পাবনা চাটমোহর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও হরিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো.মকবুল হোসেনকে দুদকের মামলায় জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। ওই মামলার অপর আসামী মকবুল হোসেনের স্ত্রী মোছা.কামরুন্নাহার লাকীকে জামিন দিয়েছেন আদালত। সোমবার (৪ আগষ্ট) পাবনার সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত (জেলা ও দায়রা জজ) এই আদেশ দেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পৌনে এক কোটি টাকার সম্পদ গোপন করার অভিযোগে ইউপি চেয়ারম্যান মকবুল হোসেনের বিরুদ্ধে দ’ুটি মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ওই মামলায় উচ্চ আদালত তাকে ৬ সপ্তাহের জামিন দিয়ে নিম্ন আদালতে হাজির হবার নির্দেশ দেন। সেই মোতাবেক গত সোমবার পাবনার স্পেশাল জজ আদালতে জামিনের আবেদন করা হলে আদালত মকবুল হোসেনের জামিন নামঞ্জুর করেন।
উল্লেখ্য,২০২৪ সালের ১২ মে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সমন্বিত জেলা কার্যালয়,পাবনার উপ-সহকারী পরিচালক ফেরদৌস রায়হান বকসী বাদী হয়ে পাবনার চাটমোহর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মকবুল হোসেন বাচ্চু ও তার স্ত্রী কামরুন্নাহার লাকীর বিরুদ্ধে দুইটি মামলা করেন । সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন এবং জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ অর্জন ও ভোগদখলের অভিযোগে এ মামলা করা হয়।
মামলার অভিযোগে আরও বলা হয় জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ প্রাথমিক অনুসন্ধানে সত্যতা পাওয়ায় ২০২৩ সালের ৩০ জুলাই মকবুল হোসেন বাচ্চুকে তার সম্পদ বিবরণী দাখিলের আদেশ দেয় দুদক। ওই বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর উপ-পরিচালক, দুর্নীতি দমন কমিশন,সমন্বিত জেলা কার্যালয়,পাবনা বরাবর সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন তিনি।
যেখানে মকবুল হোসেন বাচ্চু তার দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে স্থাবর ও অস্থাবর মিলিয়ে ১ কোটি ৪৮ লাখ ৪২ হাজার ২৮৯ টাকা মূল্যের সম্পদ দেখান। কিন্তু সম্পদ বিবরণী যাচাইকালে তার নামে স্থাবর ও অস্থাবর মিলিয়ে ২ কোটি ২৩ লাখ ২৪ হাজার ৭৭৬ টাকা মূল্যের সম্পদ পায় দুদক। এতে মকবুল হোসেন তার দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে ৭৪ লাখ ৮২ হাজার ৪৮৭ টাকা মূল্যের সম্পদ গোপন করেন। তার মোট সম্পদের নীট মূল্য পাওয়া যায় ১ কোটি ৯৫ লাখ ৭৮ হাজার ২২৩ টাকা। তার বিপরীতে তার গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া যায় ৪১ লাখ ৮৬ হাজার ৭১৮ টাকা। সে হিসাবে তিনি ১ কোটি ৫৩ লাখ ৯১ হাজার ৫০৫ টাকা মূল্যের সম্পদ অর্জন করে ভোগ দখলে রেখেছেন।
অন্যদিকে একই দিন মকবুল হোসেনের স্ত্রী কামরুন্নাহার লাকীকে সম্পদ বিবরণী দাখিলের আদেশ জারি করা হয়। তিনিও তার স্বামীর সঙ্গে একই দিন একই কার্যালয়ে সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন। তার সম্পদ বিবরণী যাচাইকালে দেখা যায়, লাকী স্থাবর ও অস্থাবর মিলিয়ে ১ কোটি ৩৭ লাখ ১৭ হাজার ৪৩৬ টাকা মূল্যের সম্পদ প্রদর্শন করেছেন। কিন্তু সম্পদ বিবরণী আনুসন্ধানকালে তার নামে ১ কোটি ৮৬ লাখ ৫ হাজার ৪৮৯ টাকা মূল্যের সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়। তিনি তার দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে ৪৮ লাখ ৮৮ হাজার ৫৩ টাকা মূল্যের সম্পদ গোপন করেন। অনুসন্ধানকালে দুদক লাকীর নীট মোট সম্পদ পায় ১ কোটি ৬৯ লাখ ৮৩ হাজার ৩২৬ টাকা। এ সম্পদ অর্জনের বিপরীতে তার গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া যায় ৩৭ লাখ ৫৮ হাজার ৮৪৬ টাকা। এখানে কামরুন্নাহার লাকী অসাধু উপায়ে জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ১ কোটি ৩২ লাখ ২৪ হাজার ৪৮০ টাকা মূল্যের সম্পদ অর্জন করেছেন।
দুদকের অনুসন্ধান পর্যবেক্ষনে উল্লেখ করেছে,কামরুন্নাহার লাকী প্রকৃতপক্ষে একজন গৃহিণী। তার স্বামী মকবুল হোসেন বাচ্চু হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে ২০০৬ সাল থেকে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। কামরুন্নাহার লাকীর নিজস্ব কোনো আয় না থাকলেও তার স্বামী মকবুল হোসেন বাচ্চু ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ বৈধ করার অসৎ উদ্দেশ্যে তার নামে আয়কর নথি খুলে বিভিন্ন আয় প্রদর্শন করেছেন এবং ওই আয় দ্বারা সম্পদ অর্জন দেখিয়েছেন। স্ত্রীর বিরুদ্ধে এই মামলায় মকবুলকে দুই নম্বর আসামি করা হয়।
এদিকে ইউপি চেয়ারম্যান মকবুল হোসেন পাবনা-৩ আসনের সংসদ সদস্য মোঃ মকবুল হোসেনের যোগসাজসে এলাকায় বিভিন্ন আর্থিক বানিজ্য করেছেন। কৃষি বিভাগের জমি দখল করে বহুতল ভবন করেছেন। গত বছরের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর তিনি গা ঢাকা দেন। ইউপি চেয়ারম্যানের পদ থেকে তাকে অপসারণ করা হয়।