মেহেদী হাসান : একটি স্থানীয় অনলাইন পত্রিকায় “ ভাঙ্গুড়ার ইউএনও নাজমুন নাহারের স্বেচ্ছাচারিতা ও কোটি টাকার অনিয়ম” শিরোনামের সংবাদটি ইউএনও নিজে শেয়ার করে তার প্রতিবাদ জানিয়ে সংবাদটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত,মিথ্যা ও বানোয়াট দাবি করেছেন। তিনি নিজে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট এর তদন্তেরও দাবি জানিয়েছেন। ইউএনও নাজমুন নাহার সেখানে আরো বলেন,ভাঙ্গুড়ার সচেতন মহলের পাশাপাশি প্রতিটি সাধারণ মানুষ জানেন কতটা নিরপেক্ষভাবে তিনি সেবা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তিনি আরো বলেন,শুধুমাত্র ঈশ্বার্নিত ভাবে ও হীন মানসিতার মানদন্ডে অসম্মানিত করার অভিপ্রায়ে সংবাদটি প্রচার করা হয়েছে। যা ভাঙ্গুড়াবাসী মেনে নিবে না বলে তার বিশ্বাস রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গক্রমে সংবাদটি পাঠ করার পর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে ইউএনও মহোদয়ের প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে ফেসবুকে শেয়ার করা পোস্টটি দেখলাম। সেখানে অসংখ্য মানুষ কমেন্টস করেছেন। রবিবার বিকাল ৪.২০ মিনিটে (৭ সেপ্টেম্বর,২৫)পর্যন্ত উহা ২৬৮জন কমেন্টস ও ৩ জন শেয়ার করেছেন।
সেখানে সবাই ইউএনও’র বিরুদ্ধে প্রকাশ করা ঐ সংবাদের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছেন। কেবল তাই নয়,সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদককে এ ধরনের মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ হতে বিরত থাকারও পরামর্শ দিয়েছেন। ফেসবুকে মিয়া জগতের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এখানে কোনো কিছু উপস্থাপন করা হলে তা কষ্টি পাথরে যাচাই-বাছাই হয়,তারপর ষড়যন্ত্রকারীর মুখের ওপরেই তা নিক্ষিপ্ত হয়। এক্ষেত্রে তাই ঘটেছে।
প্রকৃতপক্ষে, নাজমুন নাহার একজন মানবিক,অতিশয় ভদ্র,বিনয়ী,সদালাপি,নৈতিক এবং সৎ মানুষ হিসাবে অনেক আগেই নিজেকে প্রমাণ করেছেন। যার ফলশ্রুতিতে সুশিল সমাজের সদস্য,রাজনীতিক,শিক্ষক,সাংবাদিক,প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী,ধর্মীয় গুরু প্রভৃতি সকল মহল তার গুণে মুগ্ধ হয়েছেন। এমনকি তার কাছে সাক্ষাতের জন্য আসা হতদরিদ্র মানুষেরা পর্য ন্ত ইউএনও নাজমুন নাহারের প্রশংসা করেছেন।
তিনি দেড় বছর সময়কালে ভাঙ্গুড়া উপজেলার ইউএনও’র দায়িত্ব পালন করেছেন। অথচ এত স্বল্প সময়ে তিনি যেসব কাজ করেছেন তা অতুলনীয়।
দৃশমান তার কয়েকটি কাজের বর্ণনা তুলে ধরা হলো : ১. উপজেলা পরিষদের আধুনিক ও সুদর্শনীয় একটি গেট নির্মাণ , ২. শিশু পার্ক যুগপযোগীকরণ,শহীদ মিনারের ওয়াকওয়ে নির্মাণ ও
সৌন্দর্যকরণ,৩.পরিষদের উন্মুক্ত ম্ঞ্চ নির্মাণ কাজ শুরু, ৪.রাস্তাঘাট নির্মাণ ও সংস্কার, ৫. শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উন্নয়নে প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। তিনি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে কাজটি করেছেন, তা হলো ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যত জীবনের মান উন্নয়ন ও নৈতিক হতে অনুপ্রাণিত করেছেন। যার সুদূরপ্রসারী একটি ইতিবাচক ফল এখানকার মানুষ এক সময় ভোগ করবেন। এজন্য এখানকার মানুষ তার কাছে অবশ্যই ঋণি থাকবেন বলে এখানকার শিক্ষক সমাজ অপকটে স্বীকার করেছেন। এছাড়া প্রশাসনিক কাজের বাইরেও তিনি মানুষের কল্যাণে অনেক সামাজিক কাজ করেছেন। যার প্রশংসা রয়েছে সবার মুখে। ইউএনও নাজমুন নাহার একজন নৈতিক আমলা হিসাবে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন এতে কোনো সন্দেহ নেই।
ইউএনও নাজমুন নাহার ‘২৪ গণ অভ্যুথ্থানের পর যেভাবে সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন, এক কথায় তা ছিল খুবই চ্যালেন্জিং। তবুও সকল মহল তার পাশে থেকে তাকে সহযোগিতা দিয়েছেন এজন্য যে,তার প্রতিটি কাজে ছিল স্বচ্ছতা। তার সততা,দক্ষতা ও ধৈর্য প্রশংসনীয় তো বটেই। তিনি এককভাবে উপজেলা পরিষদের প্রশাসক,ইউএনও,এসিল্যান্ড,পৌরসভার প্রশাসক এর মত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। একজন মানুষ সৎ না হলে তার বিরুদ্ধে হাজারো অভিযোগ উথ্থাপিত হতো। একটা স্বনামধন্য ও ধনাঢ্য পরিবারের সদস্য হিসাবে তার মধ্যে লোভ বলে কিছু পরিলক্ষিত হয়নি।
তার সম্প্রতি বদলি হয়েছে,আজই হয়তো ভাঙ্গুড়ায় তার শেষ কর্মদিবস। অসংখ্য মানুষ তার সাথে সাক্ষাৎ করতে এসেছেন। প্রত্যেকেই অশ্রুসজল হয়ে বের হয়েছেন কারণ একটাই তিনি অসারণ একজন ভালো মানুষ। তার ব্যবহারে মুগ্ধ গন্যমান্য থেকে ভিক্ষুকরাও কষ্ট পাচ্ছেন। এমন কোনো ভিক্ষুক নাই যে,তার কাছে এসে ভালো ব্যবহার পাননি বা খালি হাতে ফিরেছেন। সকল মানুষের দোয়া রয়েছে তার সঙ্গে। এজন্য তিনি জোর গলায় বলতে পেরেছেন যে -তার বিরুদ্ধে কোনো মিথ্যা অভিযোগ দাঁড় করিয়ে লাভ নেই,তা কেউ বিশ্বাস করবে না।
তিনি সব গুলো রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীদের সাথে সকল বিষয়ে আলাপ আলোচনা করে সুন্দর ভাবে উপজেলার সকল কার্যক্রম পরিচালনা করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তার কার্যকালে ভাঙ্গুড়ার ভুমি সেবা থেকে শুরু করে স্থানীয় সরকারের প্রতিটি অফিসে নিয়ম মাফিক কাজকর্ম সম্পাদিত হয়েছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে এসেছে আমুল পরিবর্তন। উপজেলায় ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেনী পর্যন্ত একই প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেয়ার বিষয়ে তিনিই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এর ফলে শিক্ষা ক্ষেত্রে শিক্ষকদের ইচ্ছামত গাইড বই নির্ভরতা রোধ হবে বলে অনেকে মনে করেন। বাজার মনিটরিং ও যানজট নিরসন এবং সরকারি সম্পত্তি জবরদখল থেকে মুক্ত করার ক্ষেত্রেও তার রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা।
বিদায়ী নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. নাজমুন নাহার জানান, নিয়মিত বদলীর অংশ হিসেবে তাকে রাজশাহী যেতে হচ্ছে কিন্তু ভাঙ্গুড়ার মানুষের আতিথিয়তা ও বিনীয় আচরণের কথা তিনি কখনো ভুলবেন না। তিনি তার দায়িত্ব সম্পর্কে বলেন,সরকারি নীতিমালা মেনে তিনি সকল উন্নয়নমূলক কাজ করার চেষ্টা করেছেন। তার বিশ্বাস মহান আল্লাহপাক তার ভালো কাজের জন্য নিশ্চয় ভালো ফলই দিবেন। ভাঙ্গুড়ার জনসাধারণ এবং প্রশাসন বান্ধব সাংবাদিকদের কথা তিনি সর্বদা মনে রাখবেন বলে জানান। তিনি সবার কাছে দোয়া কামনা করেছেন।।