কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিস সনদধারীদের জন্য সরকারি চাকরির নতুন দুয়ার খুলে দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। এত দিন শুধু আলিম সনদ থাকা ব্যক্তিরাই নিকাহ রেজিস্ট্রার বা কাজি পদে আবেদন করতে পারতেন, তবে রোববার (৭ ডিসেম্বর) এই যোগ্যতার পরিধি বাড়ানো হয়েছে। সরকার সংশোধিত আইন কার্যকর করে কওমি ডিগ্রিধারীদের জন্যও এই পেশায় যুক্ত হওয়ার সুযোগ তৈরি করেছে।
রোববার (৭ ডিসেম্বর) অন্তর্বর্তী সরকারের আইন ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, আইন সংশোধনের কারণে এখন থেকে আল হাইআতুল উলয়া লিল জামিআতিল কওমিয়া স্বীকৃত বোর্ডের দাওরায়ে হাদিস সনদধারীরাও কাজি হওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন। এর মধ্য দিয়ে দেশের বৃহৎ কওমি শিক্ষাব্যবস্থার শিক্ষার্থীরা সরাসরি সরকারিভাবে স্বীকৃত একটি পেশায় যুক্ত হওয়ার নতুন সুযোগ পেল।
আইন সংশোধনের প্রেক্ষাপট হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, এর আগে গত ৫ আগস্ট ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন চিঠি দিয়ে দাওরায়ে হাদিস সনদধারীদের নিকাহ রেজিস্ট্রার নিয়োগে অগ্রাধিকার দেওয়ার অনুরোধ জানান। সেই আলোচনার ধারাবাহিকতায় আইন মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট বিধি পর্যালোচনা করে যোগ্যতার পরিধি বাড়িয়েছে।
ড. আসিফ নজরুল তাঁর পোস্টে লিখেছেন, “আগে এই সুযোগ আলিম সনদধারী ব্যক্তিদের জন্য ছিল। এখন থেকে কওমি মাদ্রাসার স্বীকৃত বোর্ড হতে দাওরায়ে হাদিস সনদধারীরাও আবেদন করতে পারবেন।” আইন সংশোধনের ফলে কওমির উচ্চতর ডিগ্রি রাষ্ট্রীয়ভাবে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্যতা পেল বলে শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে যুক্তদের ভাষ্য।
বাংলাদেশে বর্তমানে কওমি মাদ্রাসার সংখ্যা ২০ হাজারের বেশি, যেখানে ৩০ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করেন। আল হাইআতুল উলয়ার অধীনে ছয়টি স্বীকৃত শিক্ষা বোর্ড রয়েছে, যেখান থেকে দাওরায়ে হাদিস ডিগ্রি প্রদান করা হয়। নতুন বিধান কার্যকর হওয়ায় এ বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী সরকারি স্বীকৃত চাকরির বাজারে নতুনভাবে প্রবেশের সুযোগ পাবেন বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
এ সিদ্ধান্তকে অনেকেই কওমি শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশার বাস্তবায়ন হিসেবে দেখছেন। ধর্মীয় শিক্ষা, পারিবারিক বিধিবিধান এবং নিকাহ সংক্রান্ত জ্ঞান থাকা ব্যক্তিদের কাজি পদের যোগ্যতা স্বীকৃতি দেওয়াকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ হিসেবেও বিবেচনা করা হচ্ছে।