বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা ও কার্যক্রম নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল—বিএনপি। দলটির দাবি, দেশে একটি গ্রহণযোগ্য ও শক্তিশালী গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা গড়ে তুলতে হলে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া প্রয়োজন। সেই লক্ষ্যে অবিলম্বে একটি সুনির্দিষ্ট ও সময়াবদ্ধ রোডম্যাপ ঘোষণা না করলে সরকারের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রাখা তাদের পক্ষে সম্ভব হবে না।
রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। বৃহস্পতিবার (২২ মে) অনুষ্ঠিত এই সংবাদ সম্মেলনে তিনি লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
প্রেস ব্রিফিংয়ে ড. মোশাররফ বলেন, “দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছর ধরে চলা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশ ফ্যাসিবাদমুক্ত হয়। কিন্তু গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা ও জনপ্রত্যাশা পূরণ হয়নি—এ নিয়ে আজ জনমনে বড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব ছিল নিরপেক্ষতা বজায় রেখে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা। অথচ সরকারের সাম্প্রতিক নানা কর্মকাণ্ড ও বক্তব্য জনমনে বিভ্রান্তি ও সংশয় সৃষ্টি করেছে।”
ড. মোশাররফ সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “কয়েকজন বিতর্কিত উপদেষ্টা যাদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা আছে এবং যাদের বক্তব্যে সরকারের নিরপেক্ষ ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে, তাদের অব্যাহতি দেওয়া জরুরি। বিশেষ করে যারা নতুন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত, তাদের উপস্থিতি সরকারের নির্দলীয় চরিত্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।”
এ প্রসঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার সাম্প্রতিক বক্তব্যকে “নতুন বিতর্ক” বলে উল্লেখ করে তাকে পদত্যাগে বাধ্য করার দাবি জানান বিএনপি নেতা। তিনি বলেন, “একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নিরপেক্ষ সরকার অপরিহার্য। অথচ সরকারের মুখপাত্রের বক্তব্য অনুযায়ী, ‘এই সরকারের সবকিছু করার ম্যান্ডেট রয়েছে’—এই ধরনের দাবি সরকারকে জনআস্থা থেকে আরও দূরে সরিয়ে দিচ্ছে।”
চট্টগ্রাম বন্দর ও মানবিক করিডোর বিষয়ে সরকারের ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, “এই জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ও দীর্ঘমেয়াদি নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার একটি অন্তর্বর্তী সরকারের নেই। এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হলে জাতীয় ঐকমত্য ও নির্বাচিত সরকার অপরিহার্য।”
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ইশরাক হোসেনকে নিয়ে আদালতের রায় অনুযায়ী গেজেট প্রকাশ হলেও শপথ অনুষ্ঠান না হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করে ড. মোশাররফ বলেন, “জনগণ আইনের শাসনের জন্য রক্ত দিয়েছে, তাই রায় কার্যকরের বিষয়ে সরকারকে দায়িত্বশীল হতে হবে।”
সংবাদ সম্মেলনে ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তির বিচারের প্রক্রিয়া চলমান রাখার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, “সংস্কার ও নির্বাচনের প্রক্রিয়া একযোগে চলতে পারে। যারা মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত ছিল, তাদের বিচারও চলবে।”
এ সময় বিএনপির অন্যান্য স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সালাহউদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদের শেষ পর্যায়ে ড. মোশাররফ সরকারকে সতর্ক করে বলেন, “জনআকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী যথাসময়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিয়ে চাপের মুখে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সংস্কৃতি সরকারের মর্যাদা ও কার্যকারিতাকে ক্ষুণ্ন করছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে সরকারের প্রতি বিএনপির সহযোগিতা পুনর্বিবেচনা করতে হবে।”
সূত্র: এফ্এনএস