রাজধানীর কাকরাইলে জাতীয় পার্টির (জাপা) কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ফের হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় আকস্মিক এ হামলায় পাঁচতলা ভবনের নিচতলার বিভিন্ন আসবাব ও নথিপত্র পুড়ে যায় এবং দেয়ালে থাকা দলের প্রতিষ্ঠাতা এইচএম এরশাদের ছবি ও দলের লোগো ভাঙচুর করা হয়। ঘটনাস্থলে বিশৃঙ্খলার কারণে সড়কে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী, মাগরিবের নামাজের কিছু পর গণ অধিকার পরিষদের ব্যানারসহ একটি মিছিল কাকরাইল এলাকায় পৌঁছে। সেখান থেকে অংশগ্রহণকারীরা হঠাৎ জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে হামলা শুরু করে। নিচতলা থেকে শুরু করে একাধিক তলায় ভাঙচুর চালানোর পর সেখানে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আতঙ্ক সৃষ্টি হলে পুলিশ জলকামান ব্যবহার করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
হামলার সময় কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন জাপার যুগ্ম মহাসচিব যুবের আলম খান। তিনি জানান, ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে দোয়া মাহফিলের প্রস্তুতি চলছিল। ঠিক সেই সময় হঠাৎ বড় মিছিল এসে প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে হামলা-অগ্নিসংযোগ চালায়। এতে তাঁদের অন্তত চারজন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন।
হামলার পর জাতীয় পার্টির মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “দেশে মবতন্ত্রের রাজত্ব চলছে, এর দায় সরকার এড়াতে পারে না।” তিনি হুঁশিয়ারি দেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা না হলে দেশব্যাপী আন্দোলন শুরু হবে।
অন্যদিকে গণ অধিকার পরিষদ হামলার দায় অস্বীকার করেছে। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান দাবি করেন, “অসংখ্য মানুষ জাতীয় পার্টির প্রতি ক্ষুব্ধ। বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতাই এই ভাঙচুর করেছে। এ ঘটনার সঙ্গে গণ অধিকার পরিষদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।”
প্রসঙ্গত, এর আগেও গত ২৯ ও ৩০ আগস্ট জাপার কার্যালয়ে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ হয়েছিল। ওই সময় সংঘর্ষে গুরুতর আহত হন গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক। তিনি এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সেই ঘটনার পর থেকেই দুই দলের মধ্যে উত্তেজনা তীব্র হয়ে ওঠে।
হামলার সর্বশেষ ঘটনায় পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার মো. মাসুদ আলম জানান, “হামলাকারীরা আগুন লাগিয়ে চলে যায়। অতিরিক্ত পুলিশ এসে আগুন নেভায়। এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।”
সাম্প্রতিক ধারাবাহিক হামলার কারণে রাজধানীর রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। জাতীয় পার্টি সরাসরি গণ অধিকার পরিষদকে দায়ী করলেও, পাল্টা ব্যাখ্যায় পরিষদ নেতৃত্ব বলছে, সাধারণ বিক্ষুব্ধ মানুষই এসব করছে। ফলে রাজনৈতিক অঙ্গনে দায়-দায়িত্ব অস্বীকার ও পাল্টাপাল্টি অভিযোগে পরিস্থিতি আরও ঘনীভূত হচ্ছে।