আদালতের আদেশ অমান্য করায় যশোর কোতোয়ালী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনিরুজ্জামান ও এসআই লিটন মিয়াকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করেছেন আদালত। একই সাথে আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর পুলিশের এ দুই কর্মকর্তাকে স্বশরীরে আদালতে হাজির হয়ে জবাব দিতে বলা হয়েছে। বুধবার (২৩ সেপ্টেম্বর) জুসিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুদ্দীন হোসাইন এ আদেশ দেন। আদালত সূত্র জানায়, চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারী রাত নয়টার সময় যশোর রাজারহাট মোড়ের বাম পাশে দাড়িয়ে থাকা একটি পিকআপ গাড়িকে বেপোরোয়া গতিতে আসা অপর একটি পিকআপ গাড়ি সাজারো ধাক্কা দেয়। বেপোরোয়ার গতির গাড়িতে থাকা চুয়াডাঙ্গা জেলার ছোট শলুয়া গ্রামের মহাতাব মিয়ার ছেলে শাহবুল মিয়া নামের এক কাঁচামাল ব্যবসায়ী গুরুতর আহত হয়। এ সময় চালক সটকে পরে। পরে আহত শাহবুলকে হাসপাতালে নেয়া হলে তার মৃত্যু হয়। এরপর পুলিশ ঘটনাস্থলে যেয়ে পিকআপটি জব্দ করে।
যার নং ঢাকা মেট্রো ড-১২-১৪৩৬। এ ঘটনায় নিহতের ছেলে শিমুল হোসেন বাদী হয়ে ওই গাড়ির অঙ্গাতনামা চালককে আসামি করে কোতোয়ালী থানায় মামলা করেন। এদিকে, এই পিকআপটির মালিকানা দাবি করে জিম্বায় নেয়ার জন্য যমুনা ব্যাংক লিমিটেড ও র্যনকন অটোমোবাইলস লিমিটেডের পক্ষে র্যনকন এর রিকভারী অফিসার রমজান আলী জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন জানান। পরে আবেদন না মঞ্জুর হলে তিনি জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আবেদন করেন। গত ২৭ আগস্ট উভয়পক্ষের শুনানী শেষে গাড়িটি দরখাস্তকারীর জিম্মায় দেয়ার আদেশ দেন জেলা ও দায়রা জজ ইখতিয়ারুল ইসলাম মল্লিক। পরে সে আদেশের অনুকুলে গত ১৫ সেপ্টেম্বর কোতোয়ালী থানাকে জব্দকৃত গাড়ি আবেদনকারীর জিম্মায় দেয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু আবেদনকারী গাড়িটি ফেরত আনতে গেলে কোতোয়ালী থানা থেকে গাড়ি জিম্মায় না পেয়ে গাড়িটি আদালতে হাজির করার আবেদন জানান একই সাথে তার সাথে অশোভন আচরন করা হয়েছে বলে আবেদনে উল্লেখ করেন। গত ২৩ সেপ্টেমবর আদালতে দেয়া আবেদনে তিনি জানান, আদালতের আদেশে গাড়ি ফেরত পাবার জন্য গত ১৬ সেপ্টেম্বর কোতোয়ালী থানায় হাজির হয়ে কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা হলে থানার তদন্তকারী কর্মকর্তা লিটম মিয়া তার কাছে উৎকোচ দাবি করে। টাকা দিতে রাজি না হলে এস আই লিটম মিয়া জানায়, আদালতের আদেশ তিনি মানেন না।
উৎকোচ না দিলে ওই গাড়িটি মাদক মামলার আলামত হিসেবে জব্দ করা হবে। গাড়ির যন্ত্রাংশ খুলে বিক্রি করা হবে। একই সাথে আবেদন কারীকে পেন্ডিং মামলায় চালান দেয়ার ভয় দেখানো হয় বলে আদালতে দেয়া দরখাস্তে উল্লেখ করেন রমজান আলী। এদিকে, এ ঘটনার পর গত ১৬ সেপ্টেম্বর তদন্ত কর্মকর্তা লিটন মিয়া ওই গাড়ি জিম্বায় না দিয়ে আদালতে একটি লিখিত অবহিতকরণ দরখাস্ত দেন তাতে তিনি উল্লেখ করেন, মামলার মুল আসামি এখনো শনাক্ত করা যায়নি। এমতাবস্তায় গাড়িটি জিম্বায় দিলে প্রকৃত অপরাধীকে শনাক্ত করা সম্ভাব হবে না বলে তিনি জানান।
গত ২৩ সেপ্টেম্বর মামলার ধার্য তারিখে আদালত তার আদেশে বলেন জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আদেশের পেক্ষিতে গত ১৪ সেপ্টেম্বর কোতোয়ালী থানাকে দরখাস্তকারীর নিকট জব্দকৃত গাড়িটি হস্তান্তরের আদেশ দেয়া হয়। কিন্তু সে আদেশ মানা হয়নি। আদেশ না মেনে উল্টো জিম্মায় না দেয়ার যৌক্তিকতা তুলে ধরে আদালতে অবহিতকরণ পত্র দেন। যা জেলা জজ আদালতের আদেশকে চ্যালেঞ্জ স্বরুপ বোঝায়। আদালতের আদেশ অমান্য করা অবমাননার সামিল। এমতাবস্তায় ওই দুই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে না সে মর্মে আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর স্বশরীরে আদালতে হাজির হয়ে জবাব দেয়ার নির্দেশ দেয়া হলো অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়।