পর পর ৩ বার ৩টি চিনিকলের আখ নিয়ে জয়পুরহাট চিনিকলে আখ মাড়াই শুরু হয়েছে দোটানার মধ্যে। গত মৌসুমের প্রায় ৫৭ কোটি টাকা লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়েই দেশের বৃহত্তম চিনি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান জয়পুরহাট চিনিকলে ২০২৪-২০২৫ আখ মাড়াই মৌসুম শুরু হয়েছে শুক্রবার থেকে।
শুক্রবার বিকেল ৪টায় আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন করেন বিসিআইসি’র সচিব আনোয়ারুল করীর। এসময় উপস্থিত ছিলেন বিএসএফআইসি’র সিপিই গিয়াস উদ্দিন, ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মামুন খান চিশতী, চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আখলাছুর রহমান, জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক গোলজার হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুদ রানা প্রধান, আব্দুল ওহাব, জেলা জামায়াতের আমীর ফজলুর রহমান সাঈদসহ অনেকেই।
জয়পুরহাট চিনিকলের ৬২তম আখ মাড়াই মৌসুম এটি। বিগত বছরগুলোতে আখের দাম ঠিকমত না পেলেও গত মাড়াই মৌসূম থেকে ন্যায্য মূল্যসহ কৃষকরা পাচ্ছেন প্রণোদনা সুবিধা। এ কারণে চিনিকলটি অচলাবস্থা কাটিয়ে পথ খুঁজছেন ঘুরে দাঁড়াবার। আগের বছরগুলোতে আখের কম মূল্য নির্ধারণ, মূল্য পরিশোধে চিনিকল কর্তৃপক্ষের গড়িমসিসহ কৃষক হয়রানীর কারণে আখের বদলে কৃষকরা ঝুঁকেছিলেন বিকল্প ফসল চাষে। তবে গত বছর থেকে চিনিকলটি আখের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিতসহ সঠিক সময়ে মূল্য পরিশোধের ব্যবস্থা করায় আবারো কৃষকেরা ঝুঁকছেন আখচাষে।
এ মৌসুমে আখের মূল্য বৃদ্ধি করে মিলগেটে প্রতি কুইন্টাল আখ ৬শ’ টাকা দরে বিক্রি করার সুসংবাদ পেয়ে খুশিতে আত্মহারা কৃষকরা। আখের মূল্য বৃদ্ধির যে সিদ্ধান্ত চিনিকল কর্তৃপক্ষ নিয়েছেন, তাতে সাধুবাদ জানিয়েছেন আখচাষীরা। এ ছাড়াও কৃষক হয়রানী বন্ধের পাশাপাশি, সুদ মুক্ত ঋণ ও কৃষকদের প্রণোদনা সুবিধা এভাবে দেওয়া হলে আবারো ঘুরে দাড়াবে এ চিনিকল, এমন দাবি ও আশা আখচাষীদের। পাশাপাশি আখের সাথে সাথী ফসল চাষ করা যাচ্ছে বলে প্রাণ ফিরে পেতে চলেছেন পরিশ্রমী কৃষকরা।
এ ব্যাপারে জয়পুরহাট চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আখলাছুর রহমান বাসস’কে জানান, গত দু’বছরের মত এবারও বন্ধ হওয়া শ্যামপুর ও মহিমাগঞ্জ এ ২টি চিনিকলের আখসহ জয়পুরহাট চিনিকলে আখ মাড়াই শুরু হয়েছে। এ মাড়াই মৌসুমে প্রায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াইয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। মিল চলবে ৩৪ দিন। সেখান থেকে ৫.৫ আহরণের অনুপাতে ২ হাজার মেট্রিক টন চিনি উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এখানকার কৃষকেরা তাদের জমিতে যেসব ফসল আবাদ করছেন তার সাথে সাথী ফসল হিসেবে আখ চাষ করলে আরো বেশী লাভবান হবেন। এ ব্যাপারে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। আগামীতে আখ চাষ বেশী হলে এ মিলটি অতীতের হারানো ঐতিহ্য ফেরত পাবে।
এ ব্যাপারে আখচাষীরা বাসস’কে জানান, বর্তমানে আখের মূল্য মোবাইল এ্যাপসে পরিশোধ করা হচ্ছে। শুধু কৃষকদের ন্যায্য মূল্য সময় মত পরিশোধ করলেই হবে না, চিনিকলটিকে লাভ জনক পর্যায়ে নিয়ে যেতে হলে কৃষক হয়রানী বন্ধ, কৃষকদের প্রণোদনা প্রদান, উন্নত জাতের আখ চাষ, আধুনিক যন্ত্রপাতির সংযোজন ও উৎপাদন ব্যয় কমাতে পারলে আবোরো চিনিকলটি লাভের মুখ দেখবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাসস