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, এ বিপুল পরিমাণ পানি ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে আগে থেকে তাদের কিছু জানা ছিল না।

পানি-আগ্রাসী ভারত বরাবরই বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করে চলেছে। শুষ্ক মৌসুমে শুকিয়ে মারে ভাটির দেশ বাংলাদেশকে। আর কোনো কারণে নদ-নদী প্লাবিত হলে নিজেদের বন্যামুক্ত রাখতে অকাতরে পানি ছেড়ে ভাসিয়ে দেয় তিস্তাপাড়ের লাখ লাখ মানুষকে।

জানা গেছে, রোববার সন্ধ্যা ৬টায় তিস্তার ডালিয়া ব্যারেজ পয়েন্টে পানিপ্রবাহ বাড়তে শুরু করে। সে সময় পানি বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপরে রেকর্ড করা হয়। রাত ৯টায় সেটি ৩৩ সেন্টিমিটার এবং রাত ১২টায় ৩৫ সেন্টিমিটারের ওপরে গিয়ে দাঁড়ায়। গতকাল সোমবার সকালে উজানে পানি কিছুটা কমলেও ভাটি এলাকার বিস্তীর্ণ জনপদে পানি হুহু করে বাড়ছে। তীব্র স্রোতে পানি নতুন নতুন লোকালয়ে প্রবেশ করছে। পানির তোড়ে এলাকার বিভিন্ন স্থাপনা ও কৃষিক্ষেতের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

নদী পাড়ের বাসিন্দারা জানান, পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে তিস্তা নদীর বাম তীরে লালমনিরহাট জেলার নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়েছে। ক্ষেতে পানি উঠেছে। পরিবারগুলো পানিবন্দি হয়ে পড়ছে। ইতোমধ্যেই চরাঞ্চলের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

তিস্তা এলাকার বাসিন্দা কফিল উদ্দিন বলেন, গত রোববার সন্ধ্যার পর থেকে পানি ঢুকতে শুরু করে। রাতেই বাড়িতে বুকসমান পানি উঠে যায়। গরু-ছাগল নিয়ে কোনোরকমে উঁচু রাস্তায় অবস্থান নিয়েছি।

হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী চরের মোবারক আলী বলেন, পরিবার-পরিজন নিয়ে আমরা অনেক কষ্টে রাত পার করেছি। পাশের উঁচু রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছি। সর্বনাশা তিস্তা আমাদের বারবার আঘাত করছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এরই মধ্যে পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম, শ্রীরামপুর, পাটগ্রাম পৌরসভা, হাতীবান্ধার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, ডাউয়াবাড়ী, সিঙ্গীমারী, পাটিকাপাড়া, সিন্দুর্না, কালীগঞ্জের কাকিনা, তুষভান্ডার, চন্দ্রপুর, আদিতমারীর মহিষখোচা, দুর্গাপুর, পলাশী, লালমনিরহাট সদর উপজেলার গোকুন্ডা, রাজপুর, মোঘলহাট, কুলাঘাট ও খুনিয়াগাছ ইউনিয়নে পানি ঢুকে পড়েছে। ডুবে গেছে কয়েক হাজার হেক্টর জমির ধান, সবজি বিনষ্ট হয়েছে। এছাড়া বন্যার পানিতে ভেসে গেছে কয়েক হাজার পুকুরের মাছ।

এ পরিস্থিতিতে নিদারুণ কষ্টে পড়েছে পানিবন্দি পরিবারগুলো। বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীদের নিয়ে বিপাকে পড়েছেন বন্যাকবলিতরা। গবাদিপশু নিয়েও অনেকে আছে টেনশনে। কেউ কেউ এসব পশুকে সড়কে বা উঁচু এলাকায় তাঁবুর নিচে রেখেছেন। টিউবওয়েল-টয়লেট ডুবে যাওয়ায় চরম বিড়ম্বনায় পড়েছেন এসব এলাকার নারীরা।

এদিকে তিস্তার পানি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে লালমনিরহাটের হাতিবান্ধায় অবস্থিত দেশের সবচেয়ে বড় সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি জলকপাট ২৪ ঘণ্টা খুলে রাখা হয়েছে। তারপরও পানি পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছে না পাউবো কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে পানিবন্দি অবস্থায় আছেন লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলার তিস্তা পাড়ের লাখো মানুষ। পানির চাপে ঝুঁকিতে পড়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলো। বিশেষ করে আদিতমারী উপজেলার সোলেদি স্পার বাঁধ-২-এর ব্রিজ অংশের নিচে গর্ত তৈরি হয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে বাঁধটিও ধসে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

তিস্তা নদী সংলগ্ন গড্ডিমারী গ্রামের সাবেক স্কুলশিক্ষক শহিদার রহমান বলেন, ভারতের গজলডোবা ব্যারেজ বাংলাদেশের মানুষের জন্য একটি বিষফোঁড়া, কারণ এটি তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এ কারণে বাংলাদেশে শুষ্ক মৌসুমে দেখা দেয় পানি সংকট। আবার বর্ষা মৌসুমে ব্যারেজ খুলে দেওয়ায় বাংলাদেশে বন্যার শিকার হয়।

ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী বলেন, সোমবার সকাল ৬টায় তিস্তার পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। সকাল ৯টায় পানি কিছুটা কমে গিয়ে বিপৎসীমার তিন সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

দহগ্রামের বাসিন্দা মালেকা বেগম বলেন, রাস্তাঘাট ডুবে গেছে, আমাদের পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। সময় যত যাচ্ছে, পানি ততই বাড়ছে। কারণ উজানের ঢল এখন ভাটিতে চলে এসেছে। গত রাতে পানি বাড়িতে ঢুকে গেছে, সারা রাত গরু-ছাগল নিয়ে জেগে ছিলাম। অনেক কষ্টে আছি। ভারত পানি ছাড়িয়া আমাদের তামাশা দেখে।

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. শায়খুল আরিফিন বলেন, তিস্তা তীরবর্তী এলাকায় এখন রোপা আমন, চিনাবাদাম ও সবজির চাষ চলছে। পানি যদি তিন থেকে চার দিন স্থায়ী হয়, তাহলে কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতি হবে। দুয়েকদিনের মধ্যে পানি নেমে গেলে অবশ্য ক্ষতি তুলনামূলক কম হবে।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার জানান, কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টিপাত এবং উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে তিস্তার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। তীরবর্তী এলাকাগুলোর মানুষকে এ ব্যাপারে প্রস্তুত থাকার কথা বলা হয়েছে। আমরা নিবিড়ভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচএম রকিব হায়দার বলেন, উজানের ঢল আর বাংলাদেশের কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। বন্যা মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের সব প্রস্তুতি রয়েছে।

সূত্র: আমার দেশ।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর
২০২০© এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ*
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Smart iT Host