নানান সমস্যায় জর্জরিত হাওর বেষ্টিত সুনামগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতাল। চিকিৎসক ও সেবিকা (নার্স) সংকটে ব্যাহত হচ্ছে, এ জেলার ২৬ লাখ ৯৫ হাজার ৪৯৫ জন মানুষের চিকিৎসা সেবার একমাত্র ভরসাস্থল। প্রায় ২৭ লাখ মানুষের চিকিৎসাসেবার একমাত্র প্রতিষ্ঠান হওয়ায় রয়েছে রোগীর চাপ। ২৫০ শয্যা হাসপাতাল হলেও আজ শনিবার রোগী ভর্তি আছেন ৪৮০ জন।
হাসপাতালটির খাবার সরবরাহ নিয়ে রয়েছে ভর্তি রোগীদের অভিযোগ। এছাড়াও টয়লেট নোংরা থাকায় অনেক ভর্তি রোগীরা শহরের থাকা স্বজনদের বাসায় গিয়ে সারছেন প্রাকৃতিক কাজ। শুধু এসব অভিযোগই নয়, হাসপাতালটিতে রয়েছে বহিরাগতদের আনাগোণা। ওয়ার্ডে ঢুকে পড়ছে শশা, খিরা ও আচার বিক্রেতারাও। ফলে নষ্ট হচ্ছে হাসপাতালে পরিবেশ।
আজ শনিবার দুপুর পৌনে ১২টায় হাসপাতালে সরেজমিন দেখা গেছে, শিশু ওয়ার্ড ও মহিলা সার্জারি ওয়ার্ডে বেড না পেয়ে মেঝেতে রোগীারা চিকিৎসা নিচ্ছেন।
সদর উপজেলার মনোহরপুর গ্রামের রোকেয়া বেগম বাসসকে জানান, তার ৬ মাসের ছেলে মো. রিফাতের নিউমোনিয়া দেখা দেওয়ায় গত বৃহস্পতিবারে এ হাসপাতালে ছেলেকে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করান। কিন্তু টয়লেট নোংরা থাকায় শহরে থাকা স্বজনের বাসায় গিয়ে তাকে প্রাকৃতিক কাজ সারতে হচ্ছে।
জেলার শন্তিগঞ্জ উপজেলার পাগলা গ্রামে তানিয়া (২০) জানান, তিনি গত রোববার এ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে তিনি ৪ দিন সকালের নাস্তায় পেয়েছেন ডিম, পাউরুটি আর কলা। দুইদিন পেয়েছেন সেমাই ও পাউরুটি। কিন্তু হাসপাতালের খাদ্য তালিকায় দেখা গেছে, রোগীদের সকালের নাস্তা দেওয়া হচ্ছে, ডিম, কলা, ব্রেড ও চিনি। দুপুরের ও রাতের খাবার তালিকায় দেখা গেছে মাছ, মুরগি, ডাল ও সবজি বরাদ্দ রয়েছে। কিন্তু রোগীরা বলছেন দুপুর ও রাতের খাবারে দেওয়া হচ্ছে, শুধু পোল্ট্রি মুরগি ও ডাল।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজনের) জেলা সাধারণ সম্পাদক ফজলুল করিম সাঈদ বাসসকে জানান, সুনামগঞ্জ ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালের এক্স-রে মেশিন নষ্ট হয়ে থাকায় প্রায় এক বছর ধরে এক্স-রে করাতে পারছে না রোগীরা। হাসপাতালে এক্স-রে করার ব্যবস্থা না থাকায় বাহিরে ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে গিয়ে এক্স-রে করাতে হচ্ছে।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, বিভিন্ন পর্যায়ে ৬৬ জন চিকিৎসক থাকার অনুমোদন থাকলেও কর্মরত আছেন ৩০ জন। শূন্য রয়েছে ৩৬ জন চিকিৎসকের পদ। চিকিৎসকের শূন্য পদগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য পদগুলো হচ্ছে, সিনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জরি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি), সিনিয়র কনসালটেন্ট (চক্ষু), জুনিয়র কনসালটেন্ট (চক্ষু), সিনিয়র কনসালটেন্ট (ইএনটি) সিনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনি), সিনিয়র কনসালটেন্ট (কার্ডিওলজি), সিনিয়র কনসালটেন্ট (ডেন্টাল), জুনিয়র কনসালটেন্ট (প্যাথলজি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (রেডিওলজি)।
এছাড়াও দ্বিতীয় শ্রেণির (সেবিকাসহ) ২৬৪টি পদের মধ্যে শূন্য রয়েছে ৭৪টি পদ। তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীর ৩৮টি পদের মধ্যে ১৯টিই শূন্য এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর ২৮টি পদের মধ্যে ১৩টি পদ শূন্য রয়েছে।
হাসপাতাল সূত্র আরও জানায়, আজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৪৮০ জন রোগী। এর মধ্যে শিশু ওয়ার্ডে ১১২ শিশু, নিওনেটাল ওয়ার্ডে ৪০ শিশু (০ থেকে ২৮ দিন পর্যন্ত শিশু), স্ক্যানোতে রয়েছে ৭ শিশু। ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন ৯৩ জন। ক্যাবিনে রয়েছেন ৩৫ জন, পুরুষ ওয়ার্ডে রয়েছেন ৫৪ জন, মহিলা ওয়ার্ডে রয়েছেন ৮৭ জন, প্রসূতি ওয়ার্ডে ৫০ এবং ডেঙ্গু ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন ২ জন।
হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ডা. মো. রফিকুল ইসলাম বাসসকে জানান, ২৫০ শয্যা হাসপাতালে আজ ভর্তি আছেন ৪৮০ জন রোগী। আড়াইশ রোগীর খাবার সমন্বয় করেই ভর্তি রোগীদের দেওয়া হয়। তাই সব সময় নাস্তায় সবাই একসঙ্গে ডিম পান না।
তিনি আরও জানান, হাসপাতালে শয্যার বিপরীতে রোগী ভর্তি হাওয়ায় জনবল সংকটের কারণে অনেক সময় সামাল দেওয়া যায় না।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ড. মো. মাহবুবুর রহমান বাসসকে জানান, এক্স-রে মেশিন সচল করা হয়েছে। ২/৩ দিনের মধ্যে রোগীরা হাসপাতালে এক্স-রে করাতে পারবেন।
টয়লেট নোংরার বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক বলেন, বিষয়টি গণপূর্ত বিভাগ দেখে। জেলা গণপূর্ত বিভাগকে এ ব্যাপারে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
জেলা গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল হাসান হীরা বাসসকে জানান, খবর দেওয়া হলে সঙ্গে সঙ্গে আমাদের লোকজন মেরামত করে দেয়। কিন্তু হাসপাতালের স্যানেটারি লাইনে সমস্যা আছে। টুকটাক কাজ করে সমস্যা সমাধান হচ্ছে না। দেয়াল ভেঙে পাইপ বদলাতে হবে। আমরা ইতিমধ্যে ইস্টিমেট করে পাঠিয়েছি। টেন্ডার করার পর কাজ শুরু করবো।
বাসস