পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে ঘরমুখো মানুষের ঢল নেমেছে দক্ষিণাঞ্চলের প্রবেশদ্বার পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে। কর্মজীবী মানুষ ছুটির সুযোগ নিয়ে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরতে ভোর থেকেই এক্সপ্রেসওয়ে হয়ে পদ্মা সেতুর দিকে ছুটছেন। এতে মাওয়া টোল প্লাজায় সৃষ্টি হয়েছে যানবাহনের দীর্ঘ সারি।
শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে ঈদের ছুটি। সকাল থেকেই টোল প্লাজার বিভিন্ন বুথে বাড়তি চাপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষ করে মোটরসাইকেলের সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। টোল প্লাজার দায়িত্বপ্রাপ্তরা জানান, সাতটি বুথ চালু থাকলেও মোটরসাইকেলের প্রবাহ সামাল দিতে সকালেই আরও দুটি অস্থায়ী বুথ স্থাপন করা হয়।
সেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, যান চলাচল নির্বিঘ্ন করতে সার্বক্ষণিক নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিশেষ করে মোটরসাইকেলের জন্য পৃথক বুথের সংখ্যা বাড়ানোর পরও অতিরিক্ত চাপের কারণে টোল প্লাজায় দীর্ঘ সারি তৈরি হয়েছে।
টোল প্লাজায় যানবাহনের দীর্ঘ সারির কারণে প্রায় দুই কিলোমিটার পর্যন্ত জট লেগে গেছে। যদিও পদ্মা সেতু চালুর পর থেকে ভোগান্তি অনেক কমেছে, তবুও অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে টোল প্লাজায় ধীরগতি দেখা গেছে। মোটরসাইকেলের পাশাপাশি প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও যাত্রীবাহী বাসগুলোর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় সেতুর টোল আদায়ের কাজে নিয়োজিত কর্মীদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
মাওয়া ফাঁড়ির ট্রাফিক ইন্সপেক্টর জিয়াউল ইসলাম বলেন, “ভোর থেকেই এক্সপ্রেসওয়ে হয়ে গাড়ির চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। টোল প্লাজায় অতিরিক্ত চাপ থাকায় যানজট সৃষ্টি হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে মোটরসাইকেল বুথের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।”
যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল বাড়ানো হয়েছে। পদ্মা সেতু উত্তর থানার ওসি জাকির হোসেন জানান, “যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে হাইওয়ে পুলিশ ও ট্রাফিক পুলিশের পৃথক দল মোতায়েন করা হয়েছে। স্পিড গান ব্যবহার করে অতিরিক্ত গতির যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।”
হাঁসাড়া হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আব্দুল কাদের জিলানী জানান, “পুরো এক্সপ্রেসওয়েতে হাইওয়ে পুলিশের আটটি ইউনিট কাজ করছে। চালকদের সচেতন করতে নিয়মিত মাইকিং করা হচ্ছে।”
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সাঈদ বলেন, “বৃহস্পতিবার পদ্মা সেতু দিয়ে ২৭,৬৮৩টি যানবাহন পারাপার হয়েছে, যার ফলে টোল আদায় হয়েছে ৩ কোটি ৭ লাখ টাকা। শুক্রবার সকাল থেকেই যান চলাচল আরও বেড়েছে।”
তিনি আরও জানান, “মোটরসাইকেল ও অন্যান্য যানবাহনের চাপ সামাল দিতে তিনটি মোটরসাইকেল বুথসহ মোট নয়টি লেন ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়া যাত্রীদের সুবিধার্থে সেতুর সাতটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে নিরাপত্তা ও মনিটরিং টিম কাজ করছে।”
নিরবচ্ছিন্ন যাত্রার সুবিধা পেয়ে যাত্রীরা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। অনেকেই জানান, পদ্মা সেতুর কারণে দক্ষিণাঞ্চলে যাতায়াত এখন আগের চেয়ে অনেক সহজ হয়েছে। তবে টোল আদায়ের গতি আরও বাড়ানো গেলে যানজট কমে যাত্রীদের অপেক্ষার সময় কমবে বলে মনে করছেন অনেকে।
ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন রাখতে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও আনসার সদস্যরা সম্মিলিতভাবে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনিছুর রহমান। তিনি বলেন, “চারশ’র বেশি পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি সেনাবাহিনীও নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছে।”
সূত্র: এফএনএস