1. admin@ddnnewsbd.com : admin : ddn newsbd
  2. mamahbubulalom@gmail.com : mahbubul alom : mahbubul alom
বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫, ০৪:৫৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান: ২৬ মামলায় চার্জশিট সায়েন্সল্যাবে ঢাকা কলেজ-সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ, আহত ৫ গাজা দখল; ইসরায়েলি হামলা ও অবরোধজনিত সংকটে নিহত ৮১ সরকারি সফরে চীনের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ সেনাপ্রধানের শেখ হাসিনাসহ ৩২ জনের বিরুদ্ধে সেই সুখরঞ্জন বালির অভিযোগ দাখিল খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাস হাসপাতালে ভর্তি আটঘরিয়ায় স্ত্রীর চিৎকারে চোরকে ধাওয়া, ছুরিকাঘাতে খুন স্বামী ভাঙ্গুড়ায় স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে শোভাযাত্রা ও আলোচনাসভা ভোটকেন্দ্রের খসড়া তালিকা প্রকাশ ১০ সেপ্টেম্বর আখেরি চাহার সোম্বা উপলক্ষ্যে বায়তুল মুকাররমে দোয়া মাহফিল

শেখ হাসিনাসহ ৩২ জনের বিরুদ্ধে সেই সুখরঞ্জন বালির অভিযোগ দাখিল

ডিডিএন ডেস্ক:
  • আপডেটের সময় : বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট, ২০২৫
  • ২ সময় দর্শন

এক যুগ আগে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া সেই সুখরঞ্জন বালি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩২ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্যাইব্যুনালের প্রসিকিউশন বরাবর অভিযোগ দাখিল করেছেন।

২১ আগস্ট সকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্যাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর বরাবর অভিযোগ দাখিল করে তিনি বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান।

শেখ হাসিনার ছাড়াও যাদের বিরুদ্ধে সুখরঞ্জন বালি অভিযোগ করেছেন, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন- সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম, সাবেক আইন মন্ত্রী শফিক আহমেদ, সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, ট্রাইব্যুনালের সাবেক বিচারক বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির, ট্রাইব্যুনালের সাবেক তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন, পিরোজপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এ কে এম আউয়াল, সাবেক চিফ প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী, সাবেক প্রসিকিউটর রানা দাস গুপ্ত ও তৎকালীন তদন্ত সংস্থার প্রধান মো. সানাউল হক।

সুখরঞ্জন বালি জামায়াতে ইসলামীর নেতা প্রয়াত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর যুদ্ধাপরাধের মামলায় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী ছিলেন।

তিনি ২০১২ সালের ৫ নভেম্বর ঢাকায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল চত্বর থেকে নিখোঁজ হন।

সুখরঞ্জন বালী তার অভিযোগে বলেন, আমার ভাই বিশাবালীকে (বিশেশ্বর বালী) ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পাকিস্তানি সেনারা হত্যা করে। ওই ঘটনার প্রেক্ষিতে ২০১০ সালের জুলাই-আগস্ট মাসের দিকে তৎকালীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন আমাকে পিরোজপুরের পাড়েরহাটের রাজলক্ষ্মী স্কুলে ডেকে ৭১-এ আমার ভাই বিশাবালীর হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে জানতে চায়। আমি তাকে প্রকৃত ঘটনা খুলে বলি। কিন্তু হেলাল উদ্দিন আমাকে আমার ভাইয়ের হত্যাকারী হিসাবে প্রকৃত হত্যাকারীদের নামের সঙ্গে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর নামও বলতে বলে এবং তার বিরুদ্ধে ট্রাইবুনালে গিয়ে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে বলে।

আমি হেলাল সাহেবকে তখনই স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিই যে, সাঈদী হুজুর আমার ভাই বিশাবালী হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত ছিলেন না। সুতরাং তার বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়।

কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল সাহেব আমাকে জোরপূর্বক রাজি করাতে সেখানেই আমাকে শারীরিক নির্যাতন করতে থাকে।

এরপর হেলাল উদ্দিন আমাকে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে রাজি করাতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ এমপি এ. কে. এম. আব্দুল আউয়াল ও পৌর মেয়র হাবিবুর রহমান মালেককে ডেকে আনে।

তারা আখতারুজ্জামান ফুলু ও কানাই লালা বিশ্বাসের নেতৃত্বে সাইদুল্লাহ লিটন, রেজাউল করিম শিকদার মন্টু, মিজানুর রহমান তালুকদার, সুমন সিকদার, দিলীপ মাঝি, রাজ্জাক খান বাদশা, মতিউর রহমান, মৃধা, শাহজাহান খান তালুকদার, মাসুদ আহম্মেদ রানা, শেখ ফিরোজ আহম্মেদ, গোলাম মাওলা নকিব, আমিনুল ইসলাম মিরন, ইরতিজা হাসান রাজু, খায়রুল ইসলাম মিঠু, মজনু তালুকদার, মৃধা মো. মনিরুজ্জামান, কে. এম. মোস্তাফিজুর রহমান বিপ্লব ও রাসেল পারভেজ রাজাসহ ছাত্রলীগ ও যুবলীগের আরো কিছু লোককে রাজলক্ষ্মী স্কুলে হাজির করায়।

তারা সেখানে উপস্থিত হয়েই আমাকে নানা রকম চাপ ও হুমকি দিতে থাকেন। আমি সাক্ষ্য দিতে রাজি না হলে, আউয়াল ও মালেক সাহেব আমাকে হত্যার হুমকি দেয়।

এরপর তাদের নির্দেশে রেজাউল করিম শিকদার মন্টু, সুমন সিকদার, দিলীপ মাঝি, রাজ্জাক খান বাদশা, শাহজাহান খান তালুকদার, মৃধা মো. মনিরুজ্জামান, মাসুদ আহম্মেদ রানা, মজনু তালুকদার ও মিজানুর রহমান তালুকদার মিলে আমাকে নির্দয়ভাবে পিটাতে থাকে। তাদের নির্যাতন শেষ হলে সাইদুল্লাহ লিটন, শেখ ফিরোজ আহম্মেদ, গোলাম মাওলা নকিব, আমিনুল ইসলাম মিরন, মতিউর রহমান, ইরতিজা হাসান রাজু, খায়রুল ইসলাম মিঠু ও মোস্তাফিজুর রহমান বিপ্লবরা আমাকে চর, থাপ্পড় ও ঘুসি মারতে থাকে ও লাঠি দিয়ে আমার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করতে থাকে।

তারপরও আমি হুজুরের বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে অস্বীকৃতি জানালে তারা আগামীকাল তাদের কথা মত সাক্ষ্য দিতে রাজি না হলে, আগামীকালই আমার জীবনের শেষ দিন বলে শাসিয়ে চলে যায়।

আমি তাদের হাত থেকে ছাড়া পেয়ে আত্মগোপনে চলে যাই। দীর্ঘদিন আমি বিভিন্ন বাড়িতে লুকিয়ে থাকি। হেলাল উদ্দিন, এ. কে. এম. আব্দুল আউয়াল, হাবিবুর রহমান মালেক, আখতারুজ্জামান ফুলু, কানাই লালা বিশ্বাস, মিজানুর রহমান তালুকদারের নেতৃত্বে আমাকে করা নির্যাতনের অনেক দিন পর একদিন সাঈদী হুজুরের ছেলে জনাব মাসুদ সাঈদী আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং আমার ভাই বিশাবালী হত্যার প্রকৃত ঘটনা জানতে চান। আমি তাকে প্রকৃত ঘটনা খুলে বলি। তখন মাসুদ সাঈদী জানতে চান, এই সত্য ঘটনা আমি ট্রাইবুনালে এসে বলতে রাজি আছি কি-না? জবাবে আমি সম্মতি প্রকাশ করলে, জনাব মাসুদ সাঈদী আমার ভাইয়ের হত্যার প্রকৃত ঘটনা ট্রাইব্যুনালে এসে বলার জন্য অনুরোধ জানান।

আমি তার অনুরোধ গ্রহণ করি এবং সত্য ঘটনা তুলে ধরার জন্য সাঈদী হুজুরের পক্ষে সাক্ষ্য দিতে রাজি হই। সেই মর্মে আমি, সুখরঞ্জন বালি, সাঈদী হুজুরের পক্ষে সাক্ষ্য দিতে ৩ নভেম্বর ২০১২ সালে বিকালের দিকে ঢাকায় আসি এবং জনাব মাসুদ সাঈদীর সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি আমাকে ৪ তারিখ ট্রাইব্যুনালে অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম স্যারের কাছে নিয়ে আসেন। উনাকে আমি আমি সব খুলে বলি।

এরপর ৫ নভেম্বর ২০১২ এর সকালে অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলামের অফিসে মাসুদ সাঈদী আমাকে নিয়ে যান। তখন অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম সাহেব আমাকে তার গাড়িতে করে ট্রাইব্যুনালের দিকে রওয়ানা দেন। তার গাড়িতে আরও ২ জন আইনজীবী- জনাব মনজুর আহমেদ আনসারী ও জনাব হাসানুল বান্না সোহাগ ছিলেন, যাদের নাম আমি পরে জানতে পারি।

আমার সামনের গাড়িতে জনাব মাসুদ সাঈদী ছিলেন এবং তার সঙ্গেও একজন আইনজীবী ছিলেন। তার নাম আবু বকর সিদ্দিক, যা আমি পরে জানতে পারি। ট্রাইবুনালের গেটের বাইরে বিপুল সংখ্যক পুলিশ দেখতে পাই। ট্রাইব্যুনালের মূল গেটের কাছে আমাদের গাড়ি এসে পৌঁছালে পুলিশ আমাদের গাড়ি আটকে দেয়।

আটকে দেওয়ার পর সামনের গাড়ি থেকে নেমে মাসুদ সাঈদী পুলিশের সঙ্গে কথা বলতে থাকেন। এর মধ্যে কিছু বুঝে উঠার আগেই সাদা পোশাকে থাকা অনেক লোক ও পুলিশ মিলে এড. মিজান স্যারের গাড়ি ঘিরে ফেলে।

সেখানে আমাকে দেখে তারা বলে ‘শুয়োরের বাচ্চা, তোকেই তো আমরা খুঁজছি। নাম নিচে নাম।’ এই কথা বলেই একজন পুলিশ আমার কানের নিচে প্রচণ্ড জোরে থাপ্পড় মারে। এরপর আমার শার্টের কলার ধরে আমাকে মারতে মারতে জোরপূর্বক গাড়ি থেকে নামিয়ে একটা সাদা রঙের পুলিশ পিকআপে তুলে নেয়।

আমার সাথে থাকা আইনজীবী ও মাসুদ ভাই তাদেরকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেও পুলিশের আগ্রাসী ভূমিকার কারণে তারা আর আমার কাছেই আসতে পারেননি।

গাড়িতে উঠিয়েই তারা আমার চোখ ও হাত বেঁধে ফেলে। এ অবস্থাতেই তারা আমাকে অজানা একটি স্থানে নিয়ে যায়। এটি ছিল একটি জানালাবিহীন অন্ধকার ঘর, যেখানে প্রায় দুই মাস আমাকে বন্দি রাখা হয় এবং খাদ্য ও আলো থেকে বঞ্চিত করে প্রচণ্ড শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়।

পরবর্তীতে আমাকে আরেকটি কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে ক্যামেরা ও আলো ছিল। সেখানে সাঈদী হুজুরের- বিরুদ্ধে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায় করতে চাওয়া হয়।

আমি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিই যে, আমার ভাইয়ের হত্যার সঙ্গে সাঈদী হুজুরের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই এবং আমি প্রকৃত হত্যাকারীদের চিনি এবং তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে প্রস্তুত আছি।

কিন্তু আমি তাদের কথা মত সাঈদী হুজুরের বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষী দিতে রাজি না হওয়ায়, তারা আমাকে দিনের পর দিন বৈদ্যুতিক শক দিয়ে শারীরিক নির্যাতন করতে থাকে। আমার শরীরের এমন কোন জায়গা নেই যেখানে তারা বৈদ্যুতিক শক দেয়নি (বিশেষ করে আমার গোপনাঙ্গে তারা বেশি শক দেয়)।

এরপর তারা আমাকে কোটি টাকা ও একটি বাড়ি দেওয়ার প্রলোভনের মাধ্যমে আমার মনোবল ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু আমি তাতেও রাজি না হওয়ায়, আমাকে প্রায় দুই মাস ঐ গোপন জায়গায় আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়।

তাদের চরম নির্যাতনের মুখে আমি অসুস্থ ও অজ্ঞান হয়ে পড়লে, আমাকে বিভিন্ন সময়ে হাসপাতালে নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা দেয়া হত।

আমার জ্ঞান ফিরে এলে, আবার তারা আমাকে ঐ গোপন স্থানে নিয়ে যেত। নিয়ে গিয়ে আবারো পূর্বের ন্যায় তারা আমার ওপর শারীরিক নির্যাতন চালাতো।

এরপর একদিন আমাকে চোখ বেঁধে একটি গাড়িতে তোলা হয় এবং কয়েক ঘণ্টার দীর্ঘ যাত্রার পর যখন গাড়ি থামে। তখন আমি বাথরুমে যাওয়ার কথা বললে, তারা আমার চোখ খুলে দেয়। তখন দেখতে পাই আমাকে সীমান্ত এলাকায় আনা হয়েছে।

সেখান থেকে বিজিবির সহায়তায় আমাকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগণার স্বরূপনগর থানার অন্তর্গত বৈকারী বাজার সীমান্তে বিএসএফ-এর হাতে তুলে দেওয়া হয়।

বিএসএফ আমাকে কোনো প্রশ্ন ছাড়াই নির্মমভাবে মারধর করে, আমাকে হাত বেঁধে নির্যাতন করে। পরে তারা আমাকে বশিরহাট নিয়ে যায়। বশিরহাট সাবজেলে ২২ দিন রাখার পর সেখান থেকে দমদম কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয় এবং সেখানে আমাকে মোট ৫ বছর আটক রাখে।

পরে জানতে পারি, দমদম কেন্দ্রীয় কারাগারে আমার থাকার বিষয়টি জনাব মাসুদ সাঈদী জানতে পারেন এবং আমার ছেলেকে ভারত পাঠিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত হন। এরপর তারই উদ্যোগে এবং মানবাধিকার সংস্থা ও ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের সহায়তায় আমি কারাগার থেকে মুক্ত হতে সক্ষম হই।

কারাগারে থাকার সময় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা আমার সঙ্গে কারাগারে সাক্ষাৎ করে এবং আমার নির্যাতনের বিবরণ নথিভুক্ত করে।

দেশে ফিরে এলেও আমি পিরোজপুরের নিজ গ্রামে নিরাপত্তার কারণে যেতে পারিনি, বরং আত্মগোপনে নিজ জেলার বাইরে অবস্থান করি।

আমি আমার ছেলে-মেয়ের মাধ্যমে কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ার পর জানতে পারি যে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের গেট থেকে আমাকে অপহরণের পর আমার আইনজীবীগণ ট্রাইব্যুনালের বিচারকগণের নিকট তাৎক্ষণিকভাবে আমার অপহরণের বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। কিন্তু ট্রাইব্যুনালের তৎকালীন বিচারকগণ, তৎকালীন চিফ প্রসিকিউটর, শাহবাগ থানার ওসি, রমনা জোনের ডিসি ও অন্যান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনায় মিলিত হয়ে ষড়যন্ত্র মূলকভাবে সিদ্ধান্ত দেন যে, আমাকে ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণ থেকে অপহরণ করা হয়নি। অথচ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে অসংখ্য সিসি ক্যামেরা ছিল। বিশেষ করে আমাকে যেখান থেকে অপহরণ করা হয়েছিল সেই গেটের সামনেই দুটি সিসি ক্যামেরা ছিল। সেই ক্যামেরা দুটিসহ স্থাপিত সিসি টিভি ক্যামেরায় পুরো বিষয়টি রেকর্ড হওয়ার কথা।

আমার পক্ষের আইনজীবীদের দাবি স্বত্বেও ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান নিজামুল হক নাসিম সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখতে বা দেখাতে অস্বীকৃতি জানান। সেটি না করে জনাব নাসিম আমার বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করার দায়ে আমার আইনজীবীদের বিরুদ্ধে উল্টা আদালত অবমাননার অভিযোগ আনায়ন করেন।

আমি দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, আমি নিজ চোখে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার ভাইকে হত্যার ঘটনা দেখেছি। সেখানে সাঈদী হুজুর ছিলেন না। বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করার রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত মামলায় মিথ্যা সাক্ষ্য না দেয়ায় এবং সত্য সাক্ষী দিতে ট্রাইবুনালে আসার কারণে আমাকে গুম, অপহরণ, নির্যাতন ও প্রায় পাঁচ বছর ভারতে অবৈধভাবে কারাবন্দি করে রাখার হয়।

তার বিরুদ্ধে করা মামলা ছিল সম্পূর্ণ মিথ্যা, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং সাজানো। তাকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার, দীর্ঘদিন কারারুদ্ধ রাখা এবং শেষ পর্যন্ত পরিকল্পিতভাবে কারাগারে তাকে হত্যা করা হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে মানবতাবিরোধী অপরাধের শামিল।

সুখরঞ্জন বালি বলেন, আমাকে করা গুম, অপহরণ, শারীরিক মানসিক নির্যাতন ও আমাকে জোর করে ভারতে পাচারের ঘটনা-সবই ছিল পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ। আমাকে অপহরণ করে শারীরিক-মানসিক নির্যাতনের মাধ্যমে আমার মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘন করা হয়েছে আর এর সবই ছিল একটি বৃহৎ রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অংশ, যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও মানবতা বিরোধী অপরাধ হিসেবে বিবেচ্য।

আমি এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ন্যায়বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় আমাকে করা অপহরণ, গুম এবং ৫ বছর অবৈধভাবে কারাবন্দি রাখাসহ আমার সাথে ঘটে যাওয়া সকল অন্যায়ের আমি বিচার চাই।

সূত্র: বাসস

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর
২০২০© এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ*
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Smart iT Host