জানো বাবা, আমাদের মামমাম নাকি স্বপ্নের দেশে চলে গেছে। মা ঘুম পাড়ানোর সময় গল্প বলতেন, সেখানে গেলে নাকি আর ফিরে আসা যায় না। আমাদের দুই ভাইকে রেখে মামমাম কেন একা সুন্দর দেশে বেড়াতে গেল? তুমিও কি আমাদের ছেড়ে চলে যাবে বাবা?’
সদ্য মা হারানো ছেলে আরিয়ানের মুখে এসব প্রশ্নের জবাবে কিছুই বলতে পারেন না তাঁদের বাবা মিজানুর রহমান। যমজ ছেলেদেরই বুকে টেনে বলেন, ‘আমি তোদের ছেড়ে কোথায় যাব না রে বাবা, তোদের কোথাও যেতে দেব না।’
আজ বুধবার দুপুরে চুয়াডাঙ্গা শহরের বড় বাজার এলাকায় একটি খেলনার দোকানে এসব কথা জানান মিজানুর রহমান। তিনি আরও জানান, মায়ের মৃত্যুর পর থেকেই এমন নানা প্রশ্ন করছে দুই ছেলে। মায়ের কথা ভুলিয়ে রাখতেই ছেলেদের নিয়ে খেলনার দোকানে এসেছেন তিনি। মাঝেমধ্যে ঘুরতেও বের হন। কিন্তু কোনোভাবেই মায়ের কথা ভুলতে পারছে না আট বছর বয়সী এই দুই শিশু।
গত রোববার গাজীপুরের টঙ্গীর হোসেন মার্কেট এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে একটি নালায় পড়ে নিখোঁজ হন তাদের মা ফারিয়া তাসনিম। এর তিন দিন পর গতকাল মঙ্গলবার গাজীপুরে শালিকছড়া বিল থেকে ফারিয়ার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। টঙ্গীর স্থানীয় কয়েকজন অভিযোগ করেন, সিটি করপোরেশন ও বিআরটি প্রকল্প কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতা এ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। তাঁরা বলেন, এমন ব্যস্ত এলাকায় খোলা ড্রেন রেখে মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা শহরের বাগানপাড়ার বাসিন্দা মুন্সি ওলিউল্লাহ আহমেদের মেয়ে ফারিয়া তাসনিম। শহরের বাজারপাড়ার বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী মিজানুর রহমানের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়েছিল। তবে তাঁদের বিচ্ছেদের পর ২০২০ সাল থেকে ফারিয়া ঢাকায় বসবাস ও কর্মজীবন শুরু করেন। সর্বশেষ তিনি একটি ওষুধ বিপণন প্রতিষ্ঠানের কান্ট্রি সেলস ম্যানেজার (সিএসএম) হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
ফারিয়ার পরিবার জানায়, রাজধানীর মিরপুরের কাজীপাড়ায় দুই সন্তানকে নিয়ে থাকতেন ফরিয়া। আরিয়ান ও আইয়ান বিএএফ শাহীন কলেজের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র।
তবে শিশু দুটি আপাতত তাঁদের বাবা মিজানুরের সঙ্গেই আছে। গত মঙ্গলবার রাতে চুয়াডাঙ্গা শহরের পুরাতনপাড়া কবরস্থানে ফারিয়ার লাশ দাফনের পর পরিবারের সম্মতি নিয়ে আরিয়ান ও আইয়ানকে নিজ বাড়িতে নিয়ে যান জুয়েল। তাঁরা দুজন মিলে খেলনার একটি বড় তালিকা ধরিয়ে দিয়েছেন বাবার হাতে। সেগুলো কিনতেই দুই সন্তানকে নিয়ে বের হন মিজানুর।
এ প্রতিবেদক ওই দুই শিশুর কাছে জানতে চান, তাঁরা বড় হয়ে কী হতে চায়। জবাবে আইয়ান জানায়, সে পড়াশোনা শেষ করে চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করবে। অন্যদিকে আরিয়ান হতে চান সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা। কারণ জিজ্ঞেস করলে আরিয়ান বলে, সে দেশ ও দেশের মানুষের সুরক্ষার জন্য কাজ করতে চায়। এরপর তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয় সুরক্ষা কি? উত্তরে সে জানায়, ‘নিরাপত্তা, দেশবাসীর নিরাপত্তা।’
সুত্রঃ প্রথম আলো
এনএইচ