পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার সাহাপুর ইউনিয়নের চরগড়গড়ী গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষ আজ ‘মক্কেল বাহিনী’র দাপটে জিম্মি হয়ে পড়েছেন। এ বাহিনীর নেতৃত্বে আছেন মক্কেল মৃধা ওরফে মক্কেল কসাই, যিনি সাহাপুর ইউনিয়ন কৃষক দলের আহ্বায়ক।
গ্রামবাসীর অভিযোগ, ‘মক্কেল বাহিনী’ বন্দুকের ভয় দেখিয়ে কৃষকদের জমি দখল করছে। প্রায় ২০০ বিঘা জমি কেটে নিয়ে তারা নিজেরা চাষাবাদ করছে। প্রতিটি পরিবারকে মোটা অঙ্কের চাঁদা দিতে বাধ্য করছে। কেউ চাঁদা না দিলে তাদের বাড়িঘর ও জমি দখল হয়ে যাচ্ছে। অপহরণের ঘটনাও ঘটছে নিয়মিত। ঈদের আগে আব্দুল্লাহ নামের এক যুবককে অপহরণ করে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। শেষে টাকা ও গহনা দিয়ে তাকে মুক্ত করতে হয়।
এ বাহিনী রাতে মোটরসাইকেলবহর নিয়ে গ্রামে ঢুকে গুলি চালায়, বাড়িঘর ভাঙচুর করে, দোকানপাট লুট করে। ইতোমধ্যে কয়েকজন কৃষকের গরু, দোকানের মালামাল ও গৃহস্থালি জিনিসপত্র লুট হয়েছে। নারীদের শ্লীলতাহানির ঘটনাও ঘটেছে।
শুধু লুটপাট নয়, মক্কেলের ছেলে আব্দুল আলীম বাঁধন ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত। একবার ইয়াবাসহ ধরা পড়লেও জামিনে বের হয়ে এসে আবারও একই ব্যবসা করছে। বাহিনীর হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র রয়েছে, যেগুলো দিয়ে তারা প্রকাশ্যে মহড়া দিচ্ছে।
গ্রামবাসী ভয়ে নিজের ক্ষতির কথা প্রকাশ করতে সাহস পান না। তবে অন্য ভুক্তভোগীর ঘটনা তারা জানাতে দ্বিধা করেন না।
তবে তুষার নামের এক ব্যক্তি লিখিতভাবে পাবনা পুলিশ সুপার ও বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বরাবর অভিযোগ পাঠিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘মক্কেল কসাই আমার পরিবারকে নির্যাতন করেছে, সম্পদ কেড়ে নিয়েছে, এমনকি আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছে। এখন আমি এলাকায় ফিরতেও পারছি না।’
আরেক ভুক্তভোগী সাচ্চু বলেন, ‘মক্কেল বাহিনীর অত্যাচারে গ্রামের সবাই অতিষ্ঠ। সে বিএনপির নেতা হওয়ায় কেউ কিছু বলতে পারে না।’
এই বিষয়ে জানতে মক্কেল মৃধার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আ স ম আব্দুর নূর বলেন, ‘আমি কোনও অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তবে ভুক্তভোগীরা দাবি করেন, পুলিশে অভিযোগ দিলেও সেটি গ্রহণ করা হয়নি।
পাবনার পুলিশ সুপার মোরতোজা আলীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজি শাহজাহান আলী জানান, বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন