রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৫৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
প্রশংসনীয় উদ্যোগ- ভাঙ্গুড়ায় তাপদাহে পিপাসার্ত মানুষকে আনসার কমান্ডারের পানীয় সেবা অস্বাভাবিক গরমেও খুলছে প্রাথমিক বিদ্যালয়, বন্ধ থাকবে প্রাক-প্রাথমিক ভাঙ্গুড়ায় দাদন ব্যবসার ফাঁদে পড়ে নি:স্ব হচ্ছে ক্ষুদ্র কৃষক ও ব্যবসায়ী সর্বজনীন পেনশন স্কিম- ভাঙ্গুড়ায় ৪ মাসে একাউন্ট ওপেন হয়েছে মাত্র ১৪২ ভাঙ্গুড়ায় প্রাণি সম্পদ বিভাগের জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সমাপনী ঘটলো সেবা সপ্তাহের ভাঙ্গুড়ায় ৭ দিন ব্যাপি বই মেলা জমে উঠেছে উপজেলায় এমপি মন্ত্রীর সন্তান-স্বজনরা প্রার্থী হলে ব্যবস্থা উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী–সংসদ সদস্যদের হস্তক্ষেপ বন্ধে কঠোর নির্দেশনা : ওবায়দুল কাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক অবিস্মরণীয় দিন ১৮ এপ্রিল। হোসেন আলী ভারতে স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়ান আজ ভাঙ্গুড়ায় দুগ্ধজাত ক্ষুদ্র শিল্পের সফল উদ্যোক্তা কলেজ ছাত্র অপু ঘোষ

একের পর এক কবর খুঁড়ে চলেছেন গোরখোদকরা

অনলাইন ডেস্ক :
  • আপডেটের সময় : শনিবার, ১০ এপ্রিল, ২০২১
  • ২০২ সময় দর্শন

আবারও সারি সারি লাশের দাফন। গোরখোদকরা একটার পর একটা কবর খুঁড়ছেন। কার প্রিয়জন এই কবরে শায়িত হবেন তা তারা জানেন না। শুধু জানেন, করোনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় তাদের আবারও আগের মতো কবর খুঁড়তে হবে। জুম্মাবারেও তাদের কবর খনন পূর্বের মতোই চলছে।

শতাধিক কবর আগে থেকেই তৈরি করে রেখেছেন তারা। দূরে দাঁড়িয়ে আছে অ্যাম্বুলেন্স। পাশে আরো একাধিক অ্যাম্বুলেন্স। স্বজনরা একটু দূরে দাঁড়িয়ে আহাজারি করছেন। কিন্তু কাছে যেতে পারছেন না। অ্যাম্বুলেন্সের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন স্বেচ্ছাসেবীরা। পিপিই পরিহিত স্বেচ্ছসেবীরা একটু পর পর লাশ নামাচ্ছেন কবরে। বাঁশের চাটাই দিয়ে ঢেকে মাটি দেওয়া হচ্ছে। এরপরই সবাই স্যানিটাইজার স্প্রে করে প্রিয়জনকে রেখে কবরস্থান ত্যাগ করছেন।

শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর দুপুর ২টা রাজধানীর রায়েরবাজার কবরস্থান। এখানকার ৮ নম্বর ব্লকটি নির্ধারিত করা হয়েছে করোনায় মৃতদের জন্য। গত বছর মার্চ মাসে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার পর প্রথম দফায় খিলগাঁও তালতলা সরকারি কবরস্থানে মৃতদের দাফন শুরু হয়। কিন্তু স্থান সংকুলান না হওয়ায় ২৭ এপ্রিল থেকে রায়েরবাজার কবরস্থানে দাফন শুরু হয়।

রায়েরবাজার কবরস্থানের সিনিয়র মোহরার আব্দুল আজিজ বলেন, ২৭ এপ্রিল থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত করোনায় মৃত ৮৪২ জনের লাশ দাফন হয়। প্রতিদিনই পাঁচ থেকে ৮/১০ জন করে দাফন করা হয়। এরপর থেকে দাফনের সংখ্যা কমতে থাকে। নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত সপ্তাহে একটি লাশের দাফন হয়। কিন্তু মার্চ মাস থেকে এই দাফনের সংখ্যা বাড়তে থাকে। প্রতিদিন দুই/তিন টির পর মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে প্রতিদিন গড়ে পাঁচটি করে লাশ দাফন করা হয়। তবে ১ এপ্রিল থেকে প্রতিদিন গড়ে আট থেকে ১০টি লাশ দাফন করা হচ্ছে। শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত পাঁচটি নিয়ে এ পর্যন্ত এই কবরস্থানে করোনায় মৃত ১০৮১টি লাশ দাফন করা হয়েছে।

রায়ের বাজার কবরস্থানে সিটি করপোরেশনের নিযুক্ত ড্রেসার মোহাম্মদ আলী বলেন, অ্যাম্বুলেন্সে করে লাশ আনার পর স্বজনরা যদি চান কবরস্থানের প্রবেশমুখে মসজিদে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে জানাজা শেষে লাশবাহী গাড়ি চলে যায় ৮ নম্বর ব্লকে। এরপর নির্দিষ্ট কবরে দাফন করে দ্রুত কবরস্থান ত্যাগ করেন আত্মীয়-স্বজনরা।

গতকাল দুপুরে ৮ নম্বর ব্লকে গিয়ে দেখা যায় আগে থেকেই প্রায় ১০০ কবর তৈরি করে রাখা হয়েছে। কবরস্থানে একটি লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স প্রবেশের পর পিপিই পরিহিত আল মারকাজুল ইসলামী হসপিটালের চার স্বেচ্ছাসেবী স্ট্রেচারে করে সাদা কাফনে মোড়ানো হোসনে আরা খানম (৬৫) নামে এক জনের লাশ গাড়ি থেকে নামান। দূরে দাঁড়িয়ে আছেন মৃতের স্বজনেরা। এরপর পিপিই পরা চার জন মিলে লাশ কবরে নামান। বাঁশের পাটাতন সাজিয়ে মাটি দেওয়া হয়। পরে যারা দাফনে অংশ নিয়েছেন তারা কবরস্থানের বাম পাশের একটি খালিস্থানে গিয়ে পিপিই খুলে ফেলেন। শরীর জীবাণুনাশক দিয়ে স্প্রে করে নেন। এসময় পিপিইগুলো আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হয়।

মৃতের নাতনির স্বামী সনি বলেন, তার দাদি শাশুড়ি করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিত্সাধীন অবস্থায় ল্যাবএইড হাসপাতালে মারা যান। তাদের বাড়ি আদাবরের শেখেরটেকে। তিনি ২২ মার্চ অন্য একটি অপারেশনে হাসপাতালে ভর্তি হন। অপারেশনের পর আইসিইউতে তার শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। শুক্রবার সকালে তিনি মারা যান।

একই সারির পশ্চিম দিকের প্রথম কবরে দাফন করা হয় করোনায় মারা যাওয়া স্থাপত্যবিদ মাসুদ করিমকে। করোনায় আক্রান্ত হয়ে তিনি গ্রিন লাইফ হসপিটালে চিকিত্সাধীন অবস্থায় মারা যান। লাশ দাফনে অংশ নিতে আসা তার আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে চাপা কান্না। মৃতের ভাতিজা আসিফ মাহমুদ জানান, করোনায় তার চাচা-চাচি আক্রান্ত হওয়ার পর চাচির নেগেটিভ এসেছে। কিন্তু চাচাকে আমরা আর বাঁচাতে পারলাম না।

শুকুর আলী নামের এক গোরখোদক জানান, মাঝে লাশ দাফন একেবারেই কমে গিয়েছিল। এখন তো রাত দিন কবর খুঁড়েছি। গত ৪/৫ দিন ধরে লাশের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায়, আমরা আগে থেকেই কবর তৈরি করে রাখছি।

আরেক গোরখোদক আসলাম জানান, কবরস্থানে প্রায় ২৫/৩০ জন গোরখোদক রয়েছেন। এরা কেউই সিটি করপোরেশন থেকে পারিশ্রমিক পায় না। কবর দেওয়ার পর মৃতের আত্মীয়-স্বজনরা বকশিশ দেন। কবর দিতে বাঁশ ও বেড়া কিনে এনে তারাই সরবরাহ করেন। এসবের দাম আত্মীয়-স্বজনরা দিয়ে থাকেন। সব মিলিয়ে একটা কবর দিতে ১ হাজার টাকা থেকে দেড় হাজার টাকা খরচ হয়। তবে আত্মীয়রা খুশি হয়ে এর বেশিও টাকা দেন।

 

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর
২০২০© এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ*
ডিজাইন - রায়তা-হোস্ট সহযোগিতায় : SmartiTHost
smartit-ddnnewsbd