হাসিনাকে প্রত্যর্পণে ভারতকে যথাযথভাবে আইনগত আহ্বান জানানো হবে বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের বিশেষ পরামর্শক টবি ক্যাডম্যান। আজ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন বিশেষজ্ঞ টবি আরও বলেন, ‘ভারত আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হলে এবং প্রত্যর্পণের একটি আইনগতভাবে বৈধ এবং যথাযথ অনুরোধের সম্মান করে থাকলে আমরা অবশ্যই একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসাবে ভারতকে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের জন্য আহ্বান জানাব।’
তিনি বলেন, ‘স্পষ্টতই আমরা জানি যে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে একটি প্রত্যর্পণ চুক্তি বিদ্যমান। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে যা কিছুই বলা হয়েছে, সে সম্পর্কে আমরা জানি এবং সচেতন রয়েছি। এ বিষয়ে ভারত আগামীতে কি করতে যাচ্ছে, তার কোন প্রাক-বিচার এখনই আমরা করতে চাই না। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যথাযথভাবে অভিযোগ আনা এবং তাকে দেশে এনে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানোর জন্য ভারতকে জানানোর বিষয়গুলো নিশ্চিত করার গুরুদায়িত্ব এখন এই ট্রাইব্যুনালের এবং এর চিফ প্রসিকিউটরের।’
তবে কোন কারণে হাসিনাকে প্রত্যর্পণের অনুরোধ প্রত্যাখ্যাত হলে তার অনুপস্থিতিতেই বিচার করা যায় কিনা, কিংবা এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সহায়তা নেয়া যায় কি না সেটি নিয়ে তারা আলোচনা করছেন বলে তিনি জানান।
‘বিচারের বর্তমান প্রক্রিয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পূর্ণ সহায়তা ও সমর্থন প্রয়োজন। আমি যুক্তরাজ্য, মার্কিন দূতাবাস, ইইউর এবং জাতিসংঘের প্রতিনিধিদের সাথে ইতোমধ্যে আলোচনা করেছি। যেহেতু আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের কাজকে অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য প্রক্রিয়া হিসেবে বিবেচিত হয় এবং বাংলাদেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য এর প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি, সেহেতু এখানে অনেকের সমর্থন পাবার সুযোগই আমাদের রয়েছে বলে আমরা আশাবাদী,’ তিনি বলেন।
‘তবে এখানে দেখার বিষয় হলো, বেশ কয়েকটি রাষ্ট্র বিশেষ করে ইউরোপীয় কিছু রাষ্ট্র আছে যারা শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড বহাল রয়েছে এমন বিচার ব্যবস্থার ক্ষেত্রে প্রত্যর্পণকে বা প্রমাণ সরবরাহতে অস্বীকৃতি জানায়। এই বিচার প্রক্রিয়ার সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হলে তা ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাতিসংঘের পরম অপরিহার্য সমর্থন হারাবে কিনা সরকারকে এ বিষয়ে আলোচনায় বসতে হবে,’ তিনি বলেন।
‘মনে রাখতে হবে, সেরকম পরিস্থিতির উদ্ভব হলে এই মামলার জন্য শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড স্থগিত করা ন্যায়সংগত হবে কিনা, সেটি আদালতের বিবেচ্য বিষয়। যেহেতু অপরাধের প্রকৃতি ও ব্যাপকতা বিচারের শেষেই বোঝা সম্ভব, তা নির্ধারণ করতে প্রসিকিউটর, বিচারকদের সমস্ত প্রয়োজনীয় সহায়তা যেন প্রদান করা হয়, তা নিশ্চিত করার জন্য আমরা জাতিসংঘ এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করব। এই আদালতের সামনে বিচারের মুখোমুখি হওয়া সকলেই সংবিধান, অভ্যন্তরীণ আইন এবং যেসকল আন্তর্জাতিক চুক্তিতে বাংলাদেশ একটি পক্ষ সেসব আইন অনুযায়ী যেন সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ বিচার পায় সেদিকে লক্ষ্য রাখা হবে,’ তিনি বলেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনের সংশোধনী বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, সঠিক পদক্ষেপ ইতোমধ্যেই নেয়া হয়েছে। যে সংশোধনীগুলো করা হয়েছে, সেগুলো সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করার জন্য অপরিহার্য এবং এখনও কিছু বিষয় রয়েছে যা সংশোধন করা দরকার। চিফ প্রসিকিউটর বাংলাদেশের আইন উপদেষ্টার কাছে আমাদের বৈঠকে আলোচিত বিষয়বস্তগুলো উপস্থাপন করবেন, যা কিনা পূর্ণতম ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য অত্যন্ত জরুরি।’
এসময়, বাংলাদেশের মানুষকে, বিশেষত গণমাধ্যমকে ধৈর্যধারণ করে সহযোগিতা করতে অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি আজ সকালে তদন্তকারী এবং প্রসিকিউটরদের সাথে আলোচনা করার সুযোগ পেয়েছি এবং তাঁদের কাজ দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি। সব কাজেই তাঁরা উচ্চমানের পেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়েছেন। যেহেতু এগুলো খুবই জটিল কিন্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মামলা, সেহেতু এগুলোর সাথে জড়িত কাজগুলো সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বাইরের কোনো হস্তক্ষেপ ছাড়াই কাজ করতে দিতে হবে।’
গত ২০ নভেম্বর ব্রিটিশ আইনজীবী, লন্ডনভিত্তিক ল’ ফার্ম ‘গুয়ের্নিকা ৩৭’ গ্রুপের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও ‘গুয়ের্নিকা-৩৭ চের্ম্বাস’-এর যুগ্ম প্রধান টবি ক্যাডম্যানকে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের বিশেষ পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হয় বলে তিনি নিজেই তাঁর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘এক্স’ হ্যান্ডেলে জানান।
এর পরপরই, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। এতে, টবি’র নিয়োগ ট্রাইব্যুনালের এক উল্লেখযোগ্য মাইলফলক বলে মন্তব্য করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
বাসস