২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় আইভী রহমানসহ ২৪ জন নিহত এবং শতাধিক নেতাকর্মী আহত হওয়ার ঘটনায় করা মামলার বিচারপ্রক্রিয়া নতুন মোড় নিয়েছে। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ আসামিদের খালাসের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিলের শুনানি শেষ হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের বেঞ্চে শুনানি হয়। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ। তিনি আসামিদের খালাস বাতিল চেয়ে যুক্তি তুলে ধরেন। অন্যদিকে আসামিপক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান ও আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।
হাইকোর্টের বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান (বর্তমানে আপিল বিভাগের বিচারপতি) ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের বেঞ্চ গত বছরের ১ ডিসেম্বর আসামিদের খালাস দেন। এরপর ১৯ ডিসেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। সেই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন করলে চলতি বছরের ১ জুন অনুমতি দেওয়া হয়। পরবর্তীতে শুরু হয় আপিলের শুনানি।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে চালানো ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পান তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে প্রাণ হারান দলের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক আইভী রহমানসহ ২৪ জন। আহত হন তিন শতাধিক নেতাকর্মী।
ঘটনার পর হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে মামলা হয়। প্রথম অভিযোগপত্রে ২২ জনকে আসামি করা হয়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে অধিকতর তদন্তের পর নতুন করে ৩০ জনকে আসামি করা হয়। পরবর্তীতে এ মামলায় মোট আসামি দাঁড়ায় ৫২ জনে।
২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর বিশেষ ট্রাইব্যুনাল রায়ে বাবরসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং তারেক রহমানসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। এ ছাড়া আরও কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা ও গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক কর্মকর্তাকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়। তবে ২০২২ সালের ১ ডিসেম্বর হাইকোর্ট মামলার সব আসামিকে খালাস দেন, যা নিয়ে নতুন করে আপিল শুনানি চলছে।
রাষ্ট্রপক্ষের দাবি, মামলার সাক্ষ্য ও প্রমাণের যথাযথ মূল্যায়ন হয়নি। তাই হাইকোর্টের দেওয়া খালাসের রায় পুনর্বিবেচনা প্রয়োজন। অপরদিকে আসামিপক্ষ বলছে, মামলাটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং এর সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতা নেই।
এখন সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের ওপর নির্ভর করছে আলোচিত এ মামলার পরবর্তী ধাপ।
সূত্র: এফএনএস।