পাবনা জেলা ক্রীড়া সংস্থার বিতর্কিত কমিটি গঠনের পর এবার আওয়ামী লীগ নেতা ও আওয়ামীপন্থি ব্যবসায়ীদের নিয়ে পাবনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্টিজের নতুন কমিটি গঠনের অভিযোগ উঠেছে। অত্যন্ত গোপনে ও সুকৌশলে এই কমিটির গঠনের পর প্রকাশ্যে এলে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
বুধবার (২৩ জুলাই) পাবনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্টিজের নবগঠিত কার্যনির্বাহী কমিটির মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এর মাধ্যমেই এই কমিটি প্রকাশ্যে আসে। কমিটির প্রথম সভায় আওয়ামী লীগপন্থি ব্যবসায়ীদের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে সমালোচনা ঝড় উঠে। যদিও কমিটি অনুমোদনের পূর্ণাঙ্গ লিস্ট এখনও পাওয়ায় যায়নি। তবে চেম্বার অব কমার্সের অফিসে নতুন তালিকা টাঙানো হয়েছে।
নবগঠিত কমিটির সভাপতি করা হয়েছে আগের কমিটির সহ-সভাপতি ফোরকান রেজা বিশ্বাস বাদশাকে। তিনি শেখ রাসেল শিশুকিশোর পরিষদের পাবনার সভাপতি। যার আওয়ামী সংশ্লিষ্ট একাধিক ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রয়েছে। নৌকার ভোট চেয়ে ব্যানার, আওয়ামী লীগ নেতাদের নেতৃত্বে মিছিলে অংশগ্রহণ, যুবলীগ নেতাদের সঙ্গে একাধিক ছবি ভাইরাল হয়েছে। সাবেক ডেপুটি স্পিকার টুকুর বেয়ার ব্যবসায়ী হারুনুর রশিদ লাইজু, ফরিদুল ইসলাম, শামীম হোসেন, কুতুব উদ্দিন সুইট, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক ইমরুল হাসান রন্টি, আওয়ামী লীগের সাবেক উপদেষ্টা খোকা আফজালের ছেলে জাহিদ হোসেন জামিল, তাজউদ্দিন মিলনসহ এই কমিটির অনেক সদস্য রয়েছে তারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন। অনেকেই আওয়ামী প্রভাবে আগের কমিটিরও সদস্য ছিলেন, নবগঠিত কমিটিতেও তারা সদস্য।
এমন বিতর্কিত আওয়ামী পুনর্বাসন কমিটির প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই পাবনার গণতন্ত্রকামী ও বিএনপি-জামায়াতপন্থি ব্যবসায়ীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এর আগে পাবনা জেলা ক্রীড়া সংস্থার কমিটি নিয়েও বিতর্ক উঠেছে। সেখানেও আওয়ামীপন্থিদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়।
পাবনা চেম্বার ও ক্রীড়া সংস্থার একাধিক ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাবনা চেম্বার অব কমার্স এবং পাবনা জেলা ক্রীড়া সংস্থার নিয়ন্ত্রক ছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক কঠোর আওয়ামীপন্থি ব্যবসায়ী সাইফুল আলম স্বপন চৌধুরী। শেখ হাসিনার আস্থাভাজন হিসেবে তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক, পাবনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্টিজের সভাপতি এবং পাবনা জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহ-সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। নবগঠিত পাবনা চেম্বার অব কমার্স এবং জেলা ক্রীড়া সংস্থার অধিকাংশ সদস্যই তার অনুসারী।
নবগঠিত কমিটির সভাপতি ফোরকান রেজা বিশ্বাস বাদশা বলেন, ‘আলোচনা-সমালোচনা তো থাকবেই। যতো ভালো কাজই করেন না কেন সমালোচনার অভাব নেই এই দেশে। আমাকে জোর করে (শেখ রাসেল শিশু কিশোর পরিষদের) সভাপতি বানিয়েছিল, কিন্তু আমি কোনো কাজ করিনি। সেই সময়ে অনেক কিছুই করতে হয়েছে। ৫ আগস্টের পর আমার মুক্তি পেয়েছি আলাদাভাবে।’
পাবনা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহবায়ক বরকতউল্লাহ ফাহাদ বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের দোসররা যারা আগে পাবনা চেম্বার অব কমার্সে ছিল তারাই গোপনে আওয়ামী দোসরদের দিয়ে এই কমিটি করেছে। পাবনার ছাত্র সমাজ এই কমিটি প্রত্যাখ্যান করেছে। অবিলম্বের এই কমিটি বাতিল করে নতুন কমিটির দাবি জানাই।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে চেম্বারের সাবেক পরিচালক ব্যবসায়ী মাসুদুর রহমান মিন্টু বলেন, ‘আগেই তো পাবনা চেম্বার অব কমাসের কমিটি নিয়ে হাইকোর্ট রিট করা আছে। রিট উপেক্ষা করে কোনো কমিটি হলে সেটা অবৈধ। ভোট ছাড়া নির্বাচন ছাড়া এইসব কমিটি অবৈধ। এই কমিটিও তালিকা দেখাতে পারবে না। জোর করে কমিটি করেছি।’