নিজস্ব প্রতিবেদকঃ কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্প থেকে নোয়াখালীর ভাসানচরের উদ্দেশে রওনা হয়েছে রোহিঙ্গাদের প্রথম বহর। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে উখিয়ার অস্থায়ী ট্রানজিট ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদের নিয়ে ১১টি বাস ভাসানচরের দিকে রওনা দেয়। কক্সবাজার থেকে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরকালীন নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে র্যাব-৭ ও র্যাব ১৫। রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা র্যাব-১৫ এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর মেহেদী হাসান বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের মধ্যে ভাসানচরে যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ দেখা গেছে। অনেকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে তাদের নিয়ে যাওয়ার কথা বলছেন। প্রথম দফায় ৫০০ জনকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বাকি রোহিঙ্গারাও যাবে।’ রোহিঙ্গা স্থানান্তর কার্যক্রম ঘিরে স্থল ও আকাশপথে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পুরো প্রক্রিয়া র্যাবের ২৮টি টহল দল কার্যক্রম চালাচ্ছে। আকাশপথে হেলিকপ্টার রয়েছে।
প্রশিক্ষিত জনবল দিয়ে হেলিকপ্টারের মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। সাদা পোশাকে প্রায় ১৫০ জনের মত র্যাব সদস্য রোহিঙ্গা শিবিরের অভ্যন্তরে কাজ করছে। ৩৯ মাস আগে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতন ও হত্যার মুখে রাখাইন থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা। এর মধ্যে দুইবার রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের দিনক্ষণ চূড়ান্ত হলেও তাদের রাখাইনে পাঠানোর চেষ্টা ব্যর্থ হয়। এমন পরিস্থিতির মধ্যে কক্সবাজারের শিবিরের ওপর চাপ কমানোর অংশ হিসেবে প্রথম দফায় প্রায় ১০০ রোহিঙ্গা পরিবারকে ১১টি বাসে করে ভাসানচরের উদ্দেশে পাঠানো হলো। কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ার শিবিরে এখন বসবাস করছে মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত প্রায় সাড়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গা। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অনেকের বিরোধিতার পরও রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের জন্য ২ হাজার ৩১২ কোটি টাকা ব্যয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সরকার। জোয়ার ও জলোচ্ছ্বাস থেকে সেখানকার ৪০ বর্গকিলোমিটার এলাকা রক্ষা করতে ১৩ কিলোমিটার বাঁধ দেয়া হয়েছে।
সেখানে এক লাখ রোহিঙ্গার বসবাসের উপযোগী ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, স্থানান্তর প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে উখিয়া ক্যাম্প থেকে ১০০ রোহিঙ্গা পরিবারকে প্রথমে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় নেয়া হবে। সেখান থেকে শুক্রবার তাদের ভাসানচরে নেয়ার কথা রয়েছে। এদিকে, প্রথম দফায় প্রায় ৬০০ রোহিঙ্গা পরিবারকে ভাসানচরে নেয়া হবে বলে জানা গেছে। ভাসানচরে যেতে ইচ্ছুক রোহিঙ্গাদের কক্সবাজার থেকে করোনা পরীক্ষা করিয়ে বাসে করে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় আনা হবে। সেখান থেকে জাহাজে করেই ভাসানচরে যাবেন বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা। এদিকে আজ বৃহস্পতিবার কক্সবাজারের শিবির থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ভাসানচরে স্থানান্তর অবিলম্বে বন্ধ করতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দুটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন। সংগঠন দুটি হলো- নিউইয়র্ক ভিত্তিক হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) ও লন্ডনভিত্তিক অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। দুটি সংগঠনই তাদের ওয়েবসাইটে এ-সংক্রান্ত বিবৃতি প্রকাশ করেছে।