অনলাইন ডেস্কঃ
বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে যারা পিটিয়ে হত্যা করেছে তারা যেন শাস্তির আওতায় আসে। আবরারের মাও যেন বলতে পারে, ‘ন্যায়বিচার পেয়েছি।’ আজ রোববার মামলাটিতে রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনে একথা বলেন মামলার চিফ প্রসিকিউটর মোশাররফ হোসেন কাজল। ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান এ যুক্তিতর্ক শুনানি গ্রহণ করেন।
প্রসিকিউটর কাজল যুক্তি উপস্থাপনে বলেন, ‘এটা (আবরার হত্যা) কোনো সামান্য বিষয় না। আবরার গ্রামে চলে যায়। আসামিরা তার অপেক্ষায় থাকে। বলতে থাকে আসুক, আসুক। সে হলে আসে। তাকে ডেকে নিয়ে যায়। একটা হলে কোর্ট বসায়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে আর মৃদু আক্রমণ করছে। আস্তে আস্তে আক্রমণ জোরালো হয়। তার প্রতি কেন এত রাগ? এত কেন? শেষ পর্যন্ত তাকে পিটিয়েই মেরে ফেললো।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ন্যায়বিচার চাই। জুলুম বা অবিচারের পক্ষে আমরা নই। যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা চাই। কেউ ইনোসেন্ট থাকলে আদালত বিষয়টি বিবেচনা করবেন। হলে যারা থাকেন তারা একে অপরের আপন হয়ে যায়। আবরার তাদেরই আপন একজন ছিল। কিন্তু সেই আপনজনকে তাকে মেরে ফেললো।’
এ প্রসিকিউটর বলেন, ‘যারা অপরাধ করেছে তারা যেন শাস্তির আওতায় আসে। আবরারের মা যেন বলতে পারে, ন্যায়বিচার পেয়েছি। আবরারের মা-বাবা, আত্মীয়-স্বজন তার জন্য এখনো কাঁদছে। তার মা-বাবা বলছে, ছেলেকে পাঠিয়েছি পড়তে আর কি হয়ে গেলো।’
দুপুর আড়াইটায় আবার এ মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হবে। সে সময় রাষ্ট্রপক্ষের আরেক আইনজীবী আব্দুম সোবহান তরফদার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবেন। এদিন কারাগারে থাকা ২২ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়েছে।
এর আগে রাষ্ট্রপক্ষের আরেক আইনজীবী আবু আব্দুল্লাহ ভূঁইঞা যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে শেষ করেন।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলে আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে পরের দিন ৭ অক্টোবর চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ। ওই বছরের ১৩ নভেম্বর ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পরিদর্শক ওয়াহেদুজ্জামান। গত বছর ১৫ সেপ্টেম্বর ২৫ আসামির বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে বিচার শুরু করেন আদালত।
মামলাটিতে ৬০ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন আদালত। গত ১৪ মার্চ এ মামলায় কারাগারে থাকা ২২ আসামি আত্মপক্ষ সমর্থনে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। অপর তিন আসামি পলাতক থাকায় আত্মপক্ষ শুনানি করতে পারেনি। এরপর কয়েকজন আসামি নিজেদের পক্ষে সাফাই সাক্ষ্যও দেন।
গত ৭ সেপ্টেম্বর মামলায় কিছু ত্রুটি থাকায় রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটি পুনরায় চার্জগঠনের আবেদন করেন। ৮ সেপ্টেম্বর আদালত ২৫ আসামির বিরুদ্ধে পুনরায় চার্জগঠন করেন। এরপর ১৪ সেপ্টেম্বর আত্মপক্ষ শুনানিতে ২২ আসামি আবারও নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন।