ডেস্ক : নিম্নমাধ্যমিক,মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি প্রবিধানমালা সম্প্রতি সংশোধন করে বলা হয়েছে, এখন সরকারি কর্মকর্তা ছাড়া কেউ সভাপতি হতে পারবেন না। সেখানে আরো বলা হয়েছে ৯ম গ্রেডের নিম্নে নয় এমন কোনো সরকারি কর্মকর্তা অথবা ৫ম গ্রেডের নিচে নয় এমন কোনো আগ্রহী অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সভাপতি হবেন। এখানের ব্যাখ্যায় আরো বলা হয়েছে সভাপতি সরকারি কর্মকর্তা এবং যদি শিক্ষক হন তাহলে তাকে সর্ব নিম্ন সহকারী অধ্যাপক হতে হবে। একজন সহকারী অধ্যাপকের গ্রেড ৬, অথচ ৯ম গ্রেডের সরকারি কর্মকর্তা সভাপতি হতে বাধা নেই, বাধা কেবল প্রভাষকের। অথচ সরকারি কলেজের একজন প্রভাষকও ৯ম গ্রেডের। ৯ম গ্রেডের অফিসার সহকারী অধ্যাপকের দুই ধাপ নিচের। এটা কোন ধরণের সাম্যতা, শিক্ষক সমাজ জানতে চায় ! ভুক্তভোগী প্রধান শিক্ষকগণও এই প্রবিধান নিয়ে রীতিমত বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন।
২০২৪ এর গণ অভ্যুথ্থানের মূল চেতনাই ছিল বৈষম্য দূরীকরণ। ২০২৫ এসে আবার সেই বৈষম্য কেন ? এমন প্রশ্নও শিক্ষক সমাজের । গ্রামের বেশির ভাগ স্কুল উপজেলা শহর থেকে দূরবর্তী এলাকায় অবস্থিত। সভাপতির ক্ষেত্রে নতুন প্রবিধানে প্রধান শিক্ষকদের সভাপতির একটা স্বাক্ষরের জন্য রোজ দৌড়াতে হবে উপজেলা পরিষদের সরকারি কর্মকর্তাদের কাছে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট অফিসারগণ নিজের অফিসের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন নাকি ঐসব বিদ্যালয়ের সমস্যা সমাধান করবেন !
৫ম গ্রেডের সরকারি কর্মকর্তা অবসর নিয়ে গ্রামে থাকেন এমন নজির খুবই কম। এটা মন্ত্রণালয়ও ভালো করে জানে। তারপরও কেন এই নিয়ম- এটা শিক্ষক সমাজের জিজ্ঞাসা ? স্কুল-কলেজের সভাপতি শিক্ষিত ব্যক্তি হবেন খুব ভালো কথা কিন্তু তাই বলে যারপর নেই বৈষম্য ! এটা কখনোই কল্যাণকর হবে বলে মনে হয়না। বর্তমানে স্কুল কলেজের সকল নিয়োগ এনটিআরসি’র হাতে চলে গেছে তবুও এত জটিল প্রক্রিয়া কেন?
এটা নিয়ে শিক্ষকদের সবারই মন খারাপ। সভাপতি উচ্চ শিক্ষিত হবেন, এতে কারো আপত্তি নেই। তবে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তার ক্ষেত্রে সহজলভ্য করা দরকার। একটা উপজেলা প্রশাসনে সর্বোচ্চ কর্মকর্তা হলেন ইউএনও,যিনি সিনিয়র সহকারী সচিব পদমর্যাদার। তিনি যদি একই মানের সকল প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হতে পারেন তাহলে একই গ্রেডের অবসর প্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা কেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হতে পারবেন না ? শিক্ষকের ক্ষেত্রেই বা আলাদা নিয়ম কেন? সরকারি কলেজের শিক্ষকরা কি কর্মকর্তা মর্যাদার নন!
এছাড়া ৯ম গ্রেডের একজন অফিসার যদি সভাপতি হতে পারেন,তিনি তো ইউএনও’র অনেক নিচের গ্রেডের অফিসার ! অবসরপ্রাপ্তদের ক্ষেত্রে যদি আপ- গ্রেডেশনের দরকার মনে করা হয় তাহলে ৯ম গ্রেডের চেয়ে সিনিয়র সহকারী সচিব মর্যাদা তো কয়েক ধাপ উপরেই রয়েছে। আমাদের বিশ্বাস মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকগণ বিষয়টি বুঝবেন এবং দ্রুত এর সংশোধন করে অবসরপ্রাপ্তদের( জেনারেল এবং শিক্ষক) উভয় ক্ষেত্রে সিনিয়র সহকারী সচিব মর্যাদার গ্রেড নির্ধারণ করবেন। তবেই বৈষম্য দূর হবে এবং যা হবে প্রকৃত জুলাই গণআন্দোলনের স্বপক্ষের নীতিমালা।